কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৮ |
অ–শোক
বাগান শুইক্যে যাচ্চে মা! তোমার বাগানের কত্ত ফুল কামিনি গোলাপ গুলঞ্চ কাটগোলাপ সবই শুইক্যে যাচ্চে যে! খবরটা তোমাকে না দিলে তুমি জানবে কি করে মা? আমি তো অবাক। পেত্তমে ভাবলাম মাকড়ের উৎপাত কিন্তু পরে দেকি ওমা তা নয়। গাচ জল পাচ্চে আলো বাতাস পাচ্চে তবু এমন ক্যানে? হাস্নুহানার ঝোপে একখানিও ফুল আসেনি। আনন্দদা মাটি কুপিয়ে গোবরসার পাতা-পচা পঁকের কাদা সব দিয়েচে তবু মা বাদলের কালে এইবার আর তেমন ফুল ফুটছেনি। এত্ত এত্ত মরণ দেকে ফুল কি সব শুইক্যে গেল মা? বস্সায় রেতের বেলা মাধবীলতা বাস ছড়ায়। বিকেলের দিকে এক ঝুড়ি ভত্তি করে সেই মাধবী ঘর দে’ তুলে আনি। সন্দে নামার পর গোটা ঘর দোর তকন গন্দে ম’ম’ করে। কিন্তু এবারে একি হল? মরণ এসে বুঝি সব থামিয়ে দে গেচে? বোগেনভলিয়ার আর ট্যাপা-দোপাটির গোড়া পচে উটেচিল, আমি সেসব নিজের হাতে পোস্কের করে দিয়েচিলাম। কিন্তু ওগুলোর ডালপালা আর বাড়েনি যে গো মা! সেই ফাগুন মাসের পর থে’ আর ফুলও আসেনি এক্কেবারেই। কত্ত ফুস্ফুসে কত্ত জল জমে ফুস্ফুস ধবধবে সাদা হয়ে গিয়েচিল, রোগীর নাড়ি দেকে বদ্যিরা মুখের ওপরেই জবাব দিয়েচে। এই এট্টুখানি বাতাসের জন্যি রোগীর ঘরের লোক বারবার ঘর বার করেচে মা। তবু কোত্তাও বাতাস মেলেনি। এসব কথা এমনি এমনি কি বলচি? যে বাতাসে চাঁপার গন্দ বইত কিংবা মুচকুন্দ কিংবা যূঁই বেলি, তেমন বাতাস আর যে রইলনি মা গো! সক্কলে কইছে বাতাসও নাকি বিষ হয়ে গেছে। কেমন করে বিষ হল কে বলবে? বিষের বাতাসেও ফুলের বাস বেঁচে বত্তে থাকতে পারে, কিন্তু কে খুঁজবে সেই বাস? কে রইল আর? কে কে শ্বাস নিচ্চে এখনও? আমি? তুমি? বকুল? পারুল? সন্ধ্যমণি? ভুঁইচাঁপা? করবী? দোলনচাঁপা? শিউলি?
ভোরবেলার আধো আলোয় বনদেবী সেবারে বাগানে নেমে এয়েছিলেন।
ভরদুপুরের ঝাঁঝাঁলো রোদ্দুরে একদিন খুব হঠাৎ বিষ্টি নেবেছিল। এগুলোন তো তুমিও দেকেচো।
চিতার আগুন লেগে লেগে আশ্বিন মাসের শিশিরও শুইক্যে গেছে। আর কাত্তিকের হিম ঠান্ডা ঘরের শীতল পেয়ে পেয়ে মরে একেবারে কাট। তারে কেউ একবারের জন্যিও চোকের দেকা দেকতে আসেনি গো মা!
‘অমল’
চলে গিয়েছে। বাগানের দিকের দরজাটা সেই থেকে হাট করে খোলা…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন