কবিতার কালিমাটি ১১৪ |
গড়পরতা গোধূলিবেলা
– ২
(১)
পরাজয়-এর মধ্যে বাস-করা জয় অন্তিমে।
বসন্ত শীতশেষে। ঝরাপাতার গানে সেতারহাত ওঠে আর নামে। খাদে চড়ায়। পাখিশিস সন্ধ্যায় পিদিম
জ্বালে। পরা ভাব জয় করে আলো আরও তীক্ষ্ণ আলোউৎস।
কত বড়ো এই আঙিনা। যতই নাচো, ফুরোয়
না। সীমানার শেষে মানা। মেনে মেনে সীমা, সীমানার বাইরে যেতে পারে না। পরা ছাড়িয়ে যায়
জয়ের সব হাইপ্যারাবোলা।
তুরীয় এই সীমানাহীন আকাশে পাখি
আর মন ওড়ে। মনে ইচ্ছেকীটের আশা-নিরাশা। নিরাশায় কেন যে এক আশার আভাস রাখা, আকাশ হয়তো
জানে। সে তার শরীর বড়ো করে। পরা মন তখন জমাতে থাকে কাঁচাবাঁশ, খই, তামার পয়সা। সাজাতে
থাকে শ্মশানপথের কুশলী নীরবতা…
পরাজয়ের কালো ছাই জয়ের আলোয় হ্লাদে
নদীতে মেশে, সাগরমুখী…
২৬/১১/২০২১
(২)
গভীর রাতের চোখ আমার চোখে চোখ
রাখে। মায়াময়। দুই জাগা-চোখের ফাঁকে রাত গড়ায়। অন্ধকারের চোখ আমার কপালে চুমোয় ‘ঘুমো’
লেখে। একটি চোখ দুটি চোখের ত্রিনয়নে… স্থির।
শব্দহীনতার মধ্যে ফিসফাস। চেপেচুপে
দু-চার কথায় কুশলাদি। পাশ-ফিরে শোওয়াকে মনে হয় রানওয়েতে প্লেন নামছে। চোখের পাতা নামায়
টিকটিকির ঘর্ঘর। বারান্দার টবে চন্দ্রমল্লিকা ফোটার শব্দ সন্ধ্যার আলো জ্বালে। নৈঃশব্দ্য
মুখ খোলে। একাকীত্ব বলতে কিচ্ছুটি নেই, না-ঘুমিয়ে ঘুম হেসে গরমবিছানা ভাঁজ করে গুটিয়ে
রাখে।
গভীর আরও গভীরে যেতে যেতে সারফেসে
চলে আসে। অন্ধকার আর কতক্ষণই বা জুতো পরে থাকতে পারে! খোলে ধীরে। মোজার রং ধূসর। আলো
আস্তিনের বোতাম খুলবে-খুলছে। আমার চোখ থেকে তুলসীপাতা সরিয়ে নেবে ভোরের আঙুল। গভীর
রাতের চোখ শেষ পর্যন্ত তার দৃষ্টি নামায় আমার দু-চোখের ত্রিনয়নে। বিন্দু হয়ে যায়…
২৭-১১-২০২১
(৩)
গোধূলি লেগেছে চুলে। এক গুচ্ছ
চুল ফেলে গেলে। রিঠা ঘষে দিই রোজ। যেন ময়লা না-জমে। যেন গোধূলি লেগে থাকে চুলে। ধূলি
রং রোঙ্গিলি।
অনেক দেখা হাতে বাসি মেহেন্দিটুকু
থেকে যায়। রং। নাই বা থাকল কলকা আঁকা; ফাঁকা নয় করতল। দুই রঙের মিল-অমিল, জেল্লা-ফ্যাকাসে
মিলিয়ে দেখি। মেলে, মেলেও না। মিলিয়ে নিতে নিতে আকাশে রং বেণি বাঁধে।
বাহুমূলে ট্যাটু ছিল না। সজনী
লেখা হাত ছিল না। গাঢ় কিংবা ফিকে। নখে গোধূলি রঙের ছোঁয়া। রোজ পশমের কাপড় বুলিয়ে দিই।
যেন চটে না-যায়।
চোখে গোধূলির ধুলো এসে পড়ে। কিছু
আর দেখতে পাই না। শুধু জিজ্ঞাসা করি, ‘দেখতে পাস?’
২৮-১১-২০২১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন