রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

দেবলীনা চক্রবর্তী

 

কবিতার কালিমাটি ১১১


একটি মাত্র সংখ্যা

 

আক্ষরিক অর্থে সে তোমার আমার নিজস্ব অধিকার

তবু চেয়ে দেখি চতুর্দিকে এক আশ্চর্য প্রভাবিত সন্ত্রাস

মুখহীন কিছু রঙের মুখোশ, দেশপ্রেমহীন কিছু মিথ্যা ভরণ

হেঁটে যায় রঙিন মিছিলে, কিছু জমায়েত করে

উজ্জ্বল সভাতে

গায় কেবল হাত-মুখের অঙ্গভঙ্গিতে উন্নয়নের স্তুতি তা বধির হয়ে উল্লাসিত ও হাততালি দিয়ে শোনে

কিছু বিভোর তোতাপাখি

তারা আদৌ জানে না কেন ও কিসের পক্ষে তারা

শুধু গণতন্ত্রের অধিকারে ই ভি এম রাঙায় হয়ে মাত্র এক একটা নির্বোধ সংখ্যা

 

বৃষ্টি মন

 

আবার যদি আকাশ ঢাকে মেঘের আস্তিনে, 

আবার যদি ভাসায় শহর বৃষ্টি মুষলে,

ভেজা ভেজা কিছু শব্দে জলছবি আঁকে মন,

সাদা ক্যানভাসে মুক্তি পায় কত অচেনা রঙ।

দ্বিধাহীন সময় বলে যায় কানে-কানে,

এমন ধারাজলে, বয়ে যায় থির যৌবন!

এ বর্ষা বড়ো ভালোলাগার, বড়ো আপন।

 

কত লিখিত চুক্তি আজ শুধু কাগুজে নৌকা,

কত ঘামে ভেজা শ্রম আজ অলিখিত, বৃথা।

কত ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ধুয়ে মুছে গ্যেছে পাহাড় অলিন্দে,

কত প্রেমিক প্রেম রাঙিয়েছে বৃষ্টি ভিজে।

আরও কত কিছু ঘটে যায় তুমুল বৃষ্টিদিনে।

 

সময়ের ধারাপাতে বদ্ধ এই জ্যামিতিক জীবন!

যেন

পরতে পরতে ঝরে যাওয়া পেঁয়াজের আভরণ,

ক্রমাগত চলে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা —

মহরা সাপ-লুডোর!

 

তবু যদি আবার বর্ষা আসে,

মেঘের মিনার আবার সেজে ওঠে!

মন কেমনের সুর বাজবে অকারণে!

আবার দুচোখ সিক্ত হবে এমন স্বপ্ন- খেয়ালে।

 

ঘরে ফেরার গান

 

এর পরিণতি আসলে কী তা জানা নেই, কিন্তু শুধু একটা ধোঁয়াশা পথ চোখের সামনে, ভীষণ সরু আর দুর্গম হলেও সে পথ কোন পাহাড়ী বা চড়াই উৎরাইয়ের নয়, তবুও অতিক্রম করাই সেখানে রীতিমত চ্যালেঞ্জ।

আশেপাশে যতদূর চোখ যায় শুকনো রূক্ষ নুড়িপূর্ণ পাথুরে মাটি। যতটুকু জন্মেছিল আগাছা তা ঝাঁ ঝাঁ রোদে পোড়া চেহারায় এখনও মুখ তুলে আছে আপ্রাণ বাঁচার জন্য।

সাধ্যমত গতিতে ছুটে চলা যায়, যেহেতু এখানে কোন স্পীড বেকার নে্‌ই, তবু আশঙ্কা পর্যাপ্ত আলো হারাবার, লক্ষ্য ভ্রষ্ট হওয়ার!

আবার অনেক রাতে দু’চোখে ঘুম নেমে এলে ধীরে ধীরে খুলে যায় অরিগামি  বিভাজিকা আন্তর আলো, রঙিন আলোয় ভেসে ওঠে অক্ষর, অক্ষরের সাথে বিশেষ্য-বিশেষণ জুড়ে জুড়ে দিব্যি ঝুলে থাকে টুংটাং বাক্য, আধভাঙা কবিতার নির্যাস। সারারাত ঘুমের মধ্যে গল্প বলে, কথা কয়, সুর শোনায়! ওদের আমি ছেড়ে দিই খোলা আকাশে যেভাবে উড়ে বেড়ায় পেটকাটি চাঁদিয়াল, ভীষণ গতিতে উড়ুক্কু হাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে গম্ভীর দর্পে, জানি ওর লাটাই আমার হাতে, ভোরের নরম আলোয় ঠিক গুটিয়ে নেবো তিন পরতের মাঞ্জা দেওয়া ধারালো সুতো। কিন্তু হায়, চোখ খুলে সে সব অনুবাদী শব্দ, নিরাময়কারী কাব্য নিমেষে হারায় জৈবিক আলোর ভিড়ে!

কিন্তু কেন! এই নিথর হারিয়ে যাওয়া একলা পথ খুঁজে তাকে পেরিয়ে ঘরে ফেরা কি সত্যিই অসম্ভব!

তবু আমি ক্লান্তিহীন! ধুলো ও আলো মেখে এ পথে গোধূলি নামলে ‘মহিনের ঘোড়াগুলি’র সাথে গেয়ে উঠব...

 

“আমি গাই ঘরে ফেরার গান --

ফিরবো বললে ফেরা যায় নাকি

পেরিয়েছো দেশ কাল জানো নাকি এ সময়

এখনো সামনে পথ হাঁটা বাকি

চাইলেও দিতে পারবে না ফাঁকি নিশ্চয়--”

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন