কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১০ |
খেলা যখন
বাবলুর জ্বর হয়েছিল। প্রায়ই জ্বর হচ্ছে ইদানীং। আর জ্বর হলেই মাসি ওকে দুধসাবু
খাওয়ায়। ওর খাওয়ার ব্যাপারে আর কারো কথা খাটবে না। আর একটা জিনিস মাসি মাঝেমধ্যে
দেয়। সেটা হচ্ছে আদানুন দিয়ে মুচমুচে চিড়ে-আলুভাজা। বাবলুর খাওয়া নিয়ে মা কোন কথা
বলে না।
সকালে সে রকমই একবাটি চিড়ে-আলুভাজা নিয়ে বাবলু বসেছে ব্যালকনিতে। জ্বর এখন তেমন নেই। মা বলেছে, আজ দুপুরে ওকে
সুজির রুটি আর মুরগির স্ট্যু দেওয়া হবে। মাসি উচ্চবাচ্য করেনি। তার মানে ওটাই আজ
বাবলুর বরাদ্দ।
রোদ্দুর এখনো এতদূর আসেনি। তবে আসবে। বুড়োও
আসবে। বাবলুর জ্বর হলে ও যেন কী করে ঠিক টের পায়! কাছাকাছি ঘুরঘুর করে। একটু আগেও
ছিল। যদিও বাবলুর বিড়াল খুব একটা ভালো
লাগে না।
আটদিন পর মহালয়া। ওর ক্লাশ সেভেনের বন্ধুরা
পাশের পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ঐদিন সকালে এক ক্রিকেট ম্যাচ ঠিক করেছে। বাবলু ব্যাটিং
ফিল্ডিং দুটোই ভালো করে। বাবলুকে নিয়ে তাই বন্ধুরা খুব চিন্তিত।
মহালয়ার আর তিনদিন। এখন বাবলু স্কুলে যাচ্ছে। ও এখন রীতিমতো ফিট। প্র্যাকটিস
বেশ ভালো হয়েছে। আজও হবে। বাবলুর কথা ভেবেই অভীক, ওদের ক্যাপ্টেন ফিল্ডিং
প্লেসমেন্ট পাল্টে দিয়েছে। জমে উঠেছে টিম।
মহালয়ার ভোররাতে মাসি ডেকে দিলো ওকে।
-কি রে বন্ধুদের সঙ্গে এবার বেড়োবি না?
দু চোখ জুড়ে ঘুম। তবু উঠে পড়লো। মাসি মহালয়া শুনবে বলে নতুন শাড়ি পড়েছে। ধূপের
গন্ধ পেল বাবলু। বাবলু ঠিক করলো, এবার মাসির কাছে বসে মহালয়া শুনবে। মা-বাবাও
আসবে। সবাই মিলে চা খেতে খেতে মহালয়া শুনবে এবার। গত চার পাঁচ মাস মাসি ওকে চা
খেতে অ্যালাউ করেছে।
-নাঃ এবার আর বেড়োবো না। তোমার কাছে বসে মহালয়া শুনবো।
একটু অবাক হলেও মাসি যেন একটু খুশিই হয়েছে।
-তা হলে মুখচোখ ধুয়ে রেডিওর সামনে বস। খালি মাটিতে বসিস না। আসন দিচ্ছি।
বাবলু চট করে তৈরি হয়ে এলো।
রেডিও, সামনে চারটে কাপডিস, চারটে আসন। তার মানে মা-বাবা এসে পড়লো বলে। বাবলু বসতেই মাসি একটা তুষের চাদর এনে
জড়িয়ে দিল ওর গায়ে। ও জানে, বাবা দেখলেই গজগজ করবে। ছেলেকে এত আতুপুতু করে মানুষ
করা ওনার পছন্দ নয়। কিন্তু মাসি পাত্তা দেয় না। বড়ো হয়ে মাসিকে ও একবার বেনারসে
বেড়াতে নিয়ে যাবে আর সুন্দর দেখে একটা রুদ্রাক্ষের মালা কিনে দেবে। পাশের বাড়ির
ঠাকুমার গলায় দেখেছে।
কিছুক্ষণ পরেই বাবলুর ঘুম এসে গেলো। শীতের মতো কাঁপুনি। মাসি টের পেয়েছে।
বাবলুকে কোলের কাছে টেনে নিলেন।
-এর তো ধুম জ্বর এসে গেছে!
বাবলু টের পেলো, খুব যত্নে ওকে বিছানায়
শুইয়ে দেওয়া হচ্ছে। একবার যেন বাবলুর মনে
হ’ল, ব্যাট আর ক্রিকেটের কিট্ আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে ওর ঘর থেকে।
খেলা যখন শুরু হবে, বাবলু কি মাঠে থাকবে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন