আকর্ষণ তত্ত্ব
আজ আপনাদের সামনে যেটা তুলে ধরতে চলেছি তা নিঃসন্দেহে আপনাদের স্তম্ভিত করবে, লেখাটা পড়ে চুপ করে বসে ভাবতে বাধ্য হবেন, মেনে নেওয়া বা না নেওয়া সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো বহুল চর্চিত তত্ত্বটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা।
দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমরা সবাই দেখেছি বা জানি খারাপ মানুষের বন্ধু একজন খারাপ মানুষই হন এবং ভালো মানুষের বন্ধু একজন সজ্জন। যদিও খারাপ ভালো ব্যাপারটা খুবই আপেক্ষিক তবুও আমরা উদাহরণের স্বার্থে এটাই ধরে নেবো – মানে ধরুন একজন পকেটমারের বন্ধু বা চোরের বন্ধু কখনই একজন শিক্ষক বা লেখক হতে পারেন না। সুতরাং যেটা বোঝা যায় মানুষের কর্ম ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার আশে পাশের পরিচিত বৃত্তটা সেভাবেই স্থির করে, বলাই বাহুল্য আকর্ষণ করে। কিন্তু মজার বিষয় হলো এই আকর্ষণ তত্ত্ব আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পরিধির বাইরে গিয়ে আমাদের সম্পুর্ণ ভবিষ্যতের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, মানে সহজ কথায় আপনি যদি পজেটিভ চিন্তা ভাবনা করেন তবে আপনার জীবনে পজিটিভ জিনিসই ঘটবে, আর যদি নেগেটিভ চিন্তা করেন তাহলে নেগেটিভ।
এই তত্ত্বের প্রণেতাদের মত, আমাদের চিন্তা হলো এক প্রকার শক্তি এবং সেই শক্তির নিজস্ব আকর্ষণ ক্ষমতা আছে পদার্থ বিদ্যার নিত্য সূত্রানুযায়ী। প্রখ্যাত মানসিক চিকিৎসাবিদ ফিনিস কুইম্বির নিউ থট মুভমেন্টের মাধ্যমে ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিক থেকে এই তত্ত্ব জনপ্রিয় হতে শুরু করে, যদিও তিনি প্রত্যক্ষ ভাবে ল অফ আট্রাকশান বা আকর্ষণ তত্ত্বের কথা বলেননি, তিনি বলেছিলেন আমাদের মস্তিষ্কের এমন ক্ষমতা আছে যা সম্পুর্ণ ভাবে আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ১৮৭৭ সালে রাশিয়ান দার্শনিক হেলেন ব্লভাটস্কির তত্ত্বে প্রথম উঠে আসে ল অফ অ্যাট্রাকশন কথাটি। বলা যায় সর্ব প্রথম এই তত্ত্বটি নিয়ে বিষদে আলোচনা করেন প্লেন্টিস মালফোর্ড ১৮৮৬-৮৭ সালে তাঁর ল অফ সাকসেস বইতে। বিংশ শতকের দোরগোড়ায় এসে জন মানুষের মধ্যে এর বিশেষ উদ্রেগ দেখা যায়, বহু চিন্তাবিদ বিভিন্ন বই লেখেন এই বিষয়টি নিয়ে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন নেপোলিয়ন হিল এবং নরম্যান ভিনস্যান্ট পেইলে। ২০০৬ সালে দা সিক্রেট মুভিটি তৈরী হয় এই আকর্ষণ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এবং পরে বইও প্রকাশ পায়। মূলত এই সিনেমাটি এক আলোড়ন সৃষ্টি করে বিজ্ঞান মহলে।
এইবার আসি এই তত্ত্বের সপক্ষে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে। মূলত এটি ম্যানিফেস্টিশন বিভাগের অন্তর্গত হিসেবে ধরা হয়, সমালোচকরা একে সিউডো সাইন্সও বলে থাকেন। আমরা মোটামুটি প্রত্যেকেই জানি আমাদের মস্তিষ্ক অসংখ্য নিউরোন দিয়ে তৈরী এবং আমাদের সবরকম ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নির্ভর করছে এই নিউরো ট্রান্সমিশনের উপর। আমরা যাই চিন্তা ভাবনা করছি প্রতিনিয়ত, তা যতই অলীক হোক বা বাস্তব, সম্পূর্ণটাই ঘটছে কিন্তু এই নিউরোন দ্বারা। যখনই আমরা কিছু ভাবছি সেই ভাবনাটা আমাদের নিউরনে একটি ভাইব্রেশন সৃষ্টি করে, এই ভাইব্রেশনের নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সি আছে, যেমন সমস্ত তরঙ্গের আছে। এই তরঙ্গ বা তার কম্পন কিন্তু শুধু মাত্র আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর সীমাবদ্ধ তা নয়, এই তরঙ্গ আর পাঁচটি তরঙ্গের মতোই বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন তলে বিকিরিত হয়ে যায়। এবং এর নিজস্ব কম্পন মাত্রা অন্যান্য মহাজাগতিক তরঙ্গ কম্পনের সঙ্গে মিলে গেলে তাদের আকর্ষণ করতে থাকে, আর সেই আকর্ষণ বল আমাদের শরীর, স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি প্রতিপত্তি সবকিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি এখনই বসে বসে ভাবলেন বিল গেটস হয়ে যাবেন আর হয়ে গেলেন, আপনার ভাবনার মধ্যে সেই শক্তি দরকার যেটা অন্যান্য কার্যকরী মহাজাগতিক শক্তিকে আকর্ষণ করবে এবং আপনাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে।
এই তত্ত্বের কিন্তু যথেষ্ট ধর্মীয় ভিত্তিও আছে। বহু ধর্মীয় গ্রন্থ এবং ধর্ম যেমন হার্মেক্তিসিসম অথবা বাইবেল এবং হিন্দুধর্মে এর গভীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বাইবেলে মার্ক ১১:২৪-এ লেখা আছে, তুমি ঈশ্বরের কাছে এক মনে যে প্রার্থনা করবে সেটা একদিন তোমার হবেই হবে। স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতাকে অনেকেই এই নিউ থট রেভোলিউশেনের উৎস বলে মনে করেন, কারণ উইলিয়াম এটকিনসন, যিনি এই বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃৎ, তিনি গভীর প্রভাবিত হন স্বামীজির কথায়। পাশ্চাত্য থেকে শুরু করে আমাদের দেশে অনেকেই কর্মা ব্যাপারটি মানেন এবং গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, এটিও ল অফ অ্যাট্রাকশনের একটি উদাহরণ। আপনি যেমন কর্ম করছেন আপনার ভাবনা চিন্তাও ঠিক সেইভাবে প্রভাবিত হচ্ছে এবং এই আকর্ষণ তত্ত্ব অনুযায়ী তা একদিন ঘুরে আপনার কাছেই আসবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন