শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

দিশারী মুখোপাধ্যায়

 

কবিতার কালিমাটি ১২০


বুক এবং যন্ত্রণা

 

অতটা ধরে রাখার ক্ষমতা তার ছিল না

ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে এখানে ওখানে

স্বাদে মিষ্টি, ফলত পিঁপড়ে

গন্ধে ঝাঁঝাল, ফলত মাছি

স্পর্শে কাঁটা, পথিক সাবধান

 

আলো সকলকেই গ্রাহ্য করে

কী নর্দমা

কী মন্দির

আহ্লাদে ওর গায়ে পড়তেই আল্ট্রা ভায়োলেট

 

সে খুব ছোটো ছিল

সবটা ধরতে পারেনি

ওটাও খুব ফেনিয়ে উঠেছিল

প্রশ্রয় দিল উপচে পড়াকে

 

পরজ

 

জানি এখন তুমি বিবেক দংশনে অতিষ্ঠ

বিবেকেরও কষ্ট হচ্ছে কামড়ের অপ্রতুল ক্ষমতার জন্য

তোমার সবটুকু দেহ, ছায়া, স্মৃতিতে কেন

ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বিষের দখল!

 

বহুদূরে বসে থাকা একটা লোক

নিবিষ্ট মনে আপেল খাচ্ছে

যত খাচ্ছে, আপেল তত অক্ষত হচ্ছে, আবার

বিবেকেরই অনুগত একটা গাছ

তার মাথায় ছাতা ধরেছে

 

নিয়তি বলে একটা শব্দ

প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল এখনই

এক ভয়ংকর অথচ মনোরম বিস্ময়

তোমাদের দুজনের শরীর থেকে বেরিয়ে

নিষিক্ত হবার জন্য বেছে নিচ্ছে

অন্য এক আশ্রয়

 

বাস্তবতা

 

যে অনুষ্ঠানটি আজ সন্ধ্যায়

অনুষ্ঠিত হবে একজনের বাড়িতে

সে আর অনামন্ত্রিত আমি এখন

অবস্থান করছি একই শহরে 

-এটা একজন নাগরিক মানুষের পুঁজ

 

প্লাস্টিকের পুতুলের বুকে

হৃদয় বলে কিছু দেওয়া হয় না

তৈরি করার সময়

স্বল্প পুঁজির কারখানাও এটা জানে

 

মোমের আলো নিভিয়ে দেওয়ার পর

অন্ধকারের তৈরি ছুরিতে খুন হবে

হরতন আকৃতির কেক

 

যে ক-টা লাইন লিখতে পরিশ্রম হয় না মোটেই

তাকেই বলে কবিতা

 

আসন

 

চেয়ার একমনে ভাবছিল

কীভাবে ধারণ করবে তোমাকে, ভাবতে ভাবতে

তৈরি করছিল তার নিজের আকার, আকৃতি ও নির্ভরযোগ্যতা

যদিও সিংহচিহ্ন কোথাও ছিল না সে চেয়ারে

মেজাজে কোথাও যেন ছিল

 

অজয়ের তীরে জয়দেব কেন্দুলিতে তখন

মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিখছিলাম

কীভাবে ভিক্ষা চাইতে হয়

পবিত্র ভিক্ষার ক্রিয়াকাল

বারবার আমাকে আছড়ে ফেলেছিল

সেই অভিমান-হরণ মাটিতে

 

চেয়ার তোমার যোনি চুরি করেছে গোপনে

অজয় আমাকে দিয়েছে নগ্নতার মহিমা

 

অবস্থান

 

আজ সকালে তিনটে ছেলে এসেছিল

তারা খানিকটা বালক, খানিকটা যুবক

আর খানিকটা স্পাইনালকর্ডের দুর্বলতা

তিনটে ছেলে তিনদিকে বসল

আমি কিছুতেই ওদের সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রাখতে

এবং নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না

জল কোথাও, কীভাবে যেন কাঁপছিল

(সাধারণত বাতাস বা সরীসৃপ দায়ী হয়)

 

ওদের মধ্যে যার বয়স সবচেয়ে বেশি হবে

(বয়স গণনার নিয়ম অনুযায়ী)

তার জামার রঙ ছিল সবুজ

বাকি দুজনের রঙ

নিশ্চিত করতে পারছিল না আলো

 

একজন ছোটো গল্পকার সেখানে থাকলে

এসব নিয়ে একটা গল্প লিখতে পারতেন অনায়াসে

আমি গল্প-মুক্ত কবিতার কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ

ওদের বসিয়ে রেখে

চলে গেলাম স্নান করতে

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন