রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া

 

কবিতার কালিমাটি ১১১


কুহক

 

চলন্ত জানলার ফ্রেমে দেখেছিলাম আমি

নয়ানজুলি গুমটিঘর টেলিগ্রাফের তার

দু-এক ঝলক জারুল ঘন ফুটছিল কি?

জোছনা এতো অপরিমিত ছিল

ভালো করে দেখার আগেই হারিয়ে ফেলেছিলাম

সে কি আমার শোকের মতন ছিল?

অনেক বিকেল ভেঙে যখন বাতাসে নিমফুল,

সে কি আমার অতীতমগ্ন জলের সৌধ থেকে

জাগছিল আর বলছিল সেই হারানো মর্সকোড

জিগ্ শ  পাজল, ক্রস ওয়ার্ডের ঘূর্ণিমাতন জুড়ে

ভেতর থেকে আনম্র কোন অনুরণন তোলে

ব‍্যথার মতো নেশার মতো ঝড়ের হাওয়ার আগেই

কৈশোরে সে আকীর্ণ কোন অগ্নিশিখার ডালে

আজকে জানি মিথ্যে করে নিয়ন জ্বেলেছিল

আবার তবু কুহক ডাকে ছুটন্ত প্লাটফর্ম

রুগ্ন খালে মনখারাপের মতন ডিঙি ভাসে

নেই সে তো নেই… জেনেও তবু রাতেরই মান্দাসে

যাচ্ছি ভেসে যাচ্ছি দূরে বিপন্ন বিস্তারে...

 

মুঠোভর্তি সময়

 

নিজেকে কী ভাবে সে?

সবুজ মাছরাঙা হয়ে জলপথ ছুঁয়ে খালি ওড়ে

কী বোঝাবে তাকে বলো

হেরে গেলে যে সিদ্ধান্ত উঁচু করে ধরে

ধুপবাতি দিয়ে তারাদের পাশে পাশে সন্ধে ধরায়

সন্ধের ঠেকে ভাঙা সাইকেল নিয়ে সে তো একাই দাঁড়ায়

চোরাচাউনিতে ছটফট করে তার হাতভর্তি সময়

ভেবে চিন্তে বলো যোগাযোগের রাস্তা তাহলে কী?

এই হাত? ফ‍্যাকাশে রঙ এই ঠান্ডাহাত?

রান্না মাংসের মত ডুবে থাকা আত্মা যেমন

শীত রাতে ডিনার টেবিলে ঘোরে

চাপা গলার কথাবার্তা শুরু হয় আবার

শাদা প্লেটে একঘেয়ে সুর

রাতের খাওয়ার পর

ঘুম আর আদরের পরিচিত মিউজিক নোট

আঙুলে আঙুল ঘষে অন্ধ মানুষের কাছে

সে তবু শিখতে যাবে রাতের শেষ

উষ্ণতা দেবে হাতে

যোগাযোগের সনির্বন্ধ অনুরোধে নিজেকেই ডাকবে,

ডেকে বলবে, বাজো দেখি মন

বারবার বেজে উঠবে তার মুঠোভর্তি সময়।

 

বিভ্রম

 

কালই তো কথা হল তাই না?

ভাল আছি অনেকটাই

মাঝে মাঝে মনেও পড়ে যাচ্ছে

হাওয়া ওল্টানো সেইসব ঝাউপাতাভর্তি ঘুম

লালাবির ভাঙা সুর, ছোট ছোট রূপোর ঘন্টা,

দুধগন্ধের এই ভোরও কি সিডেটিভ?

চোখের পাতা ভারি হতে হতে হাল্কা হচ্ছি পুরোটাই

আর পাতলা খোলসের মধ্যে

কেমন ডানা জন্মাচ্ছে জানো

শুধু রাত নামলেই হাওয়ারা অচেনা হয় এত,

ফাঁকা স্টেশন বরাবর লোহার পাটি ধরে ঘুরি

রেললাইনের পাশে জোনাকি ধরায় কারা বলো?

খালধারে, আগাছার ঝোপে

সবুজ অন্ধকার জ্বেলে রেখে যায়

মাথার গর্ত থেকেও  হাওয়া ওঠে খুব

আলো আর হাওয়ার দুই বিপরীত টানে

ভেঙে যাওয়া বিভ্রম শোনো, শুনতে পাচ্ছ,

ফোনের ওপারে ও নীল অন্ধকার, সুরভিত মেঘ,

মেঘ ঝমঝম ট্রেনের চাকায় জড়িয়ে পড়া লেখা,

কবে এসে গুছিয়ে দেবে বলো

লম্বা দুঃস্বপ্নের হ‍্যাঙওভার, অসুখের মন

আর ভেজা ডানার এই নৈশভ্রমণ...

 

 

 

 

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন