শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

ফেরদৌস নাহার

 

কবিতার কালিমাটি ১২০


আগুন চাবুক

 

কিছুদিন ঘাড়ে চড়ে, যবের রুটি খেয়ে

কাটিয়ে দেবো ভরভরন্তি ক্রান্তিঋতু

পাহাড়ের বুক থেকে সাগরের সীমানায়

কারুকাজের হেলদোল, বার্ষিক মেলায়

চলছি ব্যক্তিগত মানচিত্র এঁকে

পুরনো মানচিত্রের আঁকটানা চিনিও না তাকে

পৃথিবীর যাবতীয় পর্যটক পরিহার করেছে যাকে

 

তখন নিভু সন্ধ্যার আতস আলোয়

কোথাকার এক মুখ বারবার ঝিলিক দিচ্ছিল

আলোটা নিভে গেলে সে হারিয়ে যায়, জ্বলে উঠলে ফের

তাকে অন্ধ বালক হয়ে বসে থাকতে দেখি, ঘোর ঝড়

বৃষ্টির পিঠে বৃষ্টি লিখে যাচ্ছে কয়েক কোটি নাম

হয়তো এমন সঘন বর্ষাই চেয়েছিলাম, দেখো

মাঝখানে একটি আগুন চাবুক, শপাং!

 

জলপাই পাতার মুকুট

 

ঠিকানা খুঁজতে গিয়েছিলাম ভূমধ্যসাগর পাড়ে

তোমার কি মনে আছে, পথে পথে গ্রিক কফি

কোলাহলহীন আবর্তে রঙিন মেঘলা চিঠি, কিংবা

দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে জুড়ে দেয়া দূরপাল্লার ছবি, আজ

মনে কর, মনে কর ভুল করে বাড়াতেই হাত

পৌরাণিক আলো এসে গিলে ফেলে চোখের মণি

 

এসবই তো সেদিনের কথা! জিউসের জন্মক্ষণে

নেমে আসা শরতের ফিনফিনে কুয়াশা। ভাসিয়েছে

আয়ুষ্মান তরী। এ-ঘাটের কুলে ঠেকে ও-ঘাটের স্মৃতি

হার্পের নতুন সুরে অলিম্পাস জেগে ওঠে, সম্মোহন

আনন্দে জলপাই পাতার মুকুটে সাজিয়েছ প্রতিকৃতি

তার নামে জাদুকর ঋতু বয়ে যায় দিনান্তের দিকে

 

হে লক্ষ্যভেদী বর্ণিল তরঙ্গ, শনশন হেমন্ত বাতাসে

ঝরাপাতার গুচ্ছ উড়ালে হারানো নাম ফিরে আসে

 

সংসার

 

দেবদূত অপেক্ষা, অন্তর বাজে রোদের সঙ্গে দর কষাকষি করে

বিজলী বোন তোর হাতের রান্না করা সালুন পাঠিয়ে  দিস

আমার রাঁধতে ভালো লাগে না। ঝিমধরা লাটিমের শব্দ বোঁ-

সারা রাত ভোঁ-কাট্টা কথাবার্তার স্রোত

ওড়ে চারকোণায় খাটানো মশারীর ফ্রক

প্রথম দিনের সংসার ভেসে যায়

প্রথম দিনের সংসার দম খায়

 

একটু দেরি হয়ে গেল, প্রথম দিনেই ভুলভাল প্রথম দিনের সংসার

আপাদমস্তক ডুবে যাচ্ছে, ভেসে যাচ্ছে! নামতা চক্রে বাঁক নিচ্ছে

একটি ফসলি মাঠের অনুঘ্রাণে আপাদমস্তক একা একা হেঁটে যায় 

কে যে আছে, কে নেই, জানা নেই

 

সমুদ্র উপকূলে ঝিনুক কুড়াবে বলে

একদিন গান ধরেছিল, সেখানে ঘোড়দৌড়

অবাধ্য ঘূর্ণি ঝোঁকে কথার চাবুক

 

 

 

 


1 টি মন্তব্য: