কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৯ |
মহাগ্রন্থ
সে লিখে যায়। সারাদিন, সারারাত। মাঝে মাঝে থামে। সন্তানদের খাওয়ায়, স্নান করিয়ে দেয়, দু’একবার চুমো খায় মাতৃত্বের সহজাত অভ্যাসে। তারপর আবার লেখা শুরু করে। এখনও অনেক বাকি তার লেখা।
জানলার
পাশে ভাঙা টেবিল। তাতেই লেখা চলে। মাঝে মাঝে চোখ চলে যায় বাইরে। বাড়ির পিছনে একটা জায়গায় মাটি উঁচু হয়ে আছে,
এবড়ো-খেবড়ো ভূমির নীচে শায়িত এক পুরুষদেহ। আপাততভাবে মহামারীর পর এ এক অতি স্বাভাবিক
দৃশ্য। এভাবে কত হাজার হাজার মানুষের শবের স্থান হয়েছে মাটির গভীরে, আগুনের উত্তাপে,
জলের সমাধিতে! শুধু তার কিছু হয় নি। মারণ রোগ কোনো অজ্ঞাত কারণে বাসা বাঁধে নি তার শরীরে। কারণ বলবে
কে? কেউ যে আর বেঁচে নেই!
দীর্ঘদিন
ধরে তার মনে হত সেই বুঝি একা। ভুল ভাঙল যখন তার দুয়ারে এসে হাজির হয় এক সুঠাম পুরুষ।
তারপর শুরু হয় তাদের সঙ্গমক্রিয়া অবিরাম। তারা যেন থামতে জানে না। এই দিবারাত্রির সঙ্গমের
জন্যই যেন তাদের বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় তার প্রথম মনে এল এই গ্রন্থ লেখার
কথা। যে মহাগ্রন্থে থাকবে তার নিজের কথা। নতুন সূচনার কথা, যা সে করেছে। একা।
যমজ
সন্তান। ছেলে, মেয়ে। পুরুষ তাকে আবার চায়। শরীরে শরীর যুক্ত করতে চায়। কিন্তু না, পুরুষের
আর প্রয়োজন নেই তার। তাকে লিখতে হবে মহাগ্রন্থ। অগত্যা, রতিক্লান্ত পুরুষকে হত্যা,
তার উলঙ্গ দেহকে টেনে বাড়ির পিছনে নিয়ে আসা, মাটি খুঁড়ে তার দেহকে প্রোথিত করা, মাটি
চাপা দেওয়া। ঘরে ফিরে সেদিনই সে লেখে প্রথম শব্দ, ‘আদিনারী’; ‘আদিনারী চাইলেন আলো আসুক,
বসুধা আলোয় ভরে গেল।’ তারপর সে ভাবতে লাগল। অবশেষে লিখল, ‘নিজের যোনি থেকে আদিনারী
সৃষ্টি করলেন এক পুরুষ, সন্তান জন্ম নিলেই বিনাশ তার।’
তার
চারপাশে সন্তানেরা খেলে চলেছে। সে তাদের দিকে তাকাল। খেলুক কিছুদিন এরকম ওরা। বেড়ে
উঠুক। তারপর সে বিশেষ কথাটা বলবে শুধু একজনের সঙ্গে। কন্যার সঙ্গে। মহাগ্রন্থ শুরু
করল সে, কিন্তু এগিয়ে নিয়ে যাবে তার কন্যা, পরবর্তী নারীরা।
সে
লিখে চলে…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন