সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সোনালি বেগম

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৩


টুরিস্ট গাইডের রূপকথা

আজ সকালটা লালুবাবু আর ভুলুবাবুর ঝগড়ায় কান ঝালাপালা হয়ে গেল। এমনিতে বেশ শান্ত প্রকৃতির ওনারা। আমার মনে হয় জন্তু-জানোয়ারদের কাছে মানুষ নৈতিকতার শিক্ষা নিতে পারে। যখন দুটি পাখি ঝগড়া করে, কিছুদূর ঝগড়া এগোনোর পরই একটি পাখি মাঝপথে উড়ে চলে যায়। এতো গেল স্বাধীন দুটি পাখির গল্প। ঠিক উল্টোটাই ঘটে, একই খাঁচায় বন্দি দুটি পাখির ক্ষেত্রে। তখন সবল পাখিটি দুর্বল পাখিটিকে ঠুকরে মেরে ফেলে। মানুষ কবে স্বাধীন পাখির মত ক্ষমাশীল হতে পারবে! এই যে জগৎসংসার তার উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগৎকে মনোযোগ সহকারে ভালোবাসলে নিরীক্ষণ করলে আত্মার তৃপ্তি হয়ত সম্ভব বলেই মনে হয়। আত্মবিধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার থেকে মানুষ বিরত থাকবে কবে, প্রশ্নটা জেগে থাকে। আমাদের পূর্বপুরুষদের আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল যে ব্রহ্মান্ড নিয়ে কাল্পনিক গল্প রচনার, যেমন আমরা আজ কোনো ব্যক্তিমানুষকে নিয়ে প্রায়ই বলে থাকি।

মানুষ ক্ষণস্থায়ী, শুধু পৃথিবীর চক্রপথে অবিরাম ঘুরপাক খেয়ে চলেছি। ভগ্নস্তূপের সামনে দাঁড়িয়েও অবিচল সাহসী থাকার অঙ্গীকারবদ্ধ আমরা। তাই কোনো নাগরিক উন্মত্ততা কোনো খারাপ কাজের দিকে ঠেলে দিতে পারে না কখনও। আবার এর বিপরীতও ঘটে থাকে। ভাবনাচিন্তা জনমতের প্রতিধ্বনি ভেসে আসছে। লালুবাবু আর ভুলুবাবুর ছাপোষা জীবনে শেষপর্যন্ত মৃত্যু এলেও, তাদের সিদ্ধান্ত কখনও বদলাতে পারেনি, এমনিই স্বভাব তাদের।

বিখ্যাত উর্দু কবি মির্জা গালিবের কথায় বলি যে, মানুষের ইচ্ছা কখনও শেষ হয় না বরং বাড়তেই থাকে। মানুষ ভাবে যে মৃত্যুর আগে সব কাজ সমাপ্ত করবে, কিন্তু সত্য হল যে ইচ্ছা বিনা জীবন নীরস হয়ে যায়। যেমন মৃত্যুভয় না থাকলে আরও বেঁচে থাকার ইচ্ছা আসবে কীভাবে!

এই যে সামনেই মির্জা গালিবের বিশাল হাবেলি। একদল টুরিস্টকে এই ঐতিহাসিক শহর কারুকার্যময় ইমারত ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি। গল্পগুলো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, তাদের একত্রিত করে ছড়িয়ে দিচ্ছি আমি, টুরিস্ট গাইড।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন