কবিতার কালিমাটি ১১২ |
যে পাখিকে রোজ
যে পাখিকে রোজ
দেখি
ঠোঁটে ঠোঁট
ডানায় ব্যথা উড়তে উড়তে পেরিয়ে যায় নীল আকাশ
একফালি মেঘ
রোদ্দুরের খালি
পা
মায়ের আঁচল
মাটির ঘর
নদী নদীর মায়া
যে পাখিকে রোজ
দেখি ডাকছে গাইছে
ইচ্ছেমতন রঙ
মাখছে
পলক ফেলি পালক
ছুঁয়ে পাখির
যে পাখির গায়ে
নামের রাষ্ট্র নেই
নেই নাম দেশের
কোন
যে পাখির পায়ে
নেই শৃংখল
নেই সৈনিকের
মৃত্যুপদক
যে উড়ছে উড়ুক
স্বাধীন
যে আলোর সীমানায় লিখে আসে অসীমের গান
যে আকাশ থেকে
মাটি ছুঁয়ে লেখে কবিতার ফসল
যে ঠুকরে খায়
ফল
যে ঠোঁটে পিপাসার
জল
নিরাকার স্বাধীনতা
বট অশ্বত্থের ডালে ডালে
ছায়া দেয়
ভুখা পেট দলে দলে এসে মেশে
নিরাকার নাম
নেই দেশ নেই মানুষের কোলে যেমন সূর্য হাওয়া খেলে যায়
স্বাধীন
আর কালি খোঁজে পৃথিবী
খোঁজে বর্ণমালা
কোন অক্ষরে
সে লিখবে উজ্জ্বল স্বাধীনতা
আগামির ফুল
আজ আমি তিনটে
ছবি পরিবর্তে করেছি চার
তুমি?
আমি আজ তিনটে
রঙ ঠোঁটে আর চোখে লাগিয়েছি এমন যেন ধাঁধা লাগে
তুমি?
আমি আজ ত্রিবিধ
তরলে উল্লাস করেছি যেন ধরণীকে তুচ্ছ মনেহয়
তুমি?
আমি আজ পার্ক
স্ট্রিট থেকে ক্লাব ময়দান ছুঁয়ে
শিশিরের মতন
রক্ত জমাটে আঙুল ডুবিয়েছি
আমি আজ একুশ
শতকের পদবি নিয়ে হেঁটেছি
স্বপ্নের সরণিতে
যেখানে পাতাগুলো দামাল
তুমি?
আমি আজ একরকম
ক্ষোভ দেখতে দেখতে
ভাললাগার টিকিট
কিনেছি ঠাণ্ডাঘরের
আমি একটা গোলাপ
বিক্রির ছেলের সঙ্গে হেসেছি
আমি আজ একা
হাঁটিনি
আমি গ্যাসবাতির
নিচে সখ্য নিয়েছি ক্রোধের
বাষ্প গুনেছি
আর চিঠি লিখেছি
তুমি?
আমি আজ চিঠিতে
লিখেছি আমি ক্ষুদ্র কেউ না
আমি আজ মঈদুল
নাকি সেরকম
কেউ না
তুমি?
আমি যদি বা
ওরকম কেউ হয়েই যাই
থাকি বা
থেকেও থাকি
না
আমি যদি আমরা
হয়ে বুনোফুল হই
আমি যদি আজ
চন্দ্রবিন্দু চাঁদের কলজে ছেঁড়া এক মৃত্যুতে
শেষ না হওয়া
আগামির মিছিল হই
তবে তুমি…
সভ্যতা ১১
কি হে চললে
তুমিও
এত তাড়াতাড়ি
কেন কেন যে ফুরিয়ে আসে দিন
আর একটু রইলে
তুমি
আলোয় পথ দেখে
ফিরত যারা
ফিরবে বলে হাত
পা ধুয়ে
নদীর জলে নিংড়ে
নিচ্ছে দুখ
বিকেলের সুখ
কাঁধে ফিরছে ঘরে কত জনা
আর একটু থেকে
গেলে তুমি মন্দ হত না...
চললে তবুও বেলা
পড়ে এল আরও
মায়ের দুপুর
চোখে ধাঁধা অকারণে গাঢ়
মায়ের দুহাত
ব্যস্ত খুঁজে ফেরে সলতের তেল
গোয়ালপাড়া
গল্প করে ভরাট সন্ধেমুখর
জ্বলবে প্রদীপ
বায়স ডানার
গন্ধে ভাসে অন্ধকার
নেমে যাচ্ছে
পাঁচিল বেয়ে
নেমে যাচ্ছে
নিয়তির মতন
মাটির বুক চিরে
খনিমুখী নামে কেউ
জানে সভ্যতার
সূর্য কারোর অপেক্ষা করে না...
সভ্যতা ৩৮
কি হতে চাও
ছেলেটি বলল,
ঈশ্বর
ক্ষুদে ছোকরা
এখনও মনে মনে তাই মানে
একবার ঈশ্বর
হতে হয়...
এভাবেই গত শীতে
চাদর জড়িয়ে ঘুম মেপে নিয়ে ফেরিওয়ালা সে
গত সন্ধে ফের
শুনতে পাচ্ছে এসে
দাঁড়ানো ছায়ামূর্তি
প্রশ্নের সঙ্গে নিভিয়ে দিচ্ছে আগুনের তাপ
কাঠ মাথায়
সরে যাচ্ছে তপোবন
ছেলেটা ছটফট
করে, হাতে ভারি ঘুমের বাটখারা
বুকে একগুচ্ছ
ঠাণ্ডা তারিখ পায়ে ছেঁড়া মোজা যেন জিজ্ঞাসু,
এবারে...
ছেলেটার ঘুমগাড়ি
কোন যে স্টেশন ছাড়ায়
পাশে সিঁড়ি
আড়মোড়া ভাঙা সবেমাত্র বয়সের হাতুড়ি
ধানকাজ শেষের
সহযাত্রী এক
রাত পাহারায়
টুপিওলা যেন
নিয়মিত অভ্যাসের
ছেলেটিকে গুঁতো
দিয়ে বকে, ফের ফের...
স্বপ্নের ঈশ্বর
তোর
সরে যায় ঘুম
শেষে রক্তপুষ্ট ক্লীব যত
তুই কতশত তত
দূরে
এমন সময় ভীড়
শহরে চিলেকোঠায় স্বপ্নযুদ্ধ রেখে
মুড়ির ঠোঙার
অমর গপ্পে সন্ধ্যাতারা সরে
আমরা কি খুব নিভে যাচ্ছি
আমরা কি খুব
নিভে যাচ্ছি
কাছে এসো কাছাকাছি
আকাশ দেখি
হাওয়া মুঠোয়
হরির চায়ে
চুমুক দিই
অমনি পিঠে চাপড়
দাঁড়িয়ে আছো
কবি মশাই মুখে ঢাকা কাপড়
বুদ্ধি তো নেই
কী দেব আজ
নির্বোধের এই
সুখ
কাপের চায়ে
বিস্কুটে উষ্ণ গরম ঠোঁট
পুড়তে পারো
জাগতে পারো
জাগাতে পারো
গোটা দেশ
মনের মধ্যে
মুঠোফোন ঠাসা বিশ্বাসের অবশেষ
ফিরতে পারো
ফেরাতে পারো
আরও কী কী বল
পারো
জিততে চলা দুপায়ে
আরও পা হোক জড়ো
জোগাড় করো
জ্বর আর গা ভরা অসুখ
এবারে আবার
উড়বে পাখি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন