সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

রবে দেসনোজ

 

প্রতিবেশী সাহিত্য               

 

পরাবাস্তববাদীদের কবিতা   

 

রবে দেসনোজ (১৯০০ - ১৯৪৫)

 

(অনুবাদ: মলয় রায়চৌধুরী)




 

চিত্রকল্পের আত্মপরিচয়

 

আমি জানোয়ার আর বোতলদের সঙ্গে বেপরোয়া লড়ে যাচ্ছি

কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্ভবত দশঘণ্টা একের পর এক চলে গেল

সুন্দরী সাঁতারু যে প্রবাল ফেনাকে আজ সকালে ভয় পেতো

প্রবালের মুকুটে পবিত্র টোকা মেয়েটির দরোজায়

আহ! কয়লা সব সময় কয়লা

আমি কল্পনা করি কয়লা স্বপ্নের ভারপ্রাপ্ত প্রতিভা আর আমার একাকীত্ব আমাকে বলতে দাও, বলতে দাও আরেকবার সুন্দরী সাঁতারু সম্পর্কে যে পপবালকে ভয়  পেয়েছিল

আমার স্বপ্নের এই ফোসলানো বিষয়কে আর সন্ত্রাসের ভয় দেখিও না

সুন্দরী সাঁতারু লেস আর পাখিদের বিছানায় আঙ্গিক বদলাচ্ছিল

বিছানার পায়ার কাছে চেয়ারে রাখা পোশাক রশ্মিতে ঝলমল করছিল কয়লার রশ্মিতে

আকাশ আর পৃথিবী আর সমুদ্রের গভীরতা থেকে যে এসেছিল পবিত্র প্রবাল  আর রেশমি কাপড়ের বিশাল ডানা সম্পর্কে গর্বিত ছিল

সারারাত যাবত তা শহরতলির কবরের দিকে শবযাত্রা অনুসরণ করেছিল

তা ছিল রাষ্ট্রদূতের নৃত্যানুষ্ঠানের শাদা সাটিন গাউন আর ফার্ন পাতার ছাপ দেয়া

তা ভয়ঙ্করভাবে জাহাজগুলোর সামনে উঠেছিল আর জাহাজগুলো ফেরেনি

আর এখন চিমনিতে গুঁড়ি মেরে ফেনার উত্তাল আর কেটলির গানের দিকে লক্ষ্য রেখেছে

এর পায়ের তীব্র আওয়াজ রাস্তায় রাতের স্তব্ধতাকে নাকডাকা ফুটপাথ দিয়ে বিরক্ত করেছিল

নাকডাকা কয়লা স্বপ্নের কয়লা মালিক কয়লা

আহ আমাকে বলো কোথায় সেই সুন্দরী সাঁতারু সেই সাঁতারু যে প্রবালকে ভয় পেয়েছিল?

কিন্তু সাঁতারু নিজেই ঘুমোতে চলে গেছে

আর আমি মুখোমুখি আগুনের সামনে আর সারারাত থাকবো অন্ধকারের ডানাঅলা কয়লাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব যে আমার একঘেয়ে রাস্তাকে তুলে ধরার জবরদস্তি করছে তার ধোঁয়ার ছায়া আর স্ফূলিঙ্গের ভয়াবহ প্রতিবিম্ব

নাকডাকা কয়লা কয়লা দয়াহীন কয়লা

 

না, প্রেম মারা যায়নি

 

না, প্রেম মারা যায়নি এই হৃদয়ে  দুই চোখে আর হাঁ-মুখে যা নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘোষণা করেছে।

শোনো, আমি যথেষ্ট চিত্রানুগ, রঙিন আর মনোহারিতা উপভোগ করেছি।

আমি ভালোবাসা ভালোবাসি, তার কোমলতা আর নিষ্ঠুরতা।

আমার প্রেমের একটাই নাম আছে, একটাই আঙ্গিক।

সবকিছু উধাও হয়ে যায়। সব মুখ তাকে কামড়ে ধরে থাকে।

আমার প্রেমের একটাই নাম আছে, একটাই আঙ্গিক।

আর কোনোদিন তোমার মনে পড়বে

এই যে তুমি, আমার প্রেমের আঙ্গিক আর নাম,

একদিন আমেরিকা আর ইউরোপের মাঝের মহাসাগরে,

আর সেই মুহূর্তে যখন রোদের শেষ রশ্মি ঝিলমিল করে

ঢেউদের আন্দোলিত চাদরের ওপরে, কিংবা ঝোড়ো রাতে

গ্রামের গাছের তলায় কিংবা দ্রুতগতি মোটরগাড়িতে,

মালেশেরবেস শহরের বীথিকায় বসন্তকালের ভোরবেলা,

এক বৃষ্টিময় দিনে,

ভোরবেলা বিছানায় শোবার ঠিক আগে,

নিজেকে বলো -- আমি তোমার পরিচিত আত্মাকে নির্দেশ দিচ্ছি -- যে

আমি একা তোমাকে বেশি ভালোবাসতুম আর তা লজ্জার কথা

তুমি তা জানতে না।

নিজেকে বলো আফশোষ করার দরকার নেই : রঁসাদ

আর বদল্যার আমার আগে দুঃখগান গেয়েছেন

বুড়ি বা মৃত যারা বিশুদ্ধ ভালোবাসাকে ঘৃণায় প্রত্যাখ্যান করেছেন।

যখন তুমি মারা যাবে

তখনও তুমি সুন্দরী আর কাম্য থাকবে।

আমি তার আগেই মারা গিয়ে থাকবো, তোমার অবিনশ্বর দেহে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ,

তোমার বিস্ময়কর প্রতিমায় চিরকালের জন্য অন্তহীন চমৎকার

জীবনের এবং শাশ্বতকালের, কিন্তু যদি বেঁচে থাকি,

তোমার কন্ঠস্বর, তোমার জ্যোতির্ময়ী দৃষ্টি,

তোমার সুগন্ধ তোমার চুলের সুগন্ধ আরও অন্যান্য অঙ্গ

আমার ভেতরে বেঁচে থাকবে।

আমার ভেতরে আর আমি রঁসাদ বা বদল্যার নই

 

আমি রবে দেসনোজ যে, কেননা আমি জানতুম

আর তোমাকে ভালোবাসতুম,

তা তাদের মতনই শ্রেয়।

আমি রবে দেসনোজ যে চায় তাকে মনে রাখা হোক

এই নোংরা পৃথিবীতে অন্য কারণে নয় কেবল তোমাকে ভালোবাসার জন্য।

 

আমি তোমাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখেছি

 

আমি তোমাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখেছি যে আর তোমাকে বাস্তব বলে মনে হয় না।

এখনও কি সময় আছে তোমার শ্বাসনেয়া দেহে পৌঁছোবার, তোমার মুখে চুমু খাবার আর তোমার প্রিয় কন্ঠস্বরকে জীবন্ত করে তোলার ?

আমি তোমাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখেছি যে আমার বাহু, আমার বুকে আড়াআড়ি রাখতে অভ্যস্ত যখন তোমার ছায়াকে জড়িয়ে ধরেছি, হয়তো তোমার দেহকে ধরার মতন নোয়াতে পারব না।

কেননা বাস্তব আঙ্গিকের সামনে যা আমাকে কুরে খেয়েছে আর শাসন করেছে কত দিন কত বছর, আমি নিশ্চিত ছায়া হয়ে যাবো।

ওহ অনুভবের মাপদণ্ড।

আমি তোমাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখেছি যে আর জেগে ওঠার সময় আমার নেই।

আমি পায়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোই  জীবনের আর প্রেমের সমস্ত আঙ্গিকের কাছে প্রার্থনা জানাই, আর তোমাকে, একমাত্র যে এখনও আমার কথা ভাবে, আমি আর তোমার মুখ আর ঠোঁট  ছুঁতে পাবো না পাশ দিয়ে চলে যাওয়া লোকের মুখ যেমন ছুঁতে পারব।

আমি তোমাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখেছি, এতো হেঁটেছি, এত কথা বলেছি, এত শুয়েছি তোমার মায়াদেহের সঙ্গে, যে আমার জন্য যেটুকু বেঁচে আছে তা হল নিজে একজন মায়াপুরুষ হয়ে যাওয়া মায়াপুরুষদের মাঝে, এক ছায়া শতগুণ বেড়ে যাওয়া ছায়া সেইসব ছায়ার চেয়ে যা ঘুরে বেড়ায় আর ঘুরে বেড়ায়, উজ্বল, তোমার জীবনের সূর্যঘড়ি ঘিরে।

 

পরীর গল্প

 

বহু সময়ের পর সময়ে

একজন পুরুষ এক নারীকে ভালোবাসতো।

বহু সময়ের পর সময়ে

এক নারী একজন পুরুষকে ভালোবাসতো।  

বহু সময়ের পর সময়ে

একজন পুরুষ ছিল আর এক নারী ছিল

তাদের যারা ভালোবাসতো তারা তাদের ভালোবাসতো না।

সে ছিল এক দিনকাল

হয়তো একবারই শুধু

একজন পুরুষ আর এক নারী পরস্পরকে ভালোবাসতো।


1 টি মন্তব্য: