আমার জীবনে উত্তম-সুচিত্রা
(এক)
আমাদের
পরিবারে মূলত দেখা হতো ইংরেজী ছবি। বাংলা ছবির ব্যাপারে উত্তম-সুচিত্রা এবং
সত্যজিৎ রায়, দু’পক্ষই ছিলেন ব্রাত্য! হাসির ছবি হ’লে দেখতে যাওয়া হতো, এবং পরবর্তীকালে ‘পুরনো দিনের ছবি’ হ’লে,
অর্থাৎ প্রধানত কানন দেবী অভিনীত ছবি।
উত্তমকুমার
একটি
লাল বাঁধানো খাতায় মা-বাবা-দাদা মিলে আমার জন্ম থেকে ১৯৬৫ সাল অবধি আমার বিভিন্ন
কীর্তিকলাপ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তার থেকে জানতে পারছি যে, মজার কথা, আমার প্রথম
দেখা বাংলা ছবি কিন্তু উত্তমকুমারেরইঃ ৩০শে জুন ১৯৬০-এ মুক্তিপ্রাপ্ত সখের চোর,
যা আমায় দেখতে নিয়ে যাওয়া হয় ১৮ই জুলাই তারিখে, সম্ভবত কালীঘাট অঞ্চলে অধুনালুপ্ত
ঊজ্জ্বলা প্রেক্ষাগৃহে। বোধহয় ‘হাসির ছবি’ বলেই সপরিবারে যাওয়া হয়েছিল। তখন আমার
বয়েস ৩ বছর। সাম্প্রতিক ছবিটি আমার
শ্যালকের কল্যাণে কম্পিউটারে দেখেছি। ইংরেজী ভাষায় কৌতুক রচনার সম্রাট পি জি
উডহাউসের A Gentleman of Leisure (বিকল্প নাম The Intrusion of Jimmy) উপন্যাসের
মোটামুটি গ্রহণযোগ্য একটি রূপান্তর। মুখ্য চরিত্রে উত্তমকুমার যথারীতি মুগ্ধ
করেছেন। নায়িকা (বাসবী নন্দী)-র সঙ্গে তাঁর পরিণয়ের পথে দুই বাধা হিসেবে, নায়িকার
বাবা (কমল মিত্র) আর নায়িকার ভগ্নীপতি (ছবি বিশ্বাস) তো দুজনেই তুখোড় অভিনেতা।
এছাড়া সখের চোর উত্তমের পাশাপাশি পেশাদার চোর ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপভোগ্য অভিনয়
করেছেন।
এরপর
সত্যজিৎ ও উত্তম একসঙ্গে আমার সিনেমা-দেখার ভুবনে আবির্ভূত হন ১৯৬৭ সালে, চিড়িয়াখানা’তে
(ভবানীপুরে অধুনালুপ্ত পূর্ণ হলে)! বুঝতেই পারছেন কেন এই ছবি দেখার অনুমতি
মিলেছিলঃ হাসির না হ’লেও, নিদেন গোয়েন্দা কাহিনী যে! আর প্রথম সজ্ঞান-দর্শনেই (সখের
চোর-এর কিছুই মনে নেই, ছবিটি দেখার কথাও এই কয়েকদিন আগে লাল খাতাটি ঘেঁটে
জানতে পেরেছি) উত্তমকুমার আমাকে অভিভূত করেছিলেন! অথচ, তাঁর বা সত্যজিতের
অতি বড় ভক্তও দাবী করবেন না যে দু’জনের শ্রেষ্ঠ ছবিগুলির মধ্যে চিড়িয়াখানা পড়ে! এরপর
উত্তমকুমারকে দেখেছি যথাক্রমে চিরকুমার সভা (১৯৫৬ সালের ছবি, পার্ক
সার্কাসের ডন বস্কো স্কুলে বিশেষ প্রদর্শনী, সম্ভবত ১৯৬৯-এ) ও ধন্যি মেয়ে (ঊজ্জ্বলা,
১৯৭১) ছবিতে। প্রথম ছবিটিতে উত্তমকুমারের অভিনয় সর্বজন-প্রশংসিত, যদিও সেই অপরিণত
বয়েসে তা তেমন করে বুঝিনি।। অবশ্য খুব মজার লেগেছিল তাঁর ‘পূর্ণ’ চরিত্রটি। আর
ছবিটি ভালো লাগার প্রধান কারণ একের পর এক রবীন্দ্রসঙ্গীত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়,
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং পূরবী, তখন চট্টোপাধ্যায়-এর কণ্ঠে, তার সঙ্গে নীতিশ, জহর
গাঙ্গুলী আর অনীতা গুহের অভিনয়।
১৯৭৩/৭৪
সালে বিজলীতে দেখেছি পুনর্মুক্তিপ্রাপ্ত ১৯৫৯ সালের ছবি ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’। এটি
আমার বড় পর্দায় দেখা উত্তমকুমার অভিনীত পঞ্চম ছবি। এখানে উত্তমকুমার গতানুগতিক
‘রোম্যান্টিক’ নায়ক কিন্তু নন। থিরুমল প্রেমে মুগ্ধ হয়ে গৌরী(?)কে নিজের সঙ্গে
ঘরছাড়া ভবঘুরের জীবন যাপন করতে বাধ্য করেছে। ফলে গৌরীর কপালে জুটেছে নারীর পক্ষে
যা চরম লাঞ্ছনা, তাই। হিংলাজের তীর্থযাত্রীদের দলে পড়ে পথের কষ্ট আর তারপর
উদভ্রান্ত গৌরীর প্রত্যাখ্যান তাকে করে তুলবে উন্মাদ। সাময়িক ভাবে প্রকৃতস্থ হয়েও
সে আবার পাগল হয়ে যায়, শেষে হিংলাজের ফুটন্ত কুণ্ডে করে আত্ম-বলিদান। এ এক বিচিত্র
চরিত্র-চিত্রায়ন!
মূল
আকর্ষণ ছিল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে বাংলা গান ছাড়াও সংস্কৃত শ্লোকোচ্চারণ।
ভ্রমণ-কাহিনি হিসেবে, আমার দেখা ছবিগুলির মধ্যে, সবচেয়ে ভাল লেগেছে ১৯৭২-এ
মুক্তিপ্রাপ্ত হীরেন নাগ পরিচালিত ‘বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা’। ‘হিংলাজে’র ওপর প্রভাব ছিল ১৯৫২ সালের নিউ
থিয়েটার্সের যুগান্তকারী ছবি ‘মহাপ্রস্থানের
পথে’র, যে ছবি দেখব আরও কয়েক বছর পর রবিবার সকালের বিশেষ প্রদর্শনীতে, বসুশ্রী
সিনেমায়। ‘হিংলাজে’র শুরুতেই শিহরিত হয়েছিলাম হেমন্তকণ্ঠে শ্লোক শুনে। দু’টি
অনবদ্য বাংলা গান তো ছিলই (‘তোমার ভুবনে মা গো এত পাপ’ আর ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’)
আর ছিল দু’বার দীর্ঘ – স্তোত্রগান নয় – শ্লোকপাঠ। এর মধ্যে ‘হে চন্দ্রচূড়’ নামক
শিবস্তোত্রটি ‘মহাপ্রস্থানের পথে’তে দারুণভাবে গেয়েছিলেন পঙ্কজ মল্লিক,
অন্যান্যদের সঙ্গে। তাই হেমন্তর ‘পাঠ’ তুলনায় ম্লানই মনে হয়েছিল। আমার মতো
হেমন্ত-পাগলেরা আরও একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে থাকবেনঃ ছড়িদার-চরিত্রে অনিল
চট্টোপাধ্যায়ের মুখেই ছবির দুটি বাংলা গান আর শ্লোক। তার ওপর, প্রথম আবির্ভাবে তার
মুখে হেমন্তকণ্ঠে হিন্দি ‘নাগিন’ ছবির সেই বিখ্যাত গানের প্রথম কলি – ‘মন ডোলে
মেরা, তন ডোলে মেরা’! আরেকটা কথাঃ
বয়সন্ধির সময় এই ছবিটি বাবা-মার সঙ্গে বসে দেখা বেশ অস্বস্তিজনক লেগেছিল। নায়িকা কুন্তী (সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়) ধর্ষণের শিকার,
তীর্থযাত্রীদের মধ্যে পাহাড়ী সান্যাল অভিনীত চরিত্রটি এবং আরেকজন অসংযত যৌনকর্মের
গ্লানিতে আক্রান্ত! যথারীতি বাবা-মা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন, বাবা বিশেষ করে
ছবির সঙ্গীতের উৎকর্ষ স্বীকার করেও আমার হেমন্তর গান শোনার প্রতি ‘লোভ’ কে সম্বরণ
করার কথা বলেছিলেন।
১৯৭৬
সালে, বাবা অবসর-গ্রহণ করার পর, পার্ক স্ট্রীট অঞ্চলে কোম্পানীর ফ্ল্যাট ছেড়ে আমরা
উঠে আসি ‘সল্ট লেক’, এখন বিধান নগরে, নিজেদের বাড়িতে। সিনেমা দেখতে সেই মধ্য কলকাতা ভরসা, ইংরেজী ছবির জন্যে!
আর যেহেতু বন্ধু-বান্ধব সব দক্ষিণ
কলকাতার বাসিন্দা, তাই বাংলা ছবি দেখতেও সেই চেনা ভবানীপুর! হাতীবাগান-শ্যামবাজার
তখনো চেতনার বাইরে! ১৯৭৭ সাল। গেছি লেক মার্কেটে মাসীমার বাড়ি। ভাবলাম, এই সুযোগে ইন্দিরায় দেখব অগ্রগামী
পরিচালিত ‘স্বাতী’। কারণ,
ছবির সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানে
তাঁর গলায় গান থাকার সম্ভাবনা! আর, ১৯৭২ সালে প্রথম হেমন্তকে চাক্ষুষ করার পর আমি
এতদিনে হয়ে উঠেছি একনিষ্ঠ হেমন্ত-পূজারী! পাকড়াও করলাম ম্যাডক্স স্কোয়ারের পাশে
থাকা ইস্কুলের বন্ধুকে। সে তো ‘স্বাতী’ শুনেই “রে রে” করে উঠল। যে ছবির উৎস-কাহিনীর
নাম ‘নেকী’ তা’ সে কিছুতেই দেখবে না। আমাকে বগলদাবা করে সে হাজির ইন্দিরার ঠিক উল্টোদিকে বিজলীতে, যেখানে
তখন চলছে ‘আনন্দ আশ্রম’। আমি গজগজ করছিঃ কোথায় হেমন্ত, আর কোথায় শ্যামল মিত্র-কিশোরকুমার! অবশ্য,
ততদিনে ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ গানটা শুনে মন্দ লাগে নি! প্রথমার্ধে উত্তমকুমারের বেশ বয়েস হয়ে গেছে, আর শরীরে
মেদের পরিমাণও চোখে লাগছিল! কিন্তু, বিরতির ঠিক আগে, যখন মৃতা স্ত্রীর পাশে হাঁটু
গেড়ে বসে উত্তম কাঁদছেন, বন্ধুটি খোঁচা মেরে বলল, “কি অভিনয় দেখেছিস?” নিমরাজি হয়ে উত্তর দিলাম, “হুঁ!” কিন্তু বিরতির পর বয়স্ক
অমরেশকে (উত্তম-অভিনীত চরিত্রের নাম) দেখে আমি বাক্যহারা!
আমাকে
জোর করে ‘আনন্দ আশ্রম’ দেখানোর পেছনে কাহিনীটা পরে জেনেছিলাম। শুধু ‘নেকী’র প্রতি
অনীহা নয়! আমার বন্ধুবর আগে একদিন ছবিটি দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু বিরতিতে পেট মোচড়
দেওয়ায় তাকে বাড়ি ছুটতে হয়! তাই আমাকে নিয়ে পুরো ছবি দেখা!
‘আনন্দ আশ্রম’ যতদূর জানি, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘তিন পুরুষ’ কাহিনী অবলম্বনে তৈরি, যেটি
নিয়ে ১৯৪০ সালে নিউ থিয়েটার্স করেছিল ‘ডাক্তার’ ছবি, ঠিক ‘আনন্দ আশ্রম’এর মত বাংলা এবং হিন্দিতে।
অনেক পরে নন্দনে ‘ডাক্তার’ দেখে
মনে হয়েছে যে এক উত্তমকুমার (এবং কিছুটা শর্মিলা ঠাকুর)কে বাদ দিলে ১৯৭৬-এ
পুনর্নির্মিত ছবিটি অনেকটাই হতাশ করেছে। অমরেশের কঠোর পিতার চরিত্রে নটসূর্য
অহীন্দ্র চৌধুরী অশোককুমারের চেয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে, বিশ্বস্ত কিন্তু সহানুভূতিশীল
ভৃত্যের রূপে অসিত সেন ১৯৪০-এর অমর মল্লিকের ধারে-কাছে যেতে পারেন নি, এবং তৃতীয়
প্রজন্মের জ্যোতিপ্রকাশ ও ভারতী দেবীর পাশে রাকেশ রোশন একরকম, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়
অসহ্য। বাঙালিদের
নমস্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পঙ্কজকুমার মল্লিক মুখ্য চরিত্রে ছবির সুরকার
হিসেবে একাধিক অবিস্মরণীয় গান গেয়েছেন (একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতও), কিন্তু নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ে উত্তমকুমারের
সমতুল্য তাঁর আগে কেউ ছিল না, তাঁর পরেও কেউ আসে নি। উৎপল দত্তও খুব উপভোগ্য অভিনয়
করেছেন। কিন্তু, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে, উত্তমকুমারকে বাদ দিলে ছবির আবহাওয়ায়
কোনরকম বাঙালিত্বের
অস্তিত্ব নেই বললেই চলে! আর শক্তি
সামন্ত খানিকটা ইচ্ছাপূরণের পথে হেঁটেছেন কঠোর
পিতা ও মুক্তমনা পুত্রের মিলন দেখিয়ে। ‘ডাক্তার’
ছবির শেষে এই সুখ-সমাপনের অভাব এবং নিজের পূর্বপুরুষের
তৈলচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে অহীন্দ্রবাবুর মর্মস্পর্শী পরাজয় স্বীকার অনেক বেশী
স্মরণীয়।
১৯৮২তে আমি প্রথম চাকরি পাই, যতীন দাস পার্কের লাগোয়া শ্যামাপ্রসাদ সান্ধ্য কলেজে (ভোরে যোগমায়া, দিনে আশুতোষ)। তখন কলেজের একদিকে বিজলী, ইন্দিরা, ভারতী (আর নেই), পূর্ণ (আর নেই), অপর পাশে বসুশ্রী আর ঊজ্জ্বলা (আর নেই)। কলেজের সময় সোম থেকে শুক্র বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৯টা, শনিবার যতদূর মনে পড়ে ৩:৩০ থেকে ৬:৩০। অর্থাৎ দুপুরের শো দেখে, বা দেরীর দিকে ক্লাস থাকলে ম্যাটিনী শো দেখেও অনায়াসে কলেজে ঢোকা যায়! জ্যেষ্ঠ সহকর্মী, বাংলার অধ্যাপক অরূপ ভট্টাচার্যের ভাষায়, তখন আমি (বাংলা সিনেমার) ‘কোর্স কমপ্লিট’ করতে বদ্ধ পরিকর! সল্ট লেকে বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও হাতিবাগানের চেয়ে ভবানীপুরই তখন ছবি দেখার পক্ষে সুবিধেজনক।ইন্দিরায় দেখলাম ‘কুহক’, এক সাইকোপ্যাথ খুনে চোরের ভূমিকায় মহানায়ক।
ছুটি
থাকার সুবাদে আরেকদিন আমার নতুন সিনেমাসঙ্গী প্রয়াত মাকে নিয়ে ‘ডবল শো’ দেখিঃ
ম্যাটিনীতে ‘সপ্তপদী’ (ভারতী)
আর ইভনিং-এ ‘অগ্নীশ্বর’ (পূর্ণ)। মার প্রথমটি তো একেবারেই মনে ধরে নি, ‘অগ্নীশ্বর’ তবু ক্ষমা-ঘেন্না
করে সহনীয় বলেছিলেন। লক্ষ্যণীয় যে সবকটি ছবিই পুনর্মুক্তিপ্রাপ্ত, আর প্রতিটিতেই
উত্তম এবং/অথবা সুচিত্রা ছাড়া আছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
এরপর বড় পর্দায় উত্তমকে দেখেছি বিদেশে ৪ বছর পড়াশোনা করে ১৯৮৮-র দ্বিতীয়ার্ধে দেশে ফেরার পর। সম্ভবত মহানায়কের জন্মদিন উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হচ্ছিল তাঁর অভিনীত ছবি। আমার হবু-শ্যালিকার সঙ্গে শেয়ালদা’র ছবিঘরে দেখি দু’টি তপন সিংহ পরিচালিত ছবিঃ ‘উপহার’ ছবিতে উত্তম ও মঞ্জু দে পার্শ্বচরিত্র, মুখ্য ভূমিকায় বাবা-মেয়ে কানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।
‘ঝিন্দের বন্দী’তে দ্বৈত ভূমিকায় উত্তম। প্রথম দর্শনে কিন্তু নজর কেড়েছিলেন খলনায়ক
ময়ূরবাহন-রূপী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরে ছোট পর্দায় ছবিটি আবার দেখে বুঝেছি উত্তম
কোন অংশে কম যান নি, যেমন সেই দৃশ্যে যাতে রাজকুমারের ছদ্মবেশে উত্তম সৌমিত্রের
গলা থেকে পদক ছিনিয়ে নিচ্ছেন! কিন্তু দুই দিকপাল অভিনেতার কেউ বোধহয় তলোয়ার-চালনায়
পারদর্শী কোন কালেই হয়ে উঠতে পারেন নি। হলিউডের ছবিতে Stewart Granger বা Tony
Curtis-দের তুলনায় উত্তম-সৌমিত্রের দ্বন্দ্বযুদ্ধ খুবই হতাশ করেছিল! অনেক বছর পরে
উত্তম ‘বন্দী’ নামে এই একই বিদেশী গল্পের চিত্রায়নে আবার দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ণ
হবেন। সেটি আর বড় পর্দায় দেখা হয়ে ওঠেনি। ভিডিও-ক্যাসেট ভাড়া করে দেখেছি, আর
সাম্প্রতিক Amazon Primeএ এর হিন্দী ‘ভার্সান’ও দেখলাম।
তপনবাবুর ছবির চেয়ে অনেক স্থূলরুচির ছবি বটে, তবে দেখতে খুব একটা খারাপ লাগে নি!
এছাড়া,
হবু-শ্যালিকার সঙ্গে নন্দনে দেখেছি ‘বসু পরিবার’। সম্ভবত বিদেশী কাহিনী অবলম্বনে
নির্মিত এই ছবিটি মনে রাখার একাধিক কারণঃ প্রথমত, ১৯৫২ সালের এই ছবিটির আগে তোলা
উত্তমকুমারের কোন ছবিই মনে হয় আর দেখা যায় না; দ্বিতীয়ত, এই ছবিতে বোধহয়
উত্তমকুমারের অভিনয় প্রথম চিত্র সমালোচকদের প্রশংসা আদায় করে; আর তৃতীয়ত, উত্তমের
চরিত্র নায়িকাবিহীন। তাঁর বোনের ভূমিকায় সুপ্রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং হবু-
ভ্রাতৃবধূর ভূমিকায় সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, যাঁরা দুজনেই ভবিষ্যতে
পরিসংখ্যান-অনুযায়ী সুচিত্রা সেনের চেয়েও বেশী বার উত্তমের নায়িকা হবেন!
(ক্রমশ)
'মরুতীর্থ হিংলাজ'-এ সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়-অভিনীত চরিত্রটির নাম সম্ভবত 'কুন্তী'-ই, যা দ্বিতীয়বার ছবটি উল্লেখ করার সময় লিখেছি। প্রথমবার 'গৌরী' লেখা আমার স্মৃতিভ্রম।
উত্তরমুছুনHyan, charitratir nam Kunti-i
উত্তরমুছুনSishukaler kirtikalap sambalita Sei lal khatati prokasher dabi janacchi
উত্তরমুছুনকঠোরভাবে সম্পাদনার পর। অনেক কিছুই লোকচক্ষুর অযোগ্য।
মুছুনচমৎকার এক স্মৃতিকথন! অভিনন্দন।
উত্তরমুছুন