কবিতার কালিমাটি ১০৮ |
স্বাদ
এবং সবকিছুর
স্বাদ নেয়া হয়ে গেছে মৃত্যু ছাড়া
অর্থযশ, ইন্দ্রিয়
আরতি
নন্দিত বিরহে-হরিজন
সংসার, পরস্ত্রী
সুখ্যাতি
মহুয়া মাতাল
বন্ধুগণ
এবং সবকিছুই
দেখা শেষ হয়ে গেছে মৃত্যু ছাড়া
নীলাচল, পতেঙ্গা
সৈকত
তোমার গোপন
তিলক্ষত
মনে হলো নদী-মেঠোপথ
বৃষ্টিস্নাত
গোধূলি অক্ষত
এবং সবকিছুর
নেশা কেটে গেছে শুধু মৃত্যু ছাড়া
ধুমআড্ডা, মায়াবি
মূর্ছনা
রাত্রিরঙে আঁকা
কাব্যরেখা
অলীক জ্যোৎস্না,
নারীঝর্না
পালিয়ে বেড়াই
দূরে–একা
এবং সবকিছুর
স্বাদ শেষ হয়ে গেছে - মৃত্যু ছাড়া
বইশব
বুকসেল্ফে বেশকিছু
লাশ জমা পড়ে আছে
কাফুর-কফিনবন্দি,
ব্যক্তিগত মর্গে
অযোগ্য তর্পণে,
কৃতজ্ঞ শুকনো নিমপাতার কাছে
মাথাকাটা কিছু
লাশ, দুর্ঘটনায় হাত-পা ছেঁড়া
সেলাইকৃত সফেদ
ব্যান্ডেজে রক্তদাগ
জনৈক মৃতের
চারপাশ সৈন্যলাশ ঘেরা
কেউ ভূত হয়ে
আছে অচেনা বন্ধুর লাশঘরে
অযত্ন-অবহেলায়
পরিশ্রান্ত, তার
মৃত চোখ বেয়ে
আক্ষেপের অম্লঅশ্রু ঝরে
অনেক ধ্রুপদীলাশ
অজানিত চুরি হয়ে গেছে
সেরদরে বিক্রি
যায় চেনা লাশের মিছিলে
কতগুলো ছন্নছাড়া
লাশ বুঝি মরেই বেঁচেছে
ঝরে গেছে অকালবোধনে
বেশকিছু কাব্যলাশ
ময়নাতদন্ত শেষে
গল্পগন্ধ রেখে গেলে
প্রবন্ধলাশের
বুকে জমে অযৌক্তিক ধুলোঘাস
বুকসেল্ফে কিছু
লাশ রোগে-শোকে ধুঁকে মরে
বসন্ত-কলেরা-মহামারী
অজানা মড়কে
নাকি নিদারুণ
অবহেলা, আধুনিক অনাদরে
কয়েকটি লাশ
ধ্রবতারা হয়ে আছে ভিনগ্রহে
নিঃস্বঙ্গতাপ্রিয়
পড়ুয়া নীরবে কাঁদে
বেওয়ারিশ একটি
তাজা বইশবের বিরহে
ঘুলঘুলি
কবরের ঘুলঘুলিতে
দাঁড়িয়ে প্রতি
ভোরে একা
চড়ুইছানা অহেতুক
কিচিরমিচির
শোনায়
ভেতরঘরের লোকটি
এ-সব উপহাস
ভেবে
নাক ডেকে মরার
মত
ঘুমোয় এবং ঘুমোয়
অ্যা জার্নি বাই অ্যাম্বুলেন্স
অ্যাম্বুলেন্সকে
ক্যারাভান মনে হয়, কী নেই এখানে?
সহজে পুরীষ-মূত্র
ত্যাগ করা থেকে খাওয়া-পড়া-ঘুম
নাগরিক বাতাসে
শিসার পরিমাণ বাড়লে আছে
বিশুদ্ধ পানির
মতো বোতলজাত অক্সিজেন; গত
জীবনে যে একটিও
মৌলিক বাক্য লেখেনি সে আজ
বহুমুখী পদকর্তা।
অমর পঙক্তিটি লেখা হবে
এখানেই, শীততাপ
নিয়ন্ত্রিত গ্রহে আড্ডা চলে
চুটিয়ে, যাদের
সিগারেট, অন্যকিছুর অভ্যাস
তারাও জানালা
খুলে সাদামেঘ তৈরি করতে পারে।
যত্রতত্র থামে
গাড়ি, ইচ্ছেঘুড়ি, রোগীদের জন্যে
ভালো সুপ পাওয়া
যায়; প্রাণক্ষীণ অথবা মৃত প্রায়
ফ্রাইডচিকেনের
মতো ফুয়েল পেপারে জবুথবু
পেঁচানো হৃদয়;
যার কোন কাজ নেই আপাতত
আহারের বদলে
যে গিলে, নাকেমুখে পাইপ না
উপশিরা! যার
কাছে সবই পথ্য জল-হাওয়া-রোদ...
নীল দিগন্তে
অবাক তাকিয়ে রয়েছে যে ছেলেটি
বায়োস্কোপের
গহ্বরে চোখ না-রেখে এবং কেউ
ধাক্কা দিয়ে
বলছে পেছনে, না দেখলে তবে সরে যাও!
★
অ্যাম্বুলেন্সে
কী রয়েছে
তার একটি তালিকা
করলে দাঁড়ায় :
নগন্য কিছু
ওষুধ
টাঙানো একটি
স্যালাইন
খোলা স্টেথিসকোপ
একব্যাগ রক্ত
শূন্য অক্সিজেনের
বোতল
মলিন সেবিকা
ঝুলে থাকা প্রাণ
অহেতুক সাইরেন
★
বহুদিন বাড়ি-ঘর
যাই না
একসময় নিয়ম
করে নিয়মিত বাড়ি যাওয়া হতো
বৃহস্পতিবার
এলেই
কেউ আর ধরে
রাখতে পারতো না
এরপর ধীরে-ধীরে
ঈদে-চাঁদে ফি-বছর
ঈদেও আর যাওয়া
হতো না বহুকাল
শুধু প্রিয়জনের
মৃত্যুই নিয়ে যেতো বাড়ি
শেষবার গিয়েছিলাম
মায়ের মৃত্যুতে
গাড়ি সাজানো
হচ্ছে
আড়ম্বর আয়োজনে
ভেঁপু বাজিয়ে
আমার এবারের
যাত্রা
স্মৃতিময় হয়ে
থাকবে অনেকের কাছে
মিথের মিথ্যে
অনেক কাছ থেকে
দেখেছি মৃত্যুকে
অনুভব করেছি
শিয়রে বসে তার
ঘ্রাণটুকু কেমন
যেন বোহেমিয়ান।
এমন কৃশকায়
হবে ভাবিনি, ম্লান
দুচোখ, দাড়ি-গোঁফ;
জানে কি লোকাচার?
অন্দরমহলে হরহামেশা
ঢুকে
মাতাল মশহুর
তথাপি হ্যান্ডসাম।
মৃত্যুকে খুব
কাছ থেকে দেখেছি
শরীর আঠা দিয়ে
সাঁটা বিছানাময়
খণ্ডিত জীবন,
খঞ্জ চিৎকারে
সুখের জতুগৃহে
ছিনাল কড়া নাড়ে
মুহূর্ত ঘুমও
অপার্থিব ভয়
জয় না করে শেষ
অরণি দিয়ে গেছি
জগৎ কুড়ে খায়
মিথ-মৃত্যুভাম!
মন ছুঁয়ে যায়।
উত্তরমুছুন