শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১

শুক্লা মালাকার

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৯


চুম্বন


ঠিক এই সময়টাতে এই ঘরের হাওয়া চঞ্চল হয়ে যাবে। ফিসফিস করা কথারা সজীব হবে। কারা সব বলবে এইবার! এইবার! তারপর মিষ্টি একটা গন্ধে পুরো ঘর ভরে যাবে। জানালা দরজার পর্দাগুলো খুব জোরে একবার তোলপাড় করে উঠবে। ব্যাস! তারপর সব চুপচাপ।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লীনার মোবাইলে মেসেজের টুংটাং- ‘আমি এসেছি’। একটা ছায়া শরীর ব্যালকনির ওই প্রান্ত থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসবে। দরজা দিয়ে ঢুকে বড়ো একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে জানান দেবে সে এসেছে।

লীনা তার ঘুমের আঁশ জড়ানো চোখে দেখবে রণজিৎ দুটো ব্যাকুল হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার দিকে। সে দৌড়ে গিয়ে সেই দুবাহুর আলিঙ্গনে মিশে যাবে। তারপর তারা ব্যালকনিতে গিয়ে হাতে হাত রেখে দাঁড়াবে। এভাবে কেটে যাবে কয়েকটা মুহূর্ত।

একটু পরে লীনার ব্যাকুল ঠোঁট চুম্বনের আর্তি নিয়ে এগোবে তার রণর ঠোঁটের দিকে। ঠিক সেই মুহূর্তে লীণা দেখবে রণ কেমন বদলে যাচ্ছে। তার হাত পা  শরীর সরু হতে হতে ক্রমশঃ কঙ্কাল হয়ে যাচ্ছে। লীনা গভীর আকুতিতে রণর কঙ্কাল হয়ে যাওয়া ঠোঁটে চেপে ধরবে নিজের ঠোঁট। তারপর দুজনে উড়ে যাবে দূর আকাশে মেঘেদের রাজ্যে। হাজার হাজার তারাদের গা ঘেঁষে রাতভোর বেড়িয়ে বেড়াবে।

এই পুরো ঘটনাটা ঘটতে সময় লাগে পনের মিনিট। তার আগে নার্স লীনাকে একটা ইনজেকশন দেয়। গত একমাস ধরে এই পদ্ধতিতে লীনাকে সুস্থ করে তুলতে চাইছেন নাজিমগড় মানসিক হাসপাতালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ডাক্তার।

চার বছর প্রেম করার পর হানিমুনে গিয়ে বাঞ্জি জাপিং করছিল রণ। মারা যায়। সে প্রায় তিন মাস হল। 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন