কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৩ |
ডায়রী একটা…
আবু মিঞা সম্মুখেই দাঁড়িয়ে। তার নিচু মুখ ও দুই চোখ জিজ্ঞাসু। সালামত সাহেব প্রশ্ন করলেন, কী নাম যেন বললে তোমার?
একটু আগেই সালামত সাহেব পরিষ্কার শুনেছেন, লোকটার নাম আবু মিঞা, তবু থুতনি চুলকতে চুলকতে আর একবার নাম জিজ্ঞাসা করলেন। কিছু মানুষ আছে না, যাদের দিকে একবার তাকালেই অহেতুক একটা বিরক্তিভাব হয়, আবু মিঞা অনেকটা সেইরকম। কুচকুচে কালো চামড়ার আবু মিঞার ডানহাতটা সামান্য নুলো মতন, বড় বড় নখ হাতে। তাছাড়া লোকটার একটা চোখ প্রায় বন্ধ, অন্ধও হতে পারে। কপালের এক জায়গায় বোধহয় খোসপাঁচড়া আছে, কেমন যেন কপালটা।
-আজ্ঞে… আমার নাম আবু মিঞা…
-ও আচ্ছা আবু মিঞা নাম।
সালামত সাহেব ভাবছেন লোকটাকে আর কী প্রশ্ন করা যায়। ইতিমধ্যে আবু মিঞা তার জামার পকেট থেকে ময়লা মত একটা কাগজ বের করে সামনে এগিয়ে ধরেছে।
-স্যর আমি বাবুর্চির কাজ ভালো জানি… আপনার একজন বাবুর্চির দরকার শুনেছি…
-কী এটা?
-এটা স্যর আমার সার্টিফিকেট। আগে যেখানে কাজ করতাম…
একটা টাইপ করা শংসাপত্র, খুব পুরনো কিন্তু বেশ যত্নে রাখা। অন্তত সালামত সাহেবের সেটাই মনে হল।
-কে এটা লিখেছে?
-পাইলট স্যর লিখেছেন হুজুর… উনার কাছেই আগে বাবুর্চির কাজ করতাম। বলতে বলতে দু’পা সামনে আরো এগিয়ে আসে আবু মিঞা। বিশ্রী গন্ধে সালামত সাহেব নাকে চাপা দেবেন কিনা ভাবতে থাকেন। শংসাপত্রে চোখ বোলালেন সালামত সাহেব। ইংরেজীতে যে কথাগুলো লেখা তার সারমর্ম, আবু মিঞার রান্নার হাত অসাধারণ। রন্ধনবিদ্যায় তার মত কুশলী লোক খুব কমই মেলে। বাবুর্চি হিসেবে তাকে পাওয়া এক বিরল সৌভাগ্যের ব্যপার। আমি তার সাফল্য কামনা করি।
সালামত সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কী রান্না জানো?
আবু মিঞা হাসি মুখে বলল, সব… ইংলিশ, থাই, বেঙ্গলি, চাইনিজ…
-আরে না না… আমার কাজের লোক টাইপের একজন দরকার… ঝাড়ু-পোঁছা, হাটবাজার, বাথরুম পরিষ্কার, দুবেলার রান্না…
-হুজুর আমি ঘরের কাজও জানি।
-বেতন কত দিতে হবে?
-আপনার দিল যা চায়, তাই দেবেন স্যর।
সালামত সাহেব ধাঁধাঁর মধ্যে পড়ে গেলেন। গত এগারো দিনে তিনটে কাজের লোক চলে গেছে। শেষ লোকটা আবার যাবার সময় দামি দেওয়াল ঘড়িটা খুলে নিয়ে গেছে। কখন চুরি করেছে তা তিনি টেরও পাননি। তারপর থেকে সালামত সাহেব দুবেলা হোটেল থেকে খেয়ে আসেছন। কিন্তু বাইরের খাবার আর সহ্য হচ্ছে না। এদিকে রাইস কুকারটা বিগড়েছে। না হলে একবাটি চাল আর মাপমত জল দিয়ে বসিয়ে দিলে আধঘন্টায় গরমভাত রেডি। একটা ডিম ভেজে নিলেই হল শুধু। এইসব তিনি ভালোই পারেন… গতকাল তাঁর স্নান হয়নি। ট্যাঙ্কে জল ছিল না, কাজের লোক কেউ থাকলে জল এনে দিত।
আবু মিঞা ডাকল, হুজুর!
সালামত সাহেব লোকটার চোখের দিকে তাকালেন না। কী বলা যায়!
সালামত সাহেব একটা টেনশনবিহীন জীবন চান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন