শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

অভিষেক ঘোষ

 

কবিতার কালিমাটি ১২০


পুরস্কার

 

চঞ্চলকে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ ঘড়ি।

কাঁটা সরার আগে, স্পন্দন বেড়ে ওঠে।

শৃঙ্খলা হারালে, জঙ্গলে মশাও পরিয়ে

দেয় দড়ি,

শিকল কেবল মনে নয়, ঠোঁট হয়ে ফোটে...

কম্পমান ধোঁয়া প্ল্যটফর্মে ঘুরে যায় রোজ

ট্রেনের জানলা না পেয়েও, যারা দৃশ্য খোঁটে,

তাদের নখে ধানক্ষেতের হাওয়া আছে অনেক

যারা জীবনের লাইন ফেলে, বাক্য ধরে ছোটে...

তখন স্তূপের ভিতর আরও চুপ করে বসে

আমি,

ভাবতে থাকি, দেড় কোটি বছর যেমন

হেরে গেছি ভোটে,

পরিসর তবুও কমে না, দিগন্ত বাড়িয়ে

দেয় চোখ,

তিরস্কারে, অবহেলায় ও অন্ধ বিশ্বাসে,

চঞ্চলের

ধৈর্য বেড়ে ওঠে...

 

কান পেতেও শুনতে পাওনি যখন

 

অগের মত কোনদিন লেখা যায় না। যে আঁক কাটা হয়ে গেছে, যে রঙ পড়ে শুকিয়ে গেছে মেঝে, তার উপর নতুন প্রলেপ ফেলে তেল ফেলে, শুধু ঘষতে থাকি। ঘষতে ঘশষতে মধ্য যুগের রাজারা বেরিয়ে আসে। লম্বা উঠোনে চুল খুলে  দাঁড়িয়ে থাকে ঝর্ণা। অস্ত্রদের ঘর থেকে ধোঁয়া উড়তে উড়তে মিশে যায় আকাশে।  আমি শুধু মিশি না, আমি মিশতে পারি না বলেই, আমি ধোঁয়ার মত হাল্কা নই, চিনির মত মিশুকে নই, নুনের মত স্বাদও নেই আমার। সেই এক স্যাঁতস্যাঁতে সিঁড়ির মত কখনও উপরে উঠি আর নিচে নামি, কিছু কিছু সময় মাঝেও থেমে থাকি অনেক দিন। পুরনো লেখারা হাসে, তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়েছে বলে, আমিও হাসি তাদের দেখে আমার বর্তমান আলো হয়েছে বলে, প্রথম কবিতার বইটি পাশেই পড়ে থাকে, মাঝে মাঝে উলটাই, চোখ বোলাই আর দেখি সে এক ভাষার দখলকে ছেড়ে আজ যে ভাবনাকে আবার দখল করতে চলেছি মধ্য যুগের রাজাদের মত, হাতি নিয়ে ঘোড়া নিয়ে রথ নিয়ে কত ধুলো উড়িয়ে কত শব্দ করে আমার হাতে আজ অস্ত্র একটিই যে আমি নিরস্ত্র।

আমার মনে আশা একটিই যে আমার আর কোনও আশা নেই। তাই যা পাওয়া আর যা না পাওয়া তার কোন মানে নেই আমার কাছে। আমার কাছে শুধু আনন্দের হল এই যে একটি শব্দ দিয়ে শুরু করা না-ভাবনাকেও অনায়াসে এখনও আমি ভাবনার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি, আর তার জন্য আমার লাগে একটু সময়। এবং সময় সম্পর্কে আমি যেটুকু বুঝেছি অন্তত এই বাংলায় থেকে যে কিছু কিছু মানুষের জীবনে সময় ঘুরে গেলেও জীবন ঘুরবে না... না ঘুরবে তাদের মত, না ঘুরবে তাদের রথের চাকা নাই বা ঘুরবে তাদের ভাষার দখল, আমি লেখার দখল ভাষার দখলকে ফেলে, এগিয়ে চলেছি হাতি নিয়ে ঘোড়া নিয়ে ধুলো উড়িয়ে ভাবনার কাছে শুধু নিজেকে দখল করব বলে।   

 

আক্ষেপমালা থেকে বেড়িয়ে – ২

 

এখন আর বুদ্ধি দিয়ে লিখতে ভাল লাগে না। এখন আর ইচ্ছে করে না ক্রোধের উপরে খোলস চাপাই। তারপর তার গায়ে পড়িয়ে দিই চার বা ছয় পা, সে ধীরে ধীরে হাঁটুক বালির উপরে, শব্দ পেলে আবার ঢুকে যাক খোলসের তলায়,  একদিন তাকে কোনও এক বুটজুতো বা গাড়ির চাকা এসে পিষে দিয়ে যাক, এখন আর সত্যি ইচ্ছে করে না এসব, এখন ক্রোধকে খোলা রাখি রোদে, এখন ক্রোধকে খোলা রাখি হাওয়ায়, যদি সে উবে গিয়ে আকাশের মেঘ বা রামধনু হয়ে ফোটে দেখতে ভাল লাগে, যদি তাকে চিল বা বাজপাখি এসে ঠুকরায় তাতেও অসুবিধে লাগে না। এখন আর পারি না ক্রোধকে খোলসের তলায়  ঢুকিয়ে তার নিচে চার বা ছয় পা পড়িয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটে  পাঠাতে।

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন