রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

সোনালি বেগম

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৩


ডোরবেল বাজছে


স্মৃতিকণা অন্যমনস্ক হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। বাইরে রাস্তায় আলো জ্বলে উঠছে। অন্ধকার বারান্দায় আবছায়া-আলো ছড়িয়ে পড়ছে। রাতের স্তব্ধতা চুরমার করে রাস্তায় গাড়িগুলো ছুটে চলেছে। রাস্তার পাগল মেয়েটার কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। স্মৃতিকণারও ভীষণ কান্না পাচ্ছিল। সে এই মুহূর্তে একদম একা। তাই অচেনা কাউকে তার ঘরে আশ্রয় দিতে পারছে না। একতলা বাড়ির সদর দরজার দিকে তাকায় স্মৃতিকণা। এমন সময় ডোরবেল বেজে ওঠে। একটা ঘোরের মধ্যে দরজাটা সে খোলে। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বছর কুড়ির সেই পাগল মেয়েটি আর পাড়ার কতকগুলো বাচ্চা ছেলে-মেয়ে। ছেলে-মেয়েগুলো ছুটে পালিয়ে যায়। মেয়েটি হাসতে থাকে এবং ঘরের ভেতর এক প্রকার জোর করেই ঢুকে পড়ে। স্মৃতিকণা পেছোতে থাকে, ধীরে ধীরে বারান্দায় পৌঁছে যায় সে, সঙ্গে সেই মানসিক বিক্ষিপ্ত মেয়েটিও।

‘তোর নাম কী?’

‘পাগলি, পাগলি বলেই সক্কলে ডাকে।’

স্মৃতিকণা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে যে সে কোথা থেকে এপাড়ায় এসেছে। পাগলি এদিক-ওদিক ফ্যালফ্যাল করে দেখতে থাকে, কোনো উত্তর দেয় না।

স্মৃতিকণা রান্নাঘর থেকে ভাত-ডাল-সবজি নিয়ে আসে। পাগলি গোগ্রাসে খেতে বসে যায়।

এই নির্জনতায় মানসিক বিক্ষিপ্ত সঙ্গীর সঙ্গে খানিকক্ষণ বসে থাকা যায় হয়ত। কিন্তু এরপর কাউকে সাহায্যের জন্য ডেকেও সাড়া পাবে না সে। সদর দরজা বন্ধ করে ফিরে এসে সে দেখে, খাওয়া-শেষে বারান্দার মেঝেতে শুয়ে পাগলি নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে।

মনের অশান্তভাব সরাতে স্মৃতিকণা সিগারেট ধরালো। চেয়ারে বসে একফালি তারায় ভরা অমাবস্যার আকাশ দেখতে থাকলো সে। টেবিলে রাখা ছাইদানি ছাই-এ-ছাই-এ ভরে উঠতে থাকলো। গভীর রাতের সদর দরজায় আবার ঘন-ঘন ডোরবেল বেজে চলল। সঙ্গে কুকুরের ডাক। কে এল? কোনো সমাজবিরোধী? কোনো চোর? নাকি কোনো পাগল?


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন