কবিতার কালিমাটি ১১৬ |
অবশেষ
ভাঙ্গাচোরা আমার জীবন
তোমায় দেব?
হাড়মাস এক করে
আগুন জ্বালাব!
এই শীতে দৃষ্টির রেখা
কেঁপে যায়,
ছায়ায় ছায়ায়-
কুয়াশায় ঢাকে পথ,
অবিরল
ঝরা পাতা পায়ে এসে বাজে।
তোমাকে দিয়েছি মেধা, মনন আমার,
আরও কী দেব সুপ্রিয়?
অতীত, বিবর্ণ দিন?
ফেলে গেছ সে তো নির্মোহ!
তুমিও জেনেছ বিষ,
সে গরল তোমার আপন-
আমার শুশ্রুষা,
তোমার কাম্য নয়
এই জেনে
অপেক্ষায় থাকি।
তবে আজ কিসের উৎসব?
হাড়ে-মাসে জ্বেলেছি আগুন!
নীলাক্ত রাত,
শুকনো পাতার মত
জ্বলে যায় অতীত আমার।
স্বাদু ফল,
জলবিন্দু
স্বাতী নক্ষত্রের,
অবান্তর, সেই উপহার-
মুহূর্ত-প্রমাদ,
একজন্ম প্রতীক্ষার পর
পড়ে থাকে কিছু অঙ্গার।
ছায়াপথ থেকে
“মাণিক
আমার,
যেদিন তুই জন্ম নিলি,
জন্ম নিলাম আমিও;
তুই এলি,
আমার খাঁচার পাখির
একমুঠো একলা আকাশ হয়ে।
দিনে দিনে তোকে ফুটিয়ে তুলতে লাগলাম
আমার বুকের উত্তাপে,
মা-পাখি যেমন তার বুকের উত্তাপ দিয়ে
ফুটিয়ে তোলে তার ছানা।
তোকে দিলাম আমার ভালোবাসা, বিশ্বাস,
মূল্যবোধ;
তোকে দিলাম আমার সবটুকু।
আর এইভাবে একটু একটু করে
আমি পূর্ণ হতে লাগলাম।
তোর রক্ত মাংসের শরীরটাকে
পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিলাম সত্যি,
কিন্তু তুই আমাকে এনে দিয়েছিলি
এক আলোর পৃথিবী!
তুই দিয়েছিলি এক পোষা কাঞ্চনজঙ্ঘা,
পাশাপাশি ঘন হয়ে বসা
নিশ্চুপ কিছু মুহূর্ত,
সেই ছোট্টবেলার
বাবার, দাদার আগলে রাখা যত্ন।
বিশ্বাস কর,
এত তাড়াতাড়ি তোর হাত ছেড়ে দিতে
চাইনি আমি।
ভেবেছিলাম, তোর আকাশ জুড়ে
ভালোবাসার রামধনু রঙের খেলা দেখব।
তাও কি হয়?
মহাকালের হাতের ডমরু ডাক দিল-
লড়াই করেছি,
তুই, আমি দু’জনেই;
তবু তাকে এড়িয়ে যাই, সাধ্য কী?
তাই তো পাড়ি দিতে হল, একা,
সেই চিহ্নহীন পরম শূন্যে!
ছায়াপথে আজ অনেকটা দূর চলে এসেছি,
এরই মধ্যে তোর জন্মদিন এল,
আবার চলেও গেল।
এবার আর তোকে কবিতা দেওয়া হল না।
আমার কবিতা
এখন থেকে খেলা করবে
তোরই স্মৃতির অন্তরালে,
অক্ষরবিহীন নীরব আর্তিতে।
ভালো থাকিস-
আর যে অসহায় মানুষটাকে
পিছনে ফেলে এলাম,
তাকে একটু দেখিস।
এখন থেকে তার ভালোবাসার সংলাপ,
নিরুচ্চার,
শুধু থেকে যাবে ইথারের তরঙ্গে
সবার চোখের আড়ালে।
ইতি
কোন এক আলোকবর্ষ দূরের
ছায়াপথ থেকে,
তোর মা।
আগ্নেয়
তোমার আশমানী নীল চোখে
ধরা ছিল দু’ টুকরো আকাশ,
চুড়ো করে বাঁধা লাল চুল
মনে হচ্ছিল এখনই ছড়িয়ে পড়বে
কাঁধের দু’পাশে,
আগুন-পাখির ডানার মত।
চারপাশে নরম তুষার-
তোমার আভা উত্তাপ ছড়াচ্ছিল,
বেপথু নিঃশ্বাস
এঁকে দিচ্ছিল বাষ্পলেখা।
দস্তানা খুলে
তুমি তোমার হাত
বাড়িয়ে দিলে আমার দিকে-
শঙ্খের মত সাদা
তোমার আঙুলগুলোর দিকে তাকিয়ে
আমি সমুদ্রের গর্জন
শুনতে পাচ্ছিলাম।
আগুন আর জল,
জল আর বাতাস,
বাতাস, আর মাটির শরীরে
জমে থাকা আগ্নেয় উত্তাপ-
সেদিন তোমাকে আমার
অপরূপ এক নিয়তি বলে
মনে হয়েছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন