বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

অর্ক চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৬


আশ্রয়

পুরনো দিনগুলো দল ভাগ করে নিয়েছিল। রজতাভ সকালে চা নিয়ে এসে বসলেই পায়রাগুলো উড়ে যেত। কী যে ভয় ওদের কে জানে! ওর মাথায় অবশ্য  তখন রক্তাক্ত এক দৃশ্য অভিনীত হচ্ছিল। পাখা চালাবে, না চালাবে না? দ্যাট  ইজ দ্য কোয়েশ্চেন! চালালে যদি বদবেয়াড়া পায়রাগুলো কাটা পড়ে যায়?

পায়রা শান্তির প্রতীক, ভালোবাসার, বারান্দায় সকাল সকাল বকম বকম আদর এবং এজাতীয় নানা কিছু নিয়ে যত রোম্যান্টিকতা থাকুক না কেন, কয়েকবছর কাছাকাছি থেকে রজতাভ হাড়ে হাড়ে বুঝেছে, পায়রাগুলো বজ্জাত। সকালে জানালার বাইরে বসে ডানার ধড়পড় শব্দ করে বুকের ধুকপুকানি বাড়িয়ে দেয়। সুযোগ পেলেই খড়ের বাসা করে নোংরা করে, ডিম পেড়ে উতপাৎ করে। তাছাড়া রোজকার বারান্দাজোড়া মলত্যাগ তো রয়েছেই। 

তারপর এল এক নতুন দিনের দল। পায়রারা সহবাস শিখে নিল। সকালে বারান্দায় টি-পট নিয়ে বসে পাখা চালিয়ে দিল রজতাভ। ওরা পাখার ব্লেড ছেড়ে  নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে বারান্দার রেলিং বরাবর  বসে পড়ল। নজর রাখতে লাগল রজতাভর দিকে, কিন্তু ভয় পেয়ে উড়ে গেল না। রজতাভ তখন ফোনে গুগল  নিউজ খুলে বসেছে। ও খবর দেখেছে আর পায়রার দল ওকে। ওদের কাছে ওই খবর। রেলিং ধরে একটু এগোচ্ছে, আবার একটু পিছোচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য উড়ে যাচ্ছে, তৎক্ষণাৎ আবার ফেরত আসছে রেলিঙের ওপর, বকম বকম করে বন্ধুত্ব করতে চাইছে যেন।

রজতাভর আজ প্রথমবার প্রায় পাঁচ বছরের ডেরাকে বাড়ি বলে মনে হচ্ছে। নতুন দিনের দল ওকে বাড়ি নিয়ে এসেছে। পায়রারা ওকে বাড়ি এনে দিয়েছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন