কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৬ |
হীরালালের ‘ধুরখেল’
গায়ক লাকি আলির সেই গান শোনা যাচ্ছে ‘এক পল কা জীনা, ফির তো হ্যায় জানা...’
এক বছরের মধ্যে কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ওয়েভ যেমন ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, প্রবাসী মজুরদের মহাপলায়ন-২-ও শুরু হয়ে গেছে। শুধু তফাৎ এই যে, এবার প্রবাসী মজুরদের
পদযাত্রা নয়, দিল্লির রেলওয়ে স্টেশন এবং বাসস্ট্যান্ডে এদের ভিড় উপছে পড়ছে।
মানুষের ধৈর্য ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে। সাধারণ মানুষের হাতে কাজকর্ম প্রায় নেই বললেই চলে। তাহলে সংসার চালাবে কীভাবে, প্রশ্নচিহ্ন হয়ে বুকে বিঁধে যাচ্ছে।
প্রবাসী মজুর হীরালাল, তার বউ গুড়িয়া আর তাদের চার বছরের ছেলে গপ্পু ছুটছে। গন্তব্য দিল্লি ও গাজিয়াবাদের বর্ডারে আনন্দবিহার বাসস্ট্যান্ড। যাবে বিহারের দরভংগা। মহামারীর অনন্ত যজ্ঞে মানুষ আহুতি দিচ্ছে। সঙ্গে শুকনো রুটির প্যাকেট নিয়েছে হীরালাল। গুড়িয়ার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে খুব। সঙ্গে জ্বর। ‘করোনা হুয়া ক্যায়া?’ গুড়িয়া হাঁপাচ্ছে। ‘ইস বার ঘর জা পাঊঁগী ক্যায়া?’ অসংখ্য প্রশ্নচিহ্নে ক্ষতবিক্ষত গুড়িয়া। হীরালালের কাঁধে গপ্পু।
১৪ ও ১৫ এপ্রিল মিথিলাবাসীর প্রসিদ্ধ লোকপর্ব ‘জুড় শীতল’, এবার কোভিড-১৯-এর জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। দিল্লি, গাজিয়াবাদ, নয়ডা-য় বসবাসকারী মিথিলাবাসীরা এ প্রবাসেও বেশ ধূমধাম সহকারে ‘জুড় শীতল’ উদযাপন করে থাকে। প্রকৃতির পঞ্চভূত অর্থাৎ পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ-এর সংরক্ষণের পর্ব এই ‘জুড় শীতল’। গাছ-গাছালির দেখভাল, তাদের গোড়ায় জল-দেওয়া, ঘরের বয়ঃজ্যেষ্ঠ মহিলারা ছোটোদের মাথায় জল ছড়িয়ে শীতলতা দেন, আশীর্বাদ দেন। এই উপলক্ষ্যে ‘ধুরখেল’-ও হয়। ‘ধুরখেল’-এর জন্য একে অপরের উপর মাটি ছুঁড়ে ফেলা হয়, যেমন হোলিতে রঙ নিয়ে খেলা হয়।
হীরালাল প্রখর রোদে রাস্তার ধার থেকে মুঠো মুঠো ধুলো উঠিয়ে নেয়। ‘ধুরখেল’-এর জন্য মনটা ছটফট করে ওঠে তার। ঠিক তখনই বিশাল জনস্রোতে গপ্পু আর গুড়িয়াকে কোথাও দেখতে পায় না সে।
বৈশাখের কাঠফাটা রোদে ফেটে চৌচির রাস্তাঘাটে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, ছত্তীসগড়, উড়িষ্যা-র প্রবাসী মজুরদের পদধূলি উড়তে থাকে বাতাসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন