কবিতার কালিমাটি ১০৫ |
শূন্যতা নিয়ে তিনটে কবিতা
(১)
অস্থির বর্তমান, নিরন্তর কম্পমান,
সতেজ, নিটোল, উৎসুক,
সৃষ্টিতে
উল্লসিত, কিংবা ধ্বংসে উন্মাদ নটরাজ;
চোখের পলকে শ্লথ, ন্যুজ, শূন্য দৃষ্টি,
দিকভ্রান্ত নাবিক আর সুতো কাটা ঘুড়ি।
স্মৃতিগুলি ওলোটপালট - এবেলা ধুসর,
ওবেলা প্রখর; সম্পর্কদের নিত্য অদল
বদল, দেয়ালে ভেসে ওঠে দরোজা,দরোজা
খুললেই নদী, নদীতটে শৈশবের আঁকিবুকি;
দন্তহীনমুখে অনাবিল হাসি; গন্তব্য নেই,
অথবা গন্তব্যের ব্যাপারটাই অবান্তর যেনো;
সময় এখন উল্টো নদীর সাথে ভেসে চলা।
(২)
চারপাশে ছড়ানো অজস্র সম্ভাব্য শিল্প;
রাস্তা থেকে অল্প দূরে ইটভাটার ওপর সর্পিল
ধোঁয়া, আরো দূরে ধূসর নীল পাহাড়ের সারি
দাঁড়িয়ে থাকে মৌনি সন্তদের মতো; রাতের
আকাশে হেলান দেয়া কালচে নিঃসঙ্গ বাড়ির
ভেতর আলো ছায়ার খেলা, রহস্যের
আনাগোনা; সরাইখানায় জুয়াঘরে রাতভর
তাস পেটায় নির্ঘুম জুয়ারি; টুকরো টুকরো
চিত্রকল্পগুলো থরথর কাঁপে মুক্তির প্রতিক্ষায়,
অমরত্বের আকাঙ্ক্ষায়। আর আমি বয়ে যাই,
বয়ে যেতে যেতে যেন শীর্ণ একটি নদী; ক্ষীণ
থেকে ক্ষীণতর আমি, তাদের মুক্ত করতে
পারি না। আদিহীন, অন্তহীন সময় সুঠাম,
অবিনশ্বর, আর আমি ফুরোতে থাকি
বিনা কাজে, অকাজে; সীমাবদ্ধতার
গ্লানিতে
আকন্ঠ নিমজ্জিত উদ্বিগ্ন আমি অপেক্ষায়
থাকি এক ভয়াবহ শূন্যতার,
কোনো এক অনিবার্যতার।
(৩)
মৃত মানুষের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর
হয়, তারা ভেসে থাকে, উড়ে বেড়ায়;
প্রিয়জনের পাশে বসে থাকে শঙ্কাহীন;
তারা মৃত, তাদের সময় অশেষ, অন্তহীন;
নিষিদ্ধ গোধূলি এলাকায় তাদের বসবাস।
কাঠের দরোজাটা কি কিঞ্চিত ফাঁক হল?
কারুর ছায়া কি পড়লো, নাকি সে কল্পনা?
সেই দুটি চোখ, স্মৃতি জমা করছিল নিভে
যাওয়ার আগ পর্যন্ত; সে তো এখন ধুলো,
বাতাস, নদীতে বয়। জলে ভরে যায় দু’চোখ;
আহ্! নি:শ্বাসে ভরে নেই অজানা ঘ্রাণ।
কল্পনাতেই খুঁজে নেই সত্য যতদিন বেঁচে
থাকি, আর অস্তিত্ব বিলীন হবে যেদিন, যদি
একান্তই বিলীন হয়, তবে জেনো কল্পনা আর
স্বপ্নদের প্রয়োজন রইবে না আর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন