বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

সোনালি বেগম

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৮



তাঁর সাথে দেখা হয় যদি

শিবালিক পাহাড়ে হরিয়ানার একমাত্র হিলস্টেশন মোরনি হিলস পৌঁছে গেলাম আমি রিমা নার্গিস। চারধারে পাইন গাছের বন। পাহাড়ের ওপরে কয়েকটি ছবির মতো আধুনিক রিসর্ট নজরে এল। মোরনি পাহাড়ে এই সময়টা মায়াময় হয়ে উঠছে ক্রমশ। কিন্তু-কিন্তু করেও কেন যে এখানে পৌঁছলাম জানি না। কয়েকশো বছর আগে মোরনির রানি এই কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে হরিয়ানার পর্যটন বিভাগ সেই কেল্লা সংস্কার করে পিকনিক ও বিনোদনের ব্যবস্থা করেছেন।

মোরনি পাহাড়ে অসামান্য সূর্যোদয়ের ছটা দেখলাম। এই নৈসর্গিক শোভার মাঝখানে একটা বিরাট প্রশ্নচিহ্ন ছুঁয়ে থাকল আমাকে। বড় এবং ছোটো টিক্করতালের জলরাশি সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে। উনি অর্থাৎ শ্রীঅমল দেব কেন যে এরকম প্রস্তাব রাখলেন, ভাবতেই পারছি না। মিলছে না, মিলবে না এ যোগ অথবা বিয়োগ।

সামনেই রেস্তোরাঁ কাম ক্যাফেটেরিয়া। শরীরকে ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে খুব। জীবন নয়, মৃত্যুই শ্রেয় আমার। এই চরাচর কোথায় যেন হারিয়ে যাবে তখন। সেদিন উনি প্রোপোজ করে বসলেন আমাকে। একদমই অহেতুক বলে মনে হল আমার। ওনার মতো গুণী মানুষ জীবনে কম দেখেছি। সব সময় শ্রদ্ধার আসনটি পেতে রেখেছি ওঁর জন্য। যদিও সব সম্পর্কেই শ্রদ্ধা থাকে, মানি। কিন্তু ওঁর স্ত্রী,  কন্যার জন্য একটা কষ্ট অনুভব করলাম। ওনার এত একাকীত্ব কেন, জানি না।  একজন সৃষ্টিশীল মানুষ তার কাজ নিয়ে মগ্ন থাকতে থাকতে বুঝি এরকম হয়! আমার মতো একজন সাধারণ মেয়ে, যে দিনরাত এক করে একটি কোচিং সেন্টার চালায়, দিন শেষে হয়তো রিক্রিয়েশন বলতে টিভির চ্যানেল সার্চ করা কিংবা ভার‍্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ফেসবুক টুইটার।

উনি পাহাড়ের মতো বিশাল মাপের মানুষ, একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। হঠাৎ-ই আমার পাহাড় দেখার সাধ হল। মোরনি হিলের ছায়ায় লেকের জল সবুজ হয়ে উঠছে ক্রমশ। প্যাডেল বোটে তৎপর হতেই টিক্করতাল ও মোরনি হিলস প্রাণবন্ত হয়ে উঠল।

ক্যাফেটেরিয়ায় কফির মাগে চুমুক দিয়ে অবশেষে উঠে পড়লাম গাড়িতে। এরপর নিউদিল্লি অভিমুখে এই যাত্রা চলতে থাকল।

বিখ্যাত চিত্রশিল্পী সেজানের ল্যান্ডস্কেপে বিশাল স্পেস ধরা পড়ছিল -- সেজানের প্রথম দিকের ছবিতে ঘড়ি ও বইয়ের তাক মনে হয় সময় ও চিরন্তনতার প্রতীক হয়ে জড়িয়ে যেতে থাকে আমার চেতনায় আমার মননে।            

 


৪টি মন্তব্য: