রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০১


ভ্রমণ

 

জীবনে অনেক ট্রাভেল করেছে উষ্ণা। এখনও করছে। গতকাল রাতেও ও পুষ্করের ব্রহ্মামন্দির দর্শন করে উড়িষ্যার শপিংমলের বিপণী বিতানের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়ে জগন্নাথের পৃথিবীকে দেখছিলো। আর আমি দেখছিলাম ওকে। এই যে উষ্ণা ও আমি। আমাদের দু'জনের মাঝখানে হালকা একটি সেফারেটর দিয়ে সেকশন করা হয়েছে।

উষ্ণা যখন এ সেকশনে বসে, আমি তখন বি সেকশনে বসি।

ও, মানে, উষ্ণার মাথায় পলিটিক্স নিয়ে পেশাদারিত্ব থাকবে, এটা ধরে নিলে আমার মাথায় তখন থাকবে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট।

উষ্ণ, আর্দ্র, তাপমাত্রা বেড়ে ওঠা একটা সময়ে উষ্ণা একজন সময়োপযোগী ট্রাভেলার। ওর কথায় - দুদিনের জীবনে ‘খাও পিও আউর মস্তি’… 

আমি এককথায় বর্ণনা সেন। যে কোনো বিষয়কে ভাবাদর্শের ওপরে বসাই। এই যেমন উষ্ণাকে আজ আমি মনো-ভ্রমণকারী হিসেবে একটি সত্যি কথা বলার চেয়ার পেতে দিয়ে বসতে বললাম। আর একটা একটা করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম ওর দিকে।

প্রথম প্রশ্ন,  তুমি কেন এমন করে পলিটিক্স নিয়ে পেশাদারিত্বের ভ্রমণ করো?

ও যা উত্তর দিলো, তাতে বোঝা গেলো কর্পোরেট বিশ্বে একটা চাকরি থেকে আর একটা চাকরির মাঝে যে দেওয়াল থাকে, সেখানে ন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল ওয়ে বা পথ থাকে। পথিক সেই, যিনি পথ বোঝেন।

আমার দ্বিতীয় মনোভ্রমণ প্রশ্নের উত্তরে ও বললো - আসলে ভ্রমণ মানে কি কোনো আপেক্ষিক সরণ!

তুমি কী বলো?

আমি ওর পাল্টা প্রশ্নে একটু দ্বিধান্বিত মনে নিশ্চুপ থাকলাম কিছুক্ষণ। এরপরই মোক্ষম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম ওর দিকে।

এই যে উষ্ণা রায় ও বর্ণনা সেন। এরা দু'জন পৃথক সত্তা হলেও তুমি গতকাল মনে মনে যে ট্রেনে করে জয়পুর থেকে কলকাতা ফিরছিলে, আমিও সেই একই ট্টেনে সফরকালে বিহারের সাসারামপুর থেকে প্যাসেঞ্জার হলাম। মাঝরাতে  দেখলাম, তোমার ঠোঁট বিশ্লেষণ করছি আমি। আমার ভাবাদর্শের ওপরে দাঁড়িয়ে তুমি বলছো - এখন আমাদের এই ট্রেনটি সোজা আকাশের দিকে উঠতে শুরু করেছে। গ্রাভিটেশনাল লেন্সিংএ দেখার চেষ্টা করছি। শরীরের নীচটা শূন্য হচ্ছে  ক্রমশঃ! আবছা হয়ে আসছে কথাবার্তা! তবুও শুনতে পাচ্ছি ঘোষকের কন্ঠস্বর - আমাদের নেক্সট স্টেশনের নাম সহস্রাব্দ।

ঠিক  যেমনভাবে মৃত মানুষকে মাচায় বেঁধে হরিনাম সংকীর্তন করতে করতে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়, ঠিক তেমন ভাবেই আমি, বর্ণনা সেন, উষ্ণা রায়-এর মনো-ভ্রমণের গ্রাভিটেশনের মধ্যে ঢুকে হরি - এই শব্দের ভাবাদর্শের কাছে ছোট হতে হতে বিন্দুতে মিলিয়ে গেলাম।

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন