কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৪ |
আবরণ খোলো
দিক ভেসে যায়...। মাঘের পূর্ণ চাঁদ
আকাশ দখল করে আছে ফিনিক বাহিনী সাজিয়ে নিয়ে। কাঁপা কাঁপা কামরার ভিতরে বসে অভ্রর
সাথে খুনসুটি করে কেউ। রেল বেয়ে এগিয়ে চলে ভিখিরি। ওই নিঝুমের সাথে নিরিবিলি অনিমিখ
গল্প চলছে তার। সদ্য পুরাতন হয়েছে এবছরের একুশে দিন। তাতে কী? অভ্র এক দুরন্ত স্বপ্নচারী।
মুগ্ধ করে ফাঁদে ফেলে। ঘরের লোক, পরিবারের সদস্য - ওঃ! ধুর বাবা কী যে করো! তোমার মুখে
কি প্যাড থেকে আলো ঠিকরোয়? বোঝো না? সে ভিখিরি বোঝে হয়তো কিন্তু মানতে চায় না। চরাচরে
মাঘের চাঁদ ডাকাতি জুড়েছে। তার সঙ্গে হা রে রে রে সঙ্গৎ না হলে হয়! সে যাইহোক আমি
ওদের স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আবছায়া হীন পৃথিবীতে জ্যোৎস্না পোড়া দে ছুট ছুট সেই ভিখিরি
আর অভ্রর। সাইড আপার বার্থে একজন হিজড়ে। সময় ওকে শুধু মানুষ না ভেবে এভাবেই চিহ্নিত
করেছে। রাত বারোটা পর্যন্ত দিব্যি খোশ মেজাজে গল্প জুড়ে দিয়েছে ডুয়োতে। গুগল ডুও
দুটি মানুষকে মিলিয়ে দেয় কিছুক্ষণ। আমি তার মুখ দেখিনি। ভিখিরি কান পেতে শুনছে ওদের
কথোপকথন। ভেবে পাই না ভিখিরি কেন কান পেতে আছে। কু ঝিক ঝিক যত বাড়ে আমি নিঝুম দ্বীপের
বালিয়াড়ির দিকেই যেন চলে যেতে যেতে থাকি। বলাবাহুল্য হঠাৎ করে এমনই নতুন নতুন কোনো
না কোনো এক ভিখিরির উদয় হয় আর আমি ভিখিরি ও পারিপার্শ্বিকের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ি।
সামনের মেয়েটা হিন্দি ভাষায় তার কলিগকে
জিজ্ঞাসা করছিলো, দিনের বেলায় কি ট্রেন ছিলো না? ছিল হয়তো কিন্তু অফিস ট্যুর তাই
যারা যাবে তাদের সবার সুবিধামতো সময়ে এই শুনশান রেললাইনের জ্যোৎস্নাপোড়া বরখুরদারকেই
তারা বন্দোবস্ত করেছে। কাটুমকুটুম আজ আর নেই। বদলে কোলাজে অবন তবুও শান্তিনিকেতন। কী
বিশাল চোখের নারীর রহস্যময় স্রষ্টা আজও একমনে কোপাইয়ের তীরে।
ধরো তুমি তাকে চিনতে না পেরে চরমভাবে
ফেলে এসেছো ঐ যে দূরের ধূ ধূ অন্ধকার মাঠের বিস্তৃতিতে। ওটা পেরুলেই ফারাক্কা আসবে
তুমি জানো। ভিখিরি এবার নড়ে চড়ে বসলো। পাকুড় থেকে আজিমগঞ্জের দিকে বেঁকে যাবে ট্রেন।
আজিমগঞ্জে কি ওর কেউ থাকে? অন্য আর কোনো ভিখিরিও তো চোখে পড়ছে না যে ওর ভাই বেরাদর
কিংবা স্যাঙাৎনি হতে পারে। ট্রেন লেট হয়। গার্ড মাল খেয়ে মাঝরাতে লোক তোলে। ওদিকে
রূপোর পাতে মোড়া বিধবা মাঝরাত ঊষর মাইলের পর মাইল কাঁদছে নিরবে আছাড়িপিছাড়ি। ভিখিরির
উশখুশানি বুঝি এজন্যই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন