কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৮ |
শূন্যপুর ৬
কাগজটা ভাঁজ করে ব্লাউজে ঢুকিয়ে নেয় মাংরি। হনহন হাঁটা দেয়। দেরি হলে টাকা কাটবে শুয়োরের বাচ্চা সুপারভাইজার। ঝোড়া সহ মাংরিকে থামিয়েছিল পোস্টমাস্টার। কাগজখানা গুঁজে দিল। পাতাতুলুনিরা সার বেঁধে চলেছে। যেভাবে মাংরির মা-ও যেত। শাউড়িও। তিন পাহাড় পেরিয়ে যে বাগান, সেখানে এখনও পাতা তোলে মা। শাউড়ির গতর গেছে। রাবার গাছের আলো ঢেলে দিচ্ছে যে রোদ, তাকে মাংরি ঘর বলে জানে। ভুল জানে?
পোস্টমাস্টার দিয়ে গেল শেষ নোটিস।
-আগের নোটিস পাও নাই?
-কী
নোটিস?
-আগে
এসেছিল।
-মনে
নাই।
-কয়েক
বছর আগে?
-না...
হয়ত... সেই যখন হীরর বয়স দুই, যে বছর কোম্পানি বেচে দিল, নতুন মালিক হল…
-হবে।
-পড়ি
নাই। হীরা হামা দিত। এসে ছিঁড়ি দিল।
-যতসব।
ট্রাইবুনালে ডেকেছিল। ক'বছর আগে?
-বছর
চার।
-একতরফা
রায় হয়েছে। বিদেশি বলছে এখন৷ ঠ্যালা বোঝো।
সাইকেল গড়ায় পোস্টমাস্টার। নোটিস ডর জাগায়। মাংরি বাউরির হুঁশ নাই। কাজে চলল। মুখ্যু হওয়ার সুবিধে, শালিকে চাট্টি বছর ছুঁতে পারল না ডর। আজও মাংরির হাত চলবে চেনা ছন্দে। হরাভরা হবে ঝোড়া। যত বোঝাবুঝি বাড়ে, তত ভয়। বাড়ি ফিরে পোস্টমাস্টার খুলে বসবে পাট্টা, দলিল। থাকতে হবে সংযত প্রস্তুত। মাংরির সেসব বালাই নাই। শ’ বছর বাগানে বাস করলেও পাট্টা হয় না। দলিল হয় না। ভাল একরকম। কাগজ না থাকলে সামলে রাখার দায় নাই।
দুপুর নাগাদ বাগান ফেলে আঁকাবাকা রাস্তায় ওঠে মাংরি। শেডে নামিয়ে রাখে ঝোড়া। সেই সময় সে দেখে সাদা ফুলটাকে। সাদা দিয়ে শুরু হয়। তারপর লাল, নীল, বেগনি, গোলাপি… ফুলে ফুলে ভরে যায় পাহাড়। বরফ পড়ার আগে পর্যন্ত। শীতের ঠিক আগে, রঙেরা ঝরে যাবে। আবার ফেরে সাদা ফুল। অথচ ফাগুয়ার বেলায় রঙেদের মনে থাকে না ঝরে যাওয়ার কথা। আজব! মাংরি ব্লাউজ থেকে বার করে নোটিস। বিদেশ মানে সে কোন পাহাড়? ফুল ফোটে সেখানে? দেশ কাকে বলে? তিন পাহাড়ের ওপারে বাপ মা, ওইখানে দেশ? রাবার গাছের রোদে দেশ? হীরার চুমোর গন্ধে দেশ? বেশি ভাবলে মাথা টাটায়। মাংরি দুর্বোধ্য অক্ষরদের ভুলে গেল।
ততদিন, যতদিন না পুলিস এল। বাগানে কাজ বন্ধ। বর কাছাড়ে গিয়েছিল হীরাকে নিয়ে। ফিরতে বেলা গড়াল। প্লাস্টিকে রাইশাক, টুকটুকে টমেটো। গাড়ি এল শেষবেলার লাল মেখে। টুকটুকে না, কমলাটে। চাঁদ বাউরি অবাক চোখে তাকাল বউয়ের দিকে। সবজে রাইশাক রাঁধা হয়েছিল। বাড়া ছিল দলা ভাতের পাশে। বউ বোকা হেসে বলল, 'নুটিস এসেছিল। বলতে ভুলেছি।' সে জড়িয়ে নিয়েছিল গত সোহরায় কেনা রঙিন শাড়ি। গাড়িতে উঠেছিল। নিরুত্তাপ। লাল নীল গোলাপি বেগনি হয়ে সাদা পর্যন্ত ফুলের যে যাত্রা, সে কথা ভাবতে ভাবতে, দুলতে দুলতে, মাংরি চলেছিল। যদিও বেশি ভাবলে তার মাথা টাটায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন