কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৫ |
মকর জাতিকা
সকাল ঠিক ৯.৫৫ মিনিটে নৈঋতা সিদ্ধান্ত নিল যে অনুতোষের সঙ্গে সম্পর্কটা এবার ভাঙতেই হবে। তার হাতে আজকের দৈনিক কাগজটা। একটু আগেই সে পড়েছে এই সপ্তাহের রাশিফল।
ক্যাপরিকর্ন: নতুন সম্পর্ক শুরু হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। নতুন বিনিয়োগ করার কথা ভাবতে পারেন। স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। সপ্তাহান্তে ভ্রমণযোগ আছে।
প্রথম দুটো বাক্যই জরুরি। বাকিগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে, তৃতীয় বাক্যের 'বিনিয়োগ' কথাটির অন্য মানেও করা যায়। তার মুখে একটা হালকা হাসি খেলে গেল। বিনিয়োগই বটে। তাই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কমপ্যাটিবিলিটি ম্যাচ করাটাই আসল ব্যাপার। কিন্তু সবার আগে অনুতোষকে জানাতে হবে নিজের সিদ্ধান্তের কথা। সে মোবাইলটা হাতে টেনে নিল
— শোন্, তোকে একটা কথা বলার ছিল। আমাদের ব্যাপারটা শেষ করা দরকার।
— চিৎকার
করিস না। আমাদের মধ্যে সঠিক কমপ্যাটিবিলিটি নেই। সেটাই স্বাভাবিক। তুই লিব্রান।
তোর সঙ্গে আমার বনবে না। অনেক দিন ধরেই ভাবছি ব্যাপারটা। আজ ডিসিশন নিয়েই নিলাম।
এখানেই শেষ হোক।
অনুতোষকে চেঁচামেচির আর কোনো সুযোগ না দিয়েই সে কলটা ডিসকানেক্ট করে দিল। অনুতোষের নাম্বারটাও ব্লক হয়ে গেল তারপর।
নৈঋতার বাড়ি জুড়ে একটা ব্যস্ততার তরঙ্গ বয়ে গেল পরের কয়েক মাস। মেয়ে অ্যারেঞ্জড বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। চলল পাত্র বাছার পালা। নৈঋতা আগে দেখে ছেলের জন্মতারিখ, সানসাইন। অন্য সব ফ্যাক্টর দেখে তারপর। সেগুলোরও গুরুত্ব আছে কিন্তু রাশির মিল হওয়া সব থেকে জরুরি। এই ভাবেই বেছে নিল সায়ন্তনকে। আইটি সেক্টরে ভালো চাকরি, নওডায় পোস্টিং, মোটামুটি হ্যান্ডসাম সায়ন্তনের মূল যোগ্যতাটা হল তার জন্মতারিখ। অগাস্টের ২৮, মানে ভার্গো। পারফেক্ট কমপ্যাটিবিলিটি। আর কী চাই নৈঋতার!
ওদের বিয়ে ঠিক হয়েছে নভেম্বরের শেষে। এখন কোর্টশিপ চলছে চুটিয়ে। অগাস্টের মাঝামাঝি নৈঋতা সায়ন্তনের থেকে জানতে চাইল ওর জন্মদিনের প্ল্যান।
— কার জন্মদিন?
—
তোমার... আর ক'দিন পরে না?
— না তো,
আমার জন্মদিন তো মার্চে হয়ে গেছে।
—কিন্তু,
কিন্তু ...অগাস্ট ২৮?
—আরে ওটা
তো অফিসিয়াল জন্মদিন। মাধ্যমিকের অ্যাডমিটে ওটা ভুল করে এসে গিয়েছিল। আর চেঞ্জ
করার ঝামেলায় যাইনি। আমার তো আসলে মার্চ ২৮।
মার্চ ২৮। মানে এরিস! সব থেকে বাজে কমপ্যাটিবিলিটি ক্যাপ্রিকর্নের সঙ্গে। এ কী হল?
কথা আর এগোল না বেশি। বিছানায় শুয়ে নৈঋতা বারবার নিজের মোবাইলটার কললিস্ট দেখছে। ওর চোখের সামনে একটা ব্লক্ড নাম্বার। অনুতোষের। ভাগ্যিস, নভেম্বর আসতে এখনও কিছুটা দেরি আছে। নৈঋতাকে ভাবতে হবে, অনেক ভাবতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন