প্রতিবেশী সাহিত্য
হুবনাথ পান্ডে’র কবিতা
(অনুবাদ : দেবলীনা চক্রবর্তী)
লেখক পরিচিতিঃ ভারতের বেনারস শহরে ১৯৬৫ সালের ১৩ই এপ্রিল কবি হুবনাথ
পান্ডের জন্ম। সমসময়, সামাজিক বৈষম্য, রাজনীতিকদের নীতিহীনতা, জাতপাতে দীর্ণ ভারতীয়
সমাজ প্রভৃতি তাঁর কবিতার বিষয়। আধুনিক হিন্দি কবিতার জগতে হুবনাথ পান্ডে তাই বহুচর্চিত
একটি নাম। ‘কৌয়ে’, ‘মিট্টী’, ‘লোয়ার পরেল’, ‘অকাল’ প্রমুখ তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি
কাব্যগ্রন্থ। বর্তমানে কবি হুবনাথ পান্ডে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের
অধ্যাপক।
মজদুর
পৃথিবীকে তার
নিজের কক্ষ পথে
ঘুরতে বাধ্য
করে
প্রতিদিন সূর্যকে
টেনে নামিয়ে এনে
আছড়ে ফেলে
পূর্ব কোণে
ধরিত্রীর গর্ভ
থেকে
খুঁড়ে নিয়ে
আসে প্রাণ
লোহার মতো গলিয়ে
ইন্ধনের মতো
জ্বালিয়ে
ঘাম দিয়ে জমি
সেচন করে
রক্ত দিয়ে
বানায় কারখানা
হাড়-মজ্জাকে
বজ্রের মতো কঠিন বানিয়ে
তার লড়াই খিদের সাথে
বন্যা ও অশুভ
সময়ের মোকাবিলা করে
রুখা-সুখা হয়ে
ঝরে পরে
জমির উর্বরতা
ধরে রাখে
যদিও থাকে জলে
টইটুম্বুর মেঘবাদলের মতো
তবুও আজীবন
থাকে তৃষ্ণার্ত
যদিও তারা আনাজের
মজুদ্দার
তবু খেতে পায়
না পেট ভরে
না পরোয়া প্রাকৃতিক
প্রভাবের
না ভয় মরণের
ভালোবাসা তো
ওদের ভাগ্যে লেখা নেই
ওরা জানেই না
আদর কী সে!
পাহাড়ের মতো
অটল
প্রাচীরের মতো
সোজা
সব সমস্যাই
ওদের
সব দুঃখ যেন
ওদেরই
এমন পাগলের
নেই কোন নাম
হয় না কোন
চর্চা কোথাও
ধারালো অস্ত্রের
মতো
সব সংকট, সব
মুস্কিল থেকে
রক্ষা করে সমস্ত
জগৎ
না কোন চাহিদা
না কোন ইচ্ছা
ওরা শুধু চায়
জীবন
আর মরতে চায়
তাদেরই জন্য
যাদের স্বপ্নে
অস্তিত্ব নেই ওদের
ভুল করেও
ধরিত্রী মায়ের
সবচেয়ে শক্তিশালী
এই সন্তান নিজেকে
উৎসর্গ করে
পৃথিবীর আবর্তনের
জন্য
সূর্যোদয়ের
জন্য
চলমান জীবনের
জন্য
বিগত হাজার
বছরে
পৃথিবীর এত
উন্নতি তবুও
এই পৃথিবীর
ভার ঠেলে চলেছে সে এখনো
সূর্যের আলো
পৃথিবীতে নামিয়ে এনে
মেঘ ছেঁকে বৃষ্টি
এনে
মাটির স্বাদ-গন্ধকে
প্রাণরসে ভরে
দিতে
পৃথিবীর চারদিকে
নিজেকে জমাট
বাঁধাচ্ছে, গলাচ্ছে
বাষ্প হয়ে
উধাও হচ্ছে
অথচ পৃথিবী
জানেই না তাকে
কী আশ্চর্য!
উত্তরাধিকার
গান্ধী'জির
মৃত্যুর পর
তাঁর চশমাটি
পেলো
অন্ধ জনতা
ঘড়ি নিয়ে
গেলো
বিদেশী
ধুতি ও মতবাদ
বা যুক্তিবিচার
যা কিছু পুড়ে
খাক হলো চিতার আগুনে
গান্ধীবাদী'রা
পেলো রাজঘাট
প্রতিষ্ঠানগুলো
তুলে নিলো আত্মজীবনী
আর লাঠিটি
-
কব্জা করলো
নেতারা
যা দিয়ে শাসন
করছে দেশ
গান্ধীজির মতামত
না নিয়েই
গান্ধীজিকে
আমরা ভাগ করে নিয়েছি
নিজের নিজের
পছন্দসোই
মৌনতা
মরার ঠিক আগে
সে যদি একবার
চিৎকার করতো
তাহলে হয়ত
বেঁচে যেতো
শুধু বেঁচে
থাকার জন্যই
সে সারাজীবন
শুধুমাত্র চুপ থাকলো
মাটি
(১)
মাটিকে ছোঁয়
সেভাবেই
যেভাবে সুগন্ধ
ছুঁয়ে থাকে ফুল
যেভাবে আলো
ছুঁয়ে থাকে উজ্জ্বলতা
যেমন করে শীতলতা
ছুঁয়ে থাকে বাতাস
আর জলকে ছুঁয়ে
থাকে তরলতা
মাটি
ঠিক সেভাবেই
ছুঁয়ে থাকে মাটিকে।
(২)
মাটিকে না পোড়াতে
পারে আগুন
না জল গলাতে
পারে
না বাতাস শুকিয়ে
দিতে পারে
অগ্নি, বায়ু,
জল
মাটির সাথে
মিশে
শুরু হয় সৃজন
যেমন
মানুষ পুরনো
বস্ত্র
ত্যাগ করে নতুন
বস্ত্র
ধারণ করে
ঠিক তেমনি
মাটি ধারণ করে
বৃক্ষ, পশু,
পাখি,
মনুষ্য দেহ
তফাৎ শুধু কাম,
রূপের
সত্য তো শুধুই
মাটি।
(৩)
হরপ্পা'তে পাওয়া
গেছে
একটি মাটির
নারী মূর্তি
মূর্তিটি মাটির
গহনা পরিহিতা
পাঁচ হাজার
বছর আগের মানুষও
জানতো
নারী অথবা গহনা
অত্যন্ত - শুধুই
মাটি।
(৪)
ভাট্টির আগুনে
মাটি
জ্বলে না
শুধু নতুন রূপ
ধারণ করে
আর নতুন রং
আগুন শুধু
মাটিকে আকার
দেয়।
(৫)
মাটি হয় বিভিন্ন
রঙের
লাল, কালো,
হলুদ ও সাদা
মানুষও হয়
এত রঙের
রং তো বলে শুধু
রঙেরই কথা
সত্যি তো শুধুই
মাটি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন