কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১০ |
শূন্যপুর ১৭
মিঞাগুলা
গাড়ি এগেতে দেয় না। কাতার কাতার লোক। দাঁত ক্যালাচ্ছে। লুঙ্গির খুঁট খুলে বাঁধছে আবার।
কান চুলকাচ্ছে। বদরুদ্দিনের গর্ব হয়। ছেলেরা কাজ করেছে। জমায়েত ভাল। কিন্তু ডিসি-র
অফিস পৌঁছবে কীভাবে বদর? বরপেটার রাস্তা এমন গিজগিজ করছে যে খোদ নেতা আটকে। মনে মনে
হাসে বদর। মানে হয় কোনো? চুক চুক শব্দ তুলে গাড়ি থেকে নামে। বুথ খুঁজে ফোন লাগাতে হবে
ইনসাফকে। ওর বাড়ি কাছে। বাইক নিয়ে চলে আসতে পারবে। হেঁকে হেঁকে যেতে হবে। মিঞারা তখনই
রাস্তা দেবে, যখন জানবে তাদেরই চিঠি জমা করতে যাচ্ছে তারা।
ছোটবেলা
থেকে ইনসাফ শুনছে, বাদ পড়তে পারে যে কোনোদিন৷ শুনতে শুনতে দুহাজার দশ। একটা হেস্তনেস্ত
দরকার। গাঁয়ে গাঁয়ে ফর্ম ফিলাপ চলছে ঢিমে তালে। কিন্তু ফর্ম ফিলাপ ক্যামনে হবে? বাবুরা
বলেছিল, পঞ্চায়েত অফিসে নাকি ইলেক্টরাল রোল পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে একান্ন সালের এনআরসির
কপি। সেসব থেকে নিজের নাম খুঁজতে হবে। জুড়তে হবে ফর্মের সঙ্গে। পঞ্চায়েতে গেলে তা মিলছে
কই? ফর্ম ফিলাপ বালাই। বদরের দল তাই লোক জমিয়েছে। মিঞারা খেপেছে। হকের জমি। কাগজ জমা
দিতে 'না' নাই। কিন্তু কেউ হয়ত চায় না, কাগজ
জমা হোক।
মিঞাদের
জোশ খুব। আজ বাদে কাল কী হবে ঠিক নাই। তবু যেন ইদের মেলা। গল্প চলছে দেদার। বিবিদের নিন্দা। বাচ্চার বদমায়েশি।
বাজারদর। লাঠি হাতে এক খোকা রাস্তা করে দিচ্ছে বাইককে। ইনজামাম। নেতাগিরি দেখে ইনসাফ
আর বদর হাসে। একে দলে নিলে কেমন হয়? এ ছেলের হবে।
হঠাৎ কানের পাশ দিয়ে একটা ঢিল উড়ে গেল। কে? মিঞারা জানে, চেনে ইনসাফকে। বদরকেও চেনে অনেকেই। ঢিল ছুঁড়বে কেন বা? গুলিয়ে যাচ্ছে সব। তুই ছুড়লি ঢিল ভাই? তুই কি? তুই? হঠাৎ কেউ চেঁচিয়ে ওঠে, পালে খোচড় ঢুকেছে। পুলিসকে ঢিল ছুড়েছে। পুলিস নামল বলে। ছেড়ে দেবে না কাউকে। পালাও। মিঞারা হুটোপুটি করে। এদিক ওদিক পালায়। ইনসাফ বদরের দিকে চায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মাথায় লাঠি পড়ে। বদরভাই তাকে জড়িয়ে ধরে। হাত পা নেড়ে কিছু বোঝাচ্ছে পুলিসকে। পকেট হাতড়ে চিঠিখানা দেখায়। ইনসাফের কপাল বেয়ে রক্ত গড়ায়। বদরভাইয়ের চিঠি নষ্ট না হয় রক্তের ছোপে। বদরভাই চিঠিখানি তুলে ধরে লাঠির সামনে। সামান্য আবেদন বৈ নয়! ডিসি সাহেবের সঙ্গে কথা হতে পারে। কথা বলা অধিকার…
লাঠি
নেমে আসে ফের। বদরভাইয়ের কবজির উপর। বদর চিঠি খামচে লুটিয়ে পড়ে।
হাসপাতালে
যখন ঘুম ভাঙল ইনসাফের, বদর সামনে। বাঁ হাতের মুঠোয় রোল করা কাগজ। ডানে ব্যান্ডেজ বাঁধা।
আসসালামালিকুম শেষে, তারা ফ্যালফেলিয়ে চায়।
তারপর
বদর বলে, চারজন স্পট ডেড। ইনজামাম একজন। লাঠিওয়ালা খোকা।
মাথা
তুলতে গিয়ে ফের যন্ত্রণার নেতিয়ে পড়ে ইনসাফ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন