শুক্রবার, ১৪ মে, ২০২১

বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়

 

কবিতার কালিমাটি ১০৬


নির্মোক বিহীন

 

জামা খুলতে বললে

আমি চামড়া অব্দি খুলে দাঁড়িয়ে রইলাম

এ এক জম্ভাট

গলার আগা অব্দি কথাদের অদ্ভুত ট্রাফিক

বীভৎস যানজট

ছালছাড়া মাংসের মুরগীর মতো

বিভ্রান্ত বিকেলে

সুন্দর জানলা দিয়ে আলো পড়ে

নতুন খাটের

নতুন বিছানা

উপুড় শুয়েছি কাল

কিচ্ছু হয় নি - কাল কিচ্ছু হয় নি

শাস্তি পাই নি - গায়ে দাগ তো অ্যালার্জি মাত্র - বহু অ্যালার্জেন

মলয় সমীরে

কী যেন বলছিলে? ফের শেষ থেকে শুরু করো

শুরু থেকে শেষ

মাঝামাঝি এসে আমি বসন্তকে বলে দেবো কৃষ্ণচূড়ার ডাল দিয়ে

ও চোখ খুঁচিয়ে যাক।

লাল ধারা ফুল মনে ক'রে

কেউ বুঝবে না

এ কাজ করতে তার যতক্ষণ ডিউটি ফাঁকি যায়

আমি তার হিসেবের খেরোর খাতায়

মায়েদের মতো ক'রে জাল সই দেবো

কী যেন বলছিলে?

কোনখানে থেমে গিয়েছিলে?

 

জম্ভাট শব্দটি বাংলা ভাষায় নেই! তাতে কী?

 

ন হন্যতে

 

কোত্থাও নাড়ি কেটে বেরোনো হল না

সুড়ঙ্গ খোঁড়া গেলো সাবধানে সেলাই লাগিয়ে

যা কিছুই থেকে যায় তারা শান্ত প্রাজ্ঞ ও স্থবির

তাহলে যে অতগুলি  সিনেমাচঞ্চল দিন ভীষণ সুন্দর

যেসব ভ্রুভঙ্গি আর ঝড়ের মতন চলে যাওয়া আলোড়ন

অকস্মাৎ ঝর্না জন্ম হঠাৎ মোহনা তার হঠাৎ উৎসার

সেগুলি কোথায় গেলো? আপনার চুপিচুপি যত প্রিয়  ডাক

তাদের বাঁচিয়ে রাখি ব্যাঙ্কের পাসওয়ার্ডে সুগোপনে ঢেকে

বসার ঘরের কাঁচে  নাছোড় বসন্ত কিছু আজো  শ্বাস নেয়

তাদের নিঃশ্বাস কাঁচে স্মরণ সর্পিল কত নক্সা এঁকে যায়

হঠাৎ চড়ুই ঢোকে জানলার পথে দুটি খড় ঠোঁটে করে

বাসনের দোকানের কাছে গেলে আজো শুধু যাকে মনে পড়ে

স্মৃতির ফর্ম্যালিন তার কিছু উপহার

এমনিই শুধুশুধু রাখে!

 

ক্ষমা রাখা আছে

 

রি-সেলের চাঁদের মুখ থেকে একটা সেলোফেন সরিয়ে নাও

ওখানে দেখো তোমার জন্য একটা ক্ষমা রাখা আছে

রাত দেড়টার সময়ে তোমার খুব খিদে পাবে

আর একটা পেইসট্রির দোকানে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা অন্ধকার দরজা খুলে যাবে

তার পাশে একটা খাতা পেনের দোকান

একটা ঝুলন্ত সাইনবোর্ড

নানামুখো পেন

সেই দোকানের পাশে একটা ঝুরোচুলো বটগাছ

বটগাছের উপরে একটা আধকাটা ঘুড়ি

ঘুড়ির একপাশে আলোছায়ার কারুকাজে নক্সা

যদি তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাও

যদি তার দিকে একবার তাকাও

দেখবে আলোছায়ার নক্সায়

তোমার জন্য একখানা ক্ষমা রাখা আছে

শহরের রাস্তায় রাস্তায় তোমার একশত অপরাধের স্তূপ

আমাকে ভালো না বাসা

আমার কাছে না আসা

আমাতে ফিরে না চাওয়া

এমন অসহ অপরাধের কষ্টে অজস্র রাগ রাগিণী

বন্ধ দোকানঘরের মধ্যে এস্রাজের বুকে বেজে ওঠে

আরো কত বাজনা বাজনদার

কভু সরোদ কভু সেতার

কভু আমীর খাঁ

কভু ত্রুটিহীন টেকো সুবিনয় রায়

শহরের বুকে অব্যর্থ ক্যাসেটে বেজে ওঠে

পায়ের নীচে পিচের রাস্তায় তার ছেঁড়া টেপের ঘূর্ণি

কতদিইন আসো নি

আমার সমস্ত কবিতায় বানান ভুল

আমার সব শিরশ্ছেদের ফতোয়ার চুড়োয়

তোমার একশত অপরাধের উপরে

পোকেমন সন্ধান কোরো

ক্ষমা রাখা আছে

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন