কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৬ |
নাম
বন্ধু : কী করছিস রে? বসে বসে একা? হরিনাম গাইছিস? এমন কিছু বয়েস হয়নি তোর যে হরিবোল গাইতে হবে। বাহাত্তরে ধরুক। তারপর দেখা যাবে। হুঁহ যত্তসব বুজরুকি।
আমি : তোর নাম তো হরি, হরিপ্রসাদ। তোরই নাম জপছিলাম।
বন্ধু : ভ্যাট শ্লা সক্কাল সকাল গ্যাঁজা মারিস না তো? ভাল্লাগে না। এই নামের জন্যে তিনটে চাকরিতে ফায়ার হয়ে গেছি। এই নামের গুণে কোনও মেয়ে আমার কাছে ঘেঁষে না। বলে তুই বোষ্টম, তুই বিহারী, তুই হ্যারি খ্রিস্টান। শালা এই নামের কারো কিছু উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। কোন বাঞ্চোত যে আমার নাম রেখেছে!
আমি : তোর বাবা ছাড়া কে তোর নাম রাখতে যাবে? তুই হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার নাম জানিস না? রাজা হরিশ্চন্দ্র?
বন্ধু : ও সব বকওয়াস। আমার নিজের নাম মনে করলে চোখের সামনে অর্ধ উলঙ্গ কতকগুলো উন্মাদের ছবি ভেসে ওঠে। খোল করতালে ধ্বনিদূষণ, পায়ের দাপটে ধুলোয় বাতাস হলুদ, একঘেয়ে বিরক্তিকর একস্ট্যাসি হরিবোল হরিবোল হরিবোল হরিবোল...
আমি : ওই তোদের কী বলে, ডি জে, হাই পিচড সিক্স চ্যানেল স্টিরিও, খুব ভালো না? উদোম নাচ, কামোদ্দীপক, বুকের হাড় ভাঙা বাদ্য মৃত্যুশয্যায় মানুষকে পটল তুলতে হেল্প করে? যার অনিদ্রা সে যে কত শাপ শাপান্ত করে। ঘুম হারাম হয়। আচ্ছা তোর রাতে ঘুম হয়তো?
বন্ধু : প্রায়ই মাঝরাতে উঠে যাই। ঘুম আসে না, খুব কষ্ট হয়, নিজেকে শেষ করতে ইচ্ছে হয়, আর তখন নিজের নাম মাথার ভিতরে আপনা আপনি চলে আসে। কখন যে ঘুমিয়ে যাই...! জানি এসবের কোনো মানে হয় না। ধুউর বোগাস।
আমি : (দীর্ঘশ্বাস) তুই অনেক ভাগ্যবান। কিন্তু নিজেকে এখনো চিনলি না রে? তবে জানি না কেন এমনই হয় জানিস? কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন। যার নাম সুবাস সে সেনেটরি সাফাই মিস্ত্রী। আমার নাম প্রশান্ত, আমার দুনিয়াভরের টেনশন।
বন্ধু : (বিভ্রান্ত) মানে... তুই বলছিস আমার নামটা ভালো? মানে এমনভাবে কেউ তো আমাকে বলেনি... তাই। কিন্তু সত্যি বলছি, অন গড, আমি যখন হেল্পলেস হয়ে পড়ি, মনে হয় এ জীবন আর রাখবো না। মরতেই যাবো... এমন সময় আয়নাতে নিজেকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে। দেখি আর দৃষ্টির ভিতর কে যেন ঢুকে পড়ে। শরীরের ভিতরের সব কল কবজা নেড়ে দেয়, আর ফিসফিস করে ডাকতে থাকে, হরি হরি হরি হরি...। আমার দেহমন কুউউল হয়ে যায়। আমার আর মরা হয় না। নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন