কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৬ |
অশোক তাঁতী
শহরটা কুয়াশা আর বৃষ্টিতে ঢাকা পড়েছে।
প্রথমে মনে হয়েছিল ধানের ক্ষেত বুঝি একটানা দিগন্ত পর্যন্ত ছুটে গেছে। কিন্তু খানিকটা দূর যাওয়ার পর দেখা গেল ধানবন শেষ। তারপর শুধু জল আর জল। কাচের মত জল পারাপারহীন সমুদ্র হয়ে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে। আর এলোমেলো অস্থির বাতাসের কারণে জলের ওপর ছোটো ছোটো অবিরাম ঢেউ। এদিকে জলের ওপরে রাশি রাশি পদ্মপাতা ভাসছে। ঢেউয়ের দোলায় সেগুলোও বেশ দুলদুল করে দুলছে। আছে শাপলা, নল-খাগড়া, জল-ঘাস, ঝাড়ওয়ালা ধঞ্চে আর কালো মুত্রার ঝোপ। আর আছে বউন্যা গাছ,
কাউ ফলের গাছ, লাল ফুলে ভরা মান্দার গাছ। আকাশ যেখানে ধনুরেখায় মিলেছে, সারি সারি তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে। সমস্ত চরাচর নিস্তব্ধ, নিঃঝুম! শুধু ঢেউয়ের ছলাৎ-ছল্…
প্রাচীন বাংলা ভাষার আদি লেখক মৎসেন্দ্রনাথ চন্দ্রদ্বীপের
(বাখরগঞ্জ জেলা)
অধিবাসী ছিলেন। তিনি ৬৫৭ খৃষ্টাব্দে নেপালের রাজা নরেন্দ্রদেবের সভায় উপস্থিত হন। মৎসেন্দ্রনাথের শিষ্য জালন্ধরি-পা, তাঁর শিষ্য কাহ্নপা বা কানু-পা সোমপুরী বিহারে খৃষ্টীয় ৭০০ থেকে ৭৫০ এর মধ্যে তাঁর গ্রন্থ রচনা করেন। মৎসেন্দ্রনাথের চার চরণ-যুক্ত এবং কাহ্ণ-পার তেরোটি চর্যাগান পাওয়া গেছে। বাংলা সাহিত্যে এইগুলিই সর্বপেক্ষা প্রাচীন গ্রন্থ।
কবি ভাবছেন, অপরাধ তাঁরই। ঠিকভাবে ঠিকানা লেখা হল না, ঠিকভাবে গড়েও তোলেননি দেশের কবিতা, অথচ নীরবে সরে গেলেন একান্ত নিভৃতে। কিন্তু কাকে বলে দেশের কবিতা, কাকে বলে কবি লেখক? সে কি কেবল লড়াইয়ের উস্কানি–জাগানো ফুসফুসের শক্তি পরীক্ষা? তা যদি হত তবে কমিউনের ছেলেদের কাছে অল্প হেসে লেনিনকে বলতে হত না, “মায়াস্কভস্কি! কিন্তু আমার তো মনে হয় পুশকিন আরো ভালো...”
দেশের কবিতা লিখব ভেবে এই ভুলটাই ঘটে যায় বারবার। আমরা একটা ধরাবাঁধা নকশার মধ্যে ঠেসে দিয়েছি লেখাকে। লেখার মধ্যে যেন তেন প্রকারেণ বলতে হবে - আহা! তোমার এই অসহ্য কষ্টের একদিন শেষ হবেই। এত যে নিত্য নতুন লেখার কথা বলি আমরা সে কি শিল্পের জন্য, না বিষয়ের জন্য? দেলাক্রোয়া বিষয়ে লিখতে গিয়ে বোদলেয়ার একবার বলেছিলেন, “আমাদের যুগধর্ম হল এই যে, শিল্প মাধ্যমগুলি পরস্পরকে নতুন শক্তি দিতে চায় এখন। তাই মালার্মে প্রায় রোজই যাবেন দেগার স্টুডিওয়, লোরকার নিকট বন্ধু হবেন সালভাদোর দালি, আর সেজানের ছবির বিষয়ে কেবলই লিখে যাবেন রিলকে। ঠিক সেই রকমই কলকাতার পরিবেশে আমরা দেখেছি কীভাবে যামিনী রায়ের সঙ্গে লগ্ন থাকেন বিষ্ণু দে ইত্যাদি ইত্যাদি…
বাদল ডানা মুচড়ে ধরা ঘুঘুর মত ছটফট করে। পেটে ছুরি খাওয়া রক্তাক্ত বিষণ্ণতা জেগে ওঠে তার মধ্যে… এরপর সব ঠান্ডা। শান্ত বাতাসে শুধু কৌতুহলী মেঘেদের ইতস্তত আনাগোনা… ঘুঘুজীবনের বাদল ঘুঘুর ঘুঘু জীবন। কুয়াশা কেটে উঠলে বাদল আবার বউন্যা গাছ পদ্মবিল কিংবা পুশকিন বোদলেয়ার কিংবা জালন্ধরি-পা যে কোনো একটায় প্রবহমান হতেও পারে। নোয়ার নাও কাছেই দাঁড়িয়ে…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন