কবিতার কালিমাটি ১১৯ |
শিরোনামহীন তিনটি কবিতা
(১)
যেতে কেবল ইচ্ছে
করে – কোনো পুরনো
ঘরে, পুরনো
পথের ধারে,
আমার অংশ রাখা
আছে সেইসব জায়গায়।
একটা অশ্বত্থের
ছায়া, একটা
পুকুর, শুকনো
পাতা বিছানো পথ,
একটা ঘুঘু ডাকা
অলস দুপুর - সবকিছুর
জন্য মনটা ব্যাকুল
হয়। সময়ের দাবদাহে গলে
গলে গেছে সেই
সবকিছু। সবকিছুই
বদলে যায়, বদলে
যাচ্ছি আমি, তুমি;
পড়ন্তবেলা,
ঝুলে যায় মুখ, মুখে আঁকিবুকি রেখা।
কবরে মানুষ
চিত হয়ে শুয়ে থাকে,
পচে-গলে কঙ্কাল
হয়, আর সেই কঙ্কাল মাটি,
মাটি থেকে আরও
কত কী! শেষে কী আছে?
শেষ কি আদৌ
আছে নাকি? আমি
শেষ দেখতে চাই।
এই বদল আর ভালো লাগে না।
কোনোকিছু ভালো
লাগে না,
শরীর মন জুড়ে
এই ক্লান্তি আর ভালো লাগে না।
(২)
সে এক অন্য
সময়, মনে পড়ে মস্ত এক ভোজ,
উৎসবমুখর রাত;
মে মাসের মধ্যভাগ, ছিল ঝড়ের পূর্বাভাস।
সঙ্গীতের সাথে
নেচে চলে ক্যারোসেলে খেলনা ঘোড়াগুলি,
হাত বাড়ায়
শিশুটি।
ফোকলা মুখে
চারটা দাঁত আর সময় নিরন্তর চারটা।
নাম ধরে সে
ডাক দ্যায়, যেন এক জাতিস্মর।
গৌরবময় ছিল
সেই রাত। আরো মনে পড়ে,
কোনো একদিন
চুপিসারে কাদের নাও
যেন ভিড়লো
ঘাটে, সাতটা কাকে কি দাঁড় বাইলো?
কোথায় গেলো?
কোন সে দেশে, কোন সাগরের কুলে?
‘ঘরে আয় বাবা’,
মা ডেকে ডেকে সারা।
ফিরে আসে, রেখে
আসে কথা, সুর, আরো কত কী!
ছোটাছুটি, কত
নিদ্রাবিহীন রজনী, বন্ধ দুয়ারে করাঘাত,
আর কত বন্ধুর
পথ পাড়ি! মা ভাবে আর ভাবে,
স্বপ্নে ঘুরে
ঘুরে আসে কেবল রক্তজবার মতো ফুল,
কালো কালো ছায়া,
আসে সমুদ্রের এক গাঙচিল,
একটি প্রমোদতরী।
শুধু একটিবার যাওয়া যেত যদি,
পাড়ি দিয়ে
গহীন সাগর অরণ্য, সুউচ্চ পর্বতরাশি,
দুর্গম প্রান্তর
আর খরস্রোতা নদী!
দূরাগত বাঁশির
মতো মিষ্টি এক সুর ভেসে আসে।
বহুদিন ধরে
সেই গাঙচিলের
ভেতর অন্য এক পাখি বাস করে।
(৩)
স্বপ্ন এবং
বাস্তব মিলে মিশে একাকার; সাথে বিশ্বাস,
অবিশ্বাস, প্রাকৃত,
অতিপ্রাকৃত, অতীত
এবং বর্তমান।
মস্তিষ্কের ভেতর বিরামহীন কথোপকথন,
সহস্র প্রশ্নের
আনাগোনা। ঘাসের জন্য
উন্মুখ হৃদয়;
একটু শান্তি, একখন্ড জমি, একটা হারানো
জঠর। অর্থ নেই
কোনো জীবনের মানে
খোঁজার; ঘুম
নয়, ক্লান্তি, শুধুই ক্লান্তি নেমে আসে দু’চোখ
বেয়ে, তবুও
গুটিসুটি মেরে চোখ বুজে
জোর করে শুয়ে
থাকা। নিষিদ্ধ গোধুলির দেশ থেকে ভেসে
আসে ভৌতিক সব
প্রতিধ্বনি, সামনেই
হয়তো নিঃশব্দে
পায়চারি করে অদৃশ্য মানব। বাতাসে ভেসে
আসে ঔষধের গন্ধ,
মৃদু কাশির শব্দ,
কখনো নীরব কান্নার,
কখনো মৃদু হাসির। মস্তিষ্কে অন্তহীন
প্রশ্ন; ক্লান্ত
করে, কেবল ক্লান্ত করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন