কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০২ |
দক্ষিণপন্থী
উদ্ভব ডানহাতে লেখে, ডানহাতে খায়, ডানহাতে
ঘুষি মারে, ডানহাতে হস্তমৈথুন করে। আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতোই তার ডানহাতি কারবার।
ছোট থেকে এভাবেই সে বড় হয়ে উঠেছে। কিন্তু যখন থেকে তার একটু একটু করে জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত
হয়েছে, তখন থেকে সে আদাজল খেয়ে লেগেছে, কীভাবে নিজেকে পুরোপুরি দক্ষিণপন্থী করে তোলা
যায়। আসলে উদ্ভব অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছে, তার চেনা-জানা অচেনা-অজানা অধিকাংশ মানুষেরাই
যদিও তারই মতো ডানহাতি, কিন্তু কিছু কাজ তারা ডানহাতে করে না, বরং করে বামহাতে। কেন,
ডানহাতে করে না কেন? এটা তো স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ
নয়! উদ্ভব ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না। বিশেষত ডান ও বামের এই সম্মিলিত সুবিধাবাদ
তার কাছে নিতান্ত অশ্লীল বলে মনে হয়। সুতরাং নিজেকে যথার্থ দক্ষিণপন্থী রূপে প্রতিষ্ঠিত
করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তার কতকগুলি বামপন্থী অভ্যাস ও মনোভাব শুধরে নেবার জন্য তারপর
থেকেই রাস্তায় বামদিক ধরে নয়, ডানদিক ধরে যাতায়াত শুরু করে, আর পটি করে ডান হাতের চেটো
দিয়ে ছোঁচায়।
উদ্ভবের
শৌচকাজের ব্যাপারটা যদিও নিকিতার দেখার সুযোগ ও সৌভাগ্য এখনও হয়নি, কিন্তু রাস্তায়
ডানদিক ধরে চলার কান্ডটা তার দৃশ্যগোচর হলো।
দেখে রীতিমতো হকচকিয়ে গেল নিকিতা। অন্য দেশের নিয়ম বিধি তার জানা নেই, কিন্তু এই দেশে বামদিক ধরে পথ চলাই দস্তুর।
কেউ যদি তা অমান্য করে, তাহলে তা বেআইনি! রাস্তায় এভাবে যাতায়াত করলে নির্ঘাত দুর্ঘটনার
সম্ভাবনা! নিকিতা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে উদ্ভবের
গতিরোধ করল চৌরাস্তার মোড়ে।
-তুই
নিজেকে কী ভাবিস বল তো উদ্ভব?
নিকিতার
বকুনি খেয়ে উদ্ভব পড়ল সমস্যায়। কী উত্তর দেবে, চট করে ভেবে পেল না। বলল, কেন? আমি কী
করেছি? তুই এত রাগ দেখাচ্ছিস কেন?
-রাগ
দেখাব না কেন? তুই যা খুশি করবি, আমাকে তা মেনে নিতে হবে?
-তোকে
মেনে নিতে তো বলিনি! এটা আমার এক্কেবারে পার্সোনাল ম্যাটার। দেখ নিকিতা, এছাড়া তো আমার
কোনো উপায়ও নেই! আমাকে তো নিখাদ দক্ষিণপন্থী হয়ে উঠতেই হবে!
-নিকুচি
করেছে তোর দক্ষিণপন্থার। রাস্তায় ডানদিক ধরে হাঁটলেই দক্ষিণপন্থী হওয়া যায়? যতসব উদ্ভট
কথা আমাকে বোঝাস না তো উদ্ভব!
উদ্ভব
এবার বিরক্তি দেখিয়ে বলল, এটাই হচ্ছে তোদের দোষ। জন্মেছিস ডানহাতি হয়ে, আর সুযোগ পেলেই
বামহাতি হয়ে যাস! কেন, শুধুমাত্র ডানপন্থী হতে আপত্তি কিসের?
-আপত্তি
এইজন্য যে, কাজটা বেআইনি। পদে পদে বিপদের আশঙ্কা। তাছাড়া তোর সঙ্গে বেরিয়ে তুই রাস্তার
ডানদিক ধরে হাঁটবি আর আমি বামদিক ধরে হাঁটব, তারপর বলতে পারিস, আমরা কোথাও আবার মিলিত
হব কী করে?
নিকিতার
কথায় একটু তালগোল পাকিয়ে গেল উদ্ভবের। একটু চিন্তা করে বলল, তোকেও তাহলে আমার মতো পুরোপুরি
দক্ষিণপন্থী হতে হবে।
নিকিতা
এবার প্রচন্ড দাবড়ানি দিয়ে বলল, তার মানে? আমি রাস্তায় ডানদিক ধরে হাঁটব?
-হ্যাঁ,
হাঁটবি। পটি করে ডানহাতে ছোঁচাবি।
-কী
বললি? তুই তাই করিস নাকি? আমি তোর ডানহাতটা কেটে ফেলব উদ্ভব!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন