কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০২ |
সময় সংকলিতা
রোদ প্রস্তুত ছিল। মেঘ বৃষ্টিকে সহ্য হচ্ছিল না। মেঘ নুয়ে পড়তেই রোদ
চিকুমিকু করে উঠল। দুধের সরের মতো ঘন রোদ। আইসক্রিম রঙা জামা পরে মেয়েটা জামার হাতা
গুটাচ্ছিল। রোদে ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ
সাহেবের রাগিনী মনে হয়।
সে রান্নাঘর থেকে আমাকে টেক্সট করে;
: হোয়্যার ইজ কাঁচা মরিচ?
রান্নাঘর থেকে আমাকে টেক্সট করতে হবে? পড়ার ঘরে এসে জানতে চাইতে পারে
না? আশ্চর্য! এই মেয়ের আজই সেলফোনটা গ্রাউন্ডেড করতে হবে।
কী যে হচ্ছে না এই প্রজন্ম!
মেয়েটা ভাত খাবার সময় কাঁচা মরিচ খেতে ভালোবাসে। কোথা থেকে ঝাল খাওয়া শিখেছে কে জানে! আমি তো ঝাল খাবার দেখলে দৌড়ে পালাই।
পড়ার ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলি;
: পনেরশ দশ, যা বলবার সামনে এসে বল। খামোকা টেক্সট করিস না তো…
গম্ভীর চেহারা নিয়ে থপথপ আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর জন্মদিন পনের অক্টোবর বলে আমি ওকে ১৫১০ ডাকি। অন্য দিকে তাকিয়ে ও আমার সমান দীর্ঘ চেঁচানো স্বরে জানাল;
: তোমাকে না কতবার বলেছি আমাকে ১৫১০ ডাকবে না। আই হ্যাভ এ বিউটিফুল
নেইম…
এই মেয়েটার একটা অসম্ভব সুন্দর নাম আছে। সংকলিতা।
আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাই আমাকে পাগল মনে করে এই যে আমি মানুষের নাম সংখ্যায় রাখার পক্ষপাতী বলে। তাহলে নাম শুনে কেউ বুঝবে না যে সে কোন ধর্মাবলম্বী। হাস্যকর যুক্তি বটে!
: সংকলিতা, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বল। আই কন্ট্যাক্ট করো।
সে এবার চোখের দিকে তাকায়। তার চোখে এক এক দশমী সমান বিষণ্ণতা। আমি
চমকে উঠি। ওর কাছে যাই। কাঁধে হাত রাখি। নরম করে জিজ্ঞেস করি;
: কী হয়েছে মা?
সে যেটা বলল তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
: আমি
বরং আমার জীবনটা এমনভাবে কাটাব যেন একজন ঈশ্বর
আছেন এবং সেখানে নেই তা খুঁজে বের করার জন্য মরতে
হবে। এমনভাবে বেঁচে থাকব
যে তিনি সেখানে নেই এবং যেখানে
আছে তা খুঁজে বের করার জন্য মরব।
(আলবার্ট ক্যামু)
এইটুকুন মেয়ে এত কঠিন কথা বলবে আমি ভাবতেও পারি না। অবাক হয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়েই রইলাম। রাত ঠেলে দিচ্ছে যাযাবরী সন্ধ্যাকে। আবার বললাম সংকলিতাকে;
: আমাকে সব বলো তো, মন খুলে বলো।
মেয়েটা বিড়বিড় করে বলল;
: তুমি দেখতে পাও না এই পূজা এলেই কিছু লোক ইচ্ছা করে ঝামেলা পাকাবে?
কোন পাগলেও বিশ্বাস করবে না যে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ মণ্ডপে কোরান রাখবে। কারা এইসব
ভাবে? কেন ভাবে? হোয়াট ইজ দ্যা বেনিফিট?
আমার থুতনিটা ঝুলে পড়ে বয়সী বটবৃক্ষের মতো, পরাজিত সৈনিকের মতো। কোন কথা আর বলতে পারি না। আমি বুঝতে পারি আমার মেয়েটা বড় হয়ে গেছে যেন আচানক।
সময়, সংকলিতা ও আমি যেন সালভাদর দালির ছবির মতো গলে যাচ্ছি, গলেই যাচ্ছি…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন