প্রতিবেশী সাহিত্য
গৌরব পান্ডের’ কবিতা
(অনুবাদ : মিতা দাশ)
লেখক
পরিচিতিঃ কবি গৌরভ পান্ডের জন্মস্থান উত্তর
প্রদেশের দ্রেশপুর গ্রামে। তিনি ডিডিউ
গোরখপুর থেকে হিন্দি সাহিত্যে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তাঁর
কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় - ন্য জ্ঞানোদয়, বঙ্গার্থ, পানখি,
কাঠাদেশ, দস্তাভেজ, মুক্তঞ্চল, জাঁথর, ক্রটি ওওর পাথর ইত্যাদি।
মানুষ হওয়ার জন্য আমরা নাটক করি
কুঁড়ি!
ক্ষমা করো
অকারণে চুম্বন নিয়েছিলাম
প্রজাপতি!
তোমার রং ওঠা হাতে
পাখি!
তোমার কলরব লুন্ঠন করলাম
বাতাস!
শুষে নিলাম তোমায়
আর বিষ বমন করলাম
ঘাস!
তোমায় মাড়িয়ে এগিয়ে এলাম
এখন কার কার কাছে ক্ষমা চাইব?
আমরা জানি আমাদের অপরাধ ক্ষমাহীন
তাও জানি একদিন আমাদের সবাই
করে দেবে ক্ষমা!
বছর ধরে মানুষ হওয়ার নাটক
করেই গেলাম আমরা
ও ভালোবাসা!
ও বিশ্বাস
যদি পারো তো তুমিও করে দিও ক্ষমা।
গ্রাম থেকে চলে যাওয়া মানুষ
গ্রাম থেকে বহু মানুষেরা কিছু করার তাগিদেই বেরিয়ে
এসেছিল
যা পেরেছে তাই করে ফিরেও এসেছে অনেকেই
কেউ ফিরেছে ইঁট গেঁথে, কেউ মাথায় বোঝা তুলে
বিকেলে নুন তেল ও তরকারী নিয়েও অনেকেই ফিরেছে
কিছু লোক এমনও ছিল যারা অনেক দিন পরে ফিরলো
বড় ব্যাগ, টাকা, কাপড় ও স্বপ্ন নিয়ে
কিন্তু কিছু লোক এমনও ছিলো
যারা আর ফিরলো না হারিয়ে গেলো
যারা ফিরলো না ওদের মধ্যে অনেকেই এমন ছিল
ওরা কেউ কেউ ডাক্তার, প্রফেসর, উকিল, রিপোর্টার, পুলিশ
হয়ে গিয়েছিলো তাই ওরা যেখানে গিয়েছিলো সেইখানকারই হয়ে
রয়ে গেলো
এদিকে আর যারা ফিরবে না কখনই
ওদের ফিরে আসার আশাও প্রায় শেষ মনে করে নিয়েছিল গ্রাম
ওরা মৃতদের মাঝখান থেকে উঠে ফিরে এসেছে
এরা নায়ক
এরা ছিল গ্রামের ছেলে
এখন ওরা জামাইয়ের মতই ফিরে
গ্রামের অসুখ
ডাক্তার এলো না চিকিৎসা করার জন্য
আর এই নিরক্ষর গ্রাম একটিও অক্ষর পেলো না প্রফেসর থেকে
উকিলও কোন ন্যায় দিলো না গ্রামকে
আর রিপোর্টারও জানে না গ্রামের খবর
পুলিশও চোখ রাঙায় গ্রামকে
যাইহোক যদি কখনো
ওদের দেয়া হয় কোনো সম্মান
তখন নিশ্চই চর্চার বিষয় হয়ে উঠবে এই গ্রাম
কাচের পেছনে
নারীদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ উঁকি দিচ্ছে
শাড়ি সব সাজানো রয়েছে
কাচের পেছনে
পরির মত সুন্দর ফ্রক পরে দৃষ্টি কাড়ছে
রবার ও প্লাস্টিকের পুতুলরা
লোভনীয় দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা
কাচের ওপার থেকে
বারবার ভালো খাবারের সুগন্ধ ছড়াচ্ছে
ক্ষুধার্ত বাচ্চারা ব্যাকুল হয়ে উঠেছে কাচের ওপারে
এই যাযাবর মানুষগুলি বাঁশগুলিকে
কেটে ছেঁটে তৈরি করে
কিছু সংসারের খুঁটিনাটি জিনিসপত্র
তারপর কাচের ওপার থেকে বেরিয়ে আসে সামনে
আর গ্রাহকদের জন্য প্রতীক্ষা করে
তারপর গ্রাহকদের জিনিস কেনার জন্য করে খোসামোদ
তারপর চুপচাপ তাকিয়ে থাকে
পৃথিবীকে কাচের পেছনে সংকুচিত হতে
কাচের বেরিয়ে আসা মানুষগুলির হাসির শব্দ শোনে
রাতের অন্ধকারে নিজেদের তাঁবুর ভেতর শুয়ে শুয়ে তাকিয়ে
থাকে
কাচের পেছনে রাখা জিনিসগুলোর চমক
ওরা জানে এসব ওদের সাধ্যের বাইরে
কাচের পেছনের পৃথিবী
কিন্তু ওরা এ-ও জানে
এখনো আশা রাখা যায় কাচের বাইরেও
যতক্ষণ মজবুত ও শক্ত হাত রয়েছে ওদের
আর হাতে রয়েছে ধারওলা ছুরি ও বাঁশ।
একটি পড়ন্ত গাছ
যখন নিমের গাছটি উপড়ে পড়ল বাড়ির দোরে
তখন বুঝলাম
গাছের উপড়ে পড়া শুধু গাছের উপড়ানো নয়
একটি সুন্দর ভরা সংসার ধ্বংস হওয়া বা
শিকড় থেকে উপড়ে যাওয়া
দোরমুখো হয়েছিল মা রান্না ছেড়ে চুলোয়
পড়শি দৌড় দিলো সেদিকে
যেখান হতে এক্ষুনি শিশু কান্নার রোল উঠেছিল
দেয়াল ধরে ঠাকুরদা গড়িয়ে পড়েছিল মেঝেতে
আট পা দূরে চমকে উঠে পালালো কুকুরটা
কান্নায় ভেঙে পড়ল
কখনো গাছ, কখনো পাখিদের বাসা
(মা গো মা, চেয়ে দেখ রে!)
চিঁ চিঁ চুঁ চুঁ’র কলরবের মাঝে
উড়ে নেমে আসে পাখি
বাসার আসেপাশে বারবার
ঘুরঘুর করে দুঃখ অবুঝ স্বরলিপিতে
আমরা বোবা ও কালার মত দাঁড়িয়ে
কখন বুঝব
কী করে বুঝব
যা বুঝে নেয় বাচ্চারা
যারা দাঁড়িয়ে রয়েছে মুখ নামিয়ে কান্না চেপে
ঝুলা ঝোলানো হত সেই গাছেই
আর ওরা সেই গাছের বুকে
লাফালাফি করত না খেয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন