কবিতার কালিমাটি ১১৭ |
ফেরা
অতি যান্ত্রিকতায়
যারা ভেসে গিয়েছিল
তারা আকাশ থেকে
ফিরে আসছে
তাদের প্রত্যেকের
হাতেই এখন লালগোলাপ
প্রাচীন গুহামানব
এখন তাদের নায়ক
তারা ভেবেছিল
আকাশ থেকে পেড়ে আনবে আলো
ভেবেছিল নক্ষত্র
থেকে নিয়ে আসবে
এক সমুদ্র সুখ
ভেবেছিল পাখির
চেয়েও দ্রুত উড়ে গিয়ে
জয় করবে ব্রহ্মাণ্ড
অথচ নিঃস্ব
হয়ে তারা ফিরে এসেছে
প্রাচীন বাংলার
লালমাটির গ্রামে
নিকানো উঠোন,
ধানের গোলা,
বিদ্যুৎহীন
রাতে জ্যোৎস্না মেখে
তারা উঠোনে
গড়াগড়ি খায়
তাদের স্বপ্নে
হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে বেড়ায়
গ্রামের আধান্যাংটো
শিশুরা।
দু'একটা সত্যি কথা
কালো প্রজাপতিটা
লাল টুকটুকে ফুলে
ডানা ঝাপটায়...
ডানা ঝাপটায়...
তারপর ফুলটা
প্রজাপতি...
না!... প্রজাপতিটাই
ফুল হয়ে যায়।
কবিতাকে খুব
যে আদর করতে হয়,
এত যে আদর করতে
হয় কবিতাকে
সেটা জেনেই
মেঘেরা বৃষ্টি হয়ে ঝরে
ময়ূর পেখম তোলে।
ঘুমের ভিতরও
একটা মন বেঁচে থাকে
রঙিন-রঙিন স্বপ্নের
জাল বোনার জন্য।
কৃষ্ণসায়রের
তীরে সেই যে তিতিরটা
এক পা দু'পা
করে হাঁটত
বিকেলটা নিজের
অজান্তেই সন্ধ্যা হয়ে যেত
জোনাকিরা আসত
রাতের হিসেব দিতে
মনে আছে তো
তোমার?
সারারাত সহবাসের
পরে
ভোরের শিশিরে
ভিজেভিজে
যখন গাছের প্রতিটি
ডালপালা
প্রতিটি ক্লোরোফিল,
জাইলেম-ফ্লোয়েম
খুব ভালোবেসে
ফেলে শিউলিটাকে
ঠিক তখনই টুপ
করে ঝরে পড়ে সে।
গাছের বোবা
কান্নাগুলো শিশিরের সঙ্গে মিশে
সম্পূর্ণ ভিজিয়ে
দেয় শিউলিটাকে
তবু মন ভেজে
না শিউলির।
গাছটা জানে
শিউলি একদিন ঠিক
ছেড়ে যাবে তাকে,
তবু পরদিন সন্ধ্যায়
আবার সে প্রেমে
পড়ে।
অনেক ঠকেছি
তবু
আজ এই পড়ন্ত
বিকেলে
তুমি যদি ফিরে
আসো
যদি তুমি সত্যিই
ফিরে আসো
মনটাকে আমি
শিকল দিয়ে বাঁধলেও
ও বলবে, এসো
হিয়া... এসো হিয়া...
দহন
ধুলোর ঝড় উঠেছে
মরু রাত্রিতে
চাপচাপ অন্ধকার
বিষাদ নদীর
শীতল স্রোতের আবর্ত
ঘুটঘুটে মধ্যযুগীয়
অন্ধকারে
পেঁচারা ওড়াউড়ি
করছে
আমার দু'হাতে
শুধু সূর্যপোড়া ছাই
তুমি নেই
তোমার আমার
মধ্যে অনন্ত গ্যালাক্সির ব্যবধান
আরও দূরে সরে
যাচ্ছি আমরা
আমার চারিদিকে
দাবানল
আমার বুকের
ভিতরে জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস
আমার চারিদিকে
পাথর ভাঙার শব্দ
আমার হৃদয়ের
স্ফটিকটা ভেঙে
কাচের টুকরো
হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মেঝের ধুলোয়
কান্নারা বোবা
হয়ে গেছে, অশ্রুরা স্তম্ভিত
ভাঙা মাস্তুল
হাতে নিয়ে আমি একলা দাঁড়িয়ে আছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন