শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 

কালিমাটি অনলাইন / ৮৬


বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেল, এবছর অর্থাৎ ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে না। আশঙ্কাটা ছিলই মনে, তবু একটা ক্ষীণ আশা ছিল, হয়তো শেষপর্যন্ত বইমেলা হবে। কিন্তু হতাশ হতে হলো, দীর্ঘ একবছরের অধীর প্রতীক্ষা বিফলে গেল। অবশ্য না হবার কারণটাও অস্বীকার করা যায় না। বিশেষত বিগত বছরের বেশ কয়েকটা মাসে মারণ-ভাইরাস কোভিড ১৯-এর উন্মত্ততার যে ভয়ংকর রূপ ও চরিত্র প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী, তাতে খুব স্বাভাবিক কারণেই সবাই ভীত, সন্তস্ত্র ও আতঙ্কিত হয়ে থেকেছে। কত কত জীবন যে অকালেই ঝরে গেল, আরও কত কত জীবন যে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল, তার স্মৃতি এবং বর্তমান স্থিতি চরম বেদনাদায়ক। তাসত্ত্বেও যেহেতু মানবজীবন জীবনমুখী হয়েই বাঁচে ও বাঁচার স্বপ্ন দেখে, মৃত্যুমুখী হয়ে নয়, তাই তাকে আবার ঘুরে দাঁড়াতেই হয়, সব হতাশা নিরাশাকে পাশে ঠেলে ফেলে আশাকে আঁকড়ে ধরতে হয়, সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসার জন্য চালাতে হয় অনমনীয় লড়াই। এবং বলা বাহুল্য, অন্যান্য অনেক অনেক লড়াইয়ের মতো একটা অপরিহার্য লড়াই, বইয়ের লড়াই। আর বই মানেই যেহেতু জ্ঞানের ভান্ডার, তাই জ্ঞানেরও লড়াই। সারা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ একদিকে যেমন তার সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য আহার, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার ন্যায্য প্রাপ্তির জন্য লড়াই অব্যাহত রাখে, অন্যদিকে তেমনি শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোতে নিজেকে আলোকিত করার জন্য একটা অন্য লড়াইতেও ব্যস্ত থাকে। এসবই তার জীবনের মৌলিক অধিকারের অন্তর্গত। এটা অবশ্যই ঠিক যে, পৃথিবীতে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যাকে উপেক্ষা করা যায় না। আর তাই তারা বই থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে অপারগ। কিন্তু তারা শিক্ষিত হন প্রকৃতির পাঠ ও জীবনের পাঠ গ্রহণ করে। কিন্তু যাদের অক্ষর পরিচয় আছে, তারা বইয়ের পাঠে নিজেদের শিক্ষিত করে তোলে। শিক্ষা ও জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় তাদের চিন্তা-ভাবনা ও মানসিকতার ক্ষুদ্র পরিধিকে বিশাল, উন্মুক্ত ও উদার করে তোলে। বস্তুতপক্ষে, এসব আদৌ কোনো নতুন কথা নয়। আমরা কম-বেশি সবাই এসব জানি। এবং আমাদের সেই জানাটাও গড়ে উঠেছে বই এবং আনুষাঙ্গিক আরও অনেক মাধ্যম থেকে। আর তাই একথা বলা যেতেই পারে যে, বইয়ের লড়াই অন্ধকারের বিরুদ্ধে, বইয়ের লড়াই অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে, বইয়ের লড়াই অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, বইয়ের লড়াই অন্যায়, অত্যাচার, বঞ্চনা, শোষণ ও মিথ্যাচারিতার বিরুদ্ধে।

মেলার উদ্দেশ্য মিলিত হওয়া, তা যে কোনো উপলক্ষ্যেই হোক না কেন। মানুষ মানুষের সঙ্গে মিলিত হলে, ব্যক্তিগত জীবনের পরিধি অতিক্রম করে সমষ্টিগত জীবনের সঙ্গে পরিচিত হয়। ছোট্ট গন্ডি ছেড়ে বৃহৎ গন্ডি, বৃহৎ গন্ডি ছেড়ে বৃহত্তর গন্ডি। বিশেষত সেই বৃহত্তর গন্ডিতে প্রবেশ না করলে মানবতার পাঠও অসম্পূর্ণ থাকে। মানুষ তার জীবনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে, বিভিন্ন বিষয় ও ভাবনাকে কেন্দ্র করে মেলা আয়োজিত হয়ে থাকে। মানুষ সেইসব মেলায় সমবেত হয়, পারস্পরিক পরিচিতি সেরে নেয়, ভাব বিনিময় করে এবং প্রয়োজনীয় পণ্য ও মনোরঞ্জন সংগ্রহ করে। বইকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় বইমেলা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানে হয়। আমাদের দেশ ভারতেও বিভিন্ন জায়গায় হয়। আমরা সারা বছর প্রতীক্ষায় থাকি সেইসব বইমেলার জন্য। বিশেষত আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার জন্য। এবারও ছিলাম। কিন্তু হতাশ হলাম। মারণ-ভাইরাস কোভিড ১৯ ভন্ডুল করে দিল আমাদের প্রিয় বইমেলাকেও।

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com

 

দূরভাষ যোগাযোগ :

08789040217 / 09835544675

 

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :

Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 


অভিজিৎ মিত্র

 

সিনেমার পৃথিবী – ৫




আমি এযাবৎ নয় নয় করেও অন্তত ৩০টা দেশের ছায়াছবি দেখেছি। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ান সিনেমার মত সাধার জীবনের মাঝেও এত রহস্যময়তা আর কোন  দেশের সিনেমায় দেখিনি। সেই ২০০৫ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ান সিনেমার প্রতি আমার আসক্তি, যবে থেকে ‘মাই স্যাসি গার্ল’, ‘ওল্ড বয়’, ‘থ্রি-আয়রন’ আর ‘স্প্রিং সামার ফল উইন্টার... অ্যান্ড স্প্রিং’ দেখেছি। প্রথম দুটোয় নাটকীয়তা আর পরের দুটোয় এক সুররিয়েল কবিতা লুকিয়ে ছিলতারপর থেকে আজ অব্ধি ৩০টা কোরিয়ান সিনেমা দেখেছি। ২০১৯-এর সেরা ছবি ও সেরা বিদেশি ছবির জন্য অস্কার পুরস্কার প্রাপ্ত ‘প্যারাসাইট’ সমেত। সেজন্য আজ কোরিয়ান মুভি নিয়েই কথা বলব। তবে হ্যাঁ, আমার এইসব লেখায় কোন দেশের সিনেমার ইতিহাস নিয়ে বিশেষ ঘাঁটব না। তাহলে লেখার রস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দরকার পড়লে তবেই রেফারেন্স দেব। এখানে যেমন, ১৯০৩ সালে প্রথম কোরিয়ান সিনেমা হল খোলা থেকে শুরু করে ৫০-এর দশকে কোরিয়ান সিনেমার স্বর্ণযুগ, সেসব নিয়ে কিছুই বলব না। এখনকার কোরিয়ান ছবি দিয়ে শুরু করব।

শুরুতেই যেটা বলতে চাই – কোরিয়ান সিনেমার কয়েকটা ধাঁচ আছে। বেশিরভাগ ছবি এখানে কোন এক ফ্যামিলি ঘিরে তৈরি হয়, যার শেষে লুকিয়ে থাকে রহস্য বা সূক্ষ্ম অনুভূতিঅথবা সমাজের দু’একজন দলছুটকে নিয়ে তৈরি হয় যারা বিভিন্নভাবে কাছাকাছি আসে এবং সেখানেও থাকে রহস্য‘প্যারাসাইট’ প্রথম শ্রেণীভুক্ত। ‘প্যারাসাইট’ ভালো ছবি, নাটকীয় ছবি, নিঃসন্দেহে ২০১৯-এর সেরা বিদেশী ছবি, কিন্তু এতগুলো অস্কার পাবার মত ভাল ছবি নয়। বরং যে থিমের ওপর প্যারাসাইট তৈরি, সেই নিয়ে আগেও কোরিয়ান সিনেমা হয়েছে। এক ধনী পরিবার,  দরিদ্র পরিবারের সঙ্গে তাদের বিস্তর ফারাক ও শেষে নাটকীয়তা। ২০১০-এর ‘দ্য হাউজমেইড’ বা ২০১৬-র ‘দ্য হ্যান্ডমেইডেন’ (এটাও বলে রাখি, ২০১৮ সালে যে জাপানি সিনেমা কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘গোল্ডেন পাম’ পেয়েছিল – ‘শপলিফটার্স’, তার সঙ্গে প্যারাসাইটের প্রচুর মিল পাবেন)অনুভূতি দিয়ে মোড়া সিনেমার কথা বললে ২০১০ সালের ছবি ‘পোয়েট্রি’ যা কান ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে শুরু করে এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভাল, সব জায়গায় পুরস্কার পেয়েছে। আরো এককাঠি ওপরে রহস্যে মোড়া কবিতা অথবা সিনেমা যদি বলতে হয়, তার নাম ‘বার্নিং’। সেই ছবিও একাধিক ফিল্ম ক্রিটিক সোসাইটির সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছে এবং অস্কারের জন্য শেষ দৌড় অব্ধি গেছে। আমার ব্যক্তিগত মত, যারা প্যারাসাইট-কে অস্কার দিয়েছেন, তারা কেউ মনে হয় এই সিনেমাগুলো মন দিয়ে দেখেন নি। দেখলে মতামত বদল করতেন। এবং হয়ত ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম...ইন হলিউড’ বা ‘১৯১৭’ –র ভাগ্যে সেরা ছবির শিরোপা জুটত। অবশ্য আমার মত নেংটি ইঁদুর মার্কা সিনেমা বোদ্ধাদের কথা কেউ শোনে না – অস্কার কমিটিতে সমস্ত মহীরুহরা বসে আছেন, অনেক ভাল বোঝেন। হয়ত সেজন্যই ২০১৮-য় ‘রোমা’-র মত সিনেমাকে সরিয়ে রেখে ‘গ্রিন বুক’কে সেরা ছবির শিরোপা তুলে দিয়েছিলেন! 

যাইহোক, আজ আমরা যে যে কোরিয়ান সিনেমা নিয়ে কাটাছেঁড়া করব, সেগুলো হল – ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’ (১৯৯৯), ‘ওল্ড বয়’ (২০০৩), ‘পোয়েট্রি’ (২০১০), ‘দ্য হ্যান্ডমেইডেন’ (২০১৬) এবং ‘বার্নিং’ (২০১৮)। এগুলো দেখলে পাঠক এখনকার কোরিয়ান ছবি নিয়ে একটা মোটামুটি ধারণা করে নিতে পারবেন।

‘ইররিভার্সিবল’ (২০০২) ছবির কথা মনে আছে, যেখানে কিছু ঘটনা সময়ের উল্টো ক্রমে দেখানো হচ্ছে? সেই বিখ্যাত নায়িকা – মনিকা বেলুসি – ‘ম্যালেনা’র মনিকা বেলুসি - যার সৌন্দর্য গ্রীক দেবীর মত – যার দিকে তাকালে হাঁ করে তাকিয়েই থাকতে হয়! মনিকা বেলুসির ‘ইররিভার্সিবল’-এর অনেক আগে কিন্তু এই ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’ তৈরি হয়েছে এবং খুব সম্ভবত এই সিনেমা দেখেই ‘ইররিভার্সিবল’-এর উল্টোক্রমের কথা ভাবা হয়েছিল। নাটকীয়তা আনার জন্য। ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’-র (এবং ‘পোয়েট্রি’ ও ‘বার্নিং’-এর) পরিচালক লি চাং-ডং। এই মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম সেরা পরিচালক। মজার ব্যাপার, ওনাকে জোর  করে জনগ ও সরকারের তরফ থেকে ২০০৩ সালে এক বছরের জন্য দেশের  সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী বানানো হয়েছিল, কার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রত্যেকের মনে  হয়েছিল ওনার থেকে যোগ্য আর কোন ব্যক্তি নেই যে ঐ মন্ত্রীত্বের দাবিদার হতে পারে (ভারতবর্ষ সত্যিই দুর্ভাগা দেশ... এইরকম যোগ্য ব্যক্তিদের মন্ত্রী পদে বসানোর কথা সরকার কোনদিন ভাবে না)। আরো অদ্ভুত ব্যাপার শুনুন, লি চাং-ডং আজ অব্ধি যে যে সিনেমা বানিয়েছেন, তার সবকটাই একাধিক দেশি ও বিদেশি পুরস্কার পেয়েছে। তো, ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’-ও বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছে। এই ছবির শুরুতেই আমরা দেখি এক ব্যবসায়ী, কিউং-গু সল, বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে করতে হঠাৎ রেললাইনে উঠে গিয়ে এক ছুটন্ত ট্রেনের সামনে ‘আয়াম গোয়িং ব্যাক...’ বলে আত্মহত্যা করেতারপর আস্তে আস্তে ছবি রেট্রোস্পেক্ট করে সময় ধরে পেছনের দিকে যেতে থাকে সেই আত্মহত্যার কার জানার জন্য।  সিনেমা যত গড়ায়, আমরা সময়ের পথ ধরে তত পেছিয়ে যেতে থাকি। বাকিটা নিজেরা দেখুন। ছবির নাম ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’ কেন, সেটাও খুঁজে বের করুন। ভাল লাগবে।

‘ওল্ড বয়’ ছায়াছবির পরিচালক পার্ক চান-উক। অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা। নায়কের ভূমিকায় চৈ মিন-সিক১৫ বছর ধরে তাকে কে বা কারা কোন এক হোটেল রুমের মত জেলে বন্দি করে রেখেছে। কিন্তু মিন-সিক জানে না সে কেন বন্দি এবং কারা তাকে বন্দি করে রেখেছে। ছাড়া পাবার পর সেই নিয়ে সে খুঁজতে শুরু করে এবং আরো জালে জড়িয়ে যায়। এর মাঝে মিন-সিক এক সুন্দরী সুসি রাঁধুনির (মি-ডো) প্রেমে পড়ে। সব মিলিয়ে জমজমাট রহস্য। এই ছবি দেখে পরবর্তীকালে হলিউড এইরকম আরো অ্যাকশন থ্রিলার বানিয়েছে। ২০০৪ কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘ওল্ড বয়’ গ্রাঁ-প্রি পুরস্কার পেয়েছিল। এই সিনেমায় করিডোরের ওপর একটা ফাইট সিন আছে, সেটা ভাল করে দেখবেন। এই দীর্ঘ সিন মাত্র একটা শটে তোলা হয়েছে। সব অ্যাকশন সিনেমাই আজকাল ফাইট সিন দীর্ঘ করার চেষ্টা করে, যাতে দর্শকের কাছে সেটা গ্রহযোগ্য হয়। এই ধারা কোথা থেকে এল, ‘ওল্ড বয়’ দেখুন, বুঝে যাবেন।

২০১৪ সালের এক ডকুমেন্টারি সিনেমা দেখেছিলাম অনেকদিন আগে। ‘অ্যালাইভ ইনসাইড’। পুরোটা এখন মনে নেই। ছবিটা আমার কাছেও নেই কার এক বন্ধুর  কাছে দেখেছিলাম। সেখানে এক অদ্ভুত রসায়ন দেখান হয়েছিল, বয়স্করা যারা ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝেইমারে ভুগছেন, সঙ্গীত তাদের কতটা ভাল রাখতে পারে। তখন একজন কবি হিসেবে মনে হয়েছিল, যদি সঙ্গীত পারে, তাহলে কবিতা কেন নয়? উত্তরটা পেলাম কিছুদিন আগে, ‘পোয়েট্রি’ দেখার পর। ধরা যাক, আপনি অ্যালঝেইমার রোগে ভুগছেন, স্মৃতিশক্তি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে আসছে, বয়স ষাট পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আপনি কবিতা খুব ভালবাসেন। আপনি কি সাহস করবেন আপনার এলাকায় কোন কবিতার ক্লাস হলে সেই দুর্বল স্মৃতিশক্তি নিয়ে সেখানে নিয়মিত গিয়ে বসতে? ‘পোয়েট্রি’ করেছে। আর সেজন্যই অনুভূতিশীল সিনেমার তালিকায় ‘পোয়েট্রি’ একদম ওপর দিকে। ইয়ুন জিওং-হি এই ছবিতে একজন ৬৬ বছর বয়স্কা ঠাকুমার ভূমিকায়। হাসপাতালে নিজের ভুলে যাওয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেখলেন এক মা তার অ্যাগনেস নামক ১৬ বছরের মেয়ের জলে ডুবে মৃত্যু নিয়ে শোকার্ত। পরে জানতে পারলেন তার নিজের ১৬ বছর বয়স্ক নাতি ও আরো পাঁচটি ছেলে সেই মেয়েটিকে স্কুলে বারংবার রেপ করার পর মেয়েটি লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে। নিজের মন শান্ত রাখার জন্য ইয়ুন নিজের এলাকায় এক কবিতার ক্লাস করতে শুরু করলেন। বাকি পাঁচটি ছেলের বাবাদের সঙ্গেও মিটিং করলেন, সমাধানে পৌঁছতে চেষ্টা করলেন যাতে এদের কারো বিরুদ্ধে কোন পুলিশ কেস না হয়। 

একদিকে এক বয়স্কা ঠাকুমা যে নিজের নাতিকে জেল যাওয়া থেকে বাঁচাতে চায়, অন্যদিকে এক সংবেদনশীল মহিলা যার মনের মাঝে সেই মৃত মেয়েটি, আর সব ছাড়িয়ে তার আস্তে আস্তে বিবর্ণ হয়ে আসা স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কবিতা লেখা বা ব্যাডমিন্টন খেলা। এক কথায়, এই ছবি সেলুলয়েডে লেখা কবিতা। ক্যামেরার কাজ মুগ্ধ করার মত। শহরতলী ও গ্রাম্য প্রকৃতির ওয়াইড ভিউ। এই ছবি শুধু দেখবেন না, অনুভব করবেন।  বিশেষ করে ইয়ুন জিওং-হি–র অভিনয়ে। একদম ডাউন টু আর্থ। অথচ গভীর। কোরিয়ান ভাষায় পোয়েট্রি বা কবিতাকে ‘শি’ বলা হয়। এই ছবির কোরিয়ান নাম তাই ‘শি’। কবি হিসেবে আমি নাড়া খেয়েছি ছবির শেষ দৃশ্যে যেখানে ইয়ুন অ্যাগনেস হয়ে যাচ্ছে আর পুরো প্রকৃতি জুড়ে আলো হয়ে কবিতা ছড়িয়ে পড়ছে। এ যেন বারীন ঘোষালের ‘তুমি সেই জাল অরুণা / আলো সেলাই করেছি যার পাড়ে’।

পরের ছবি ‘দ্য হ্যান্ডমেইডেন’-এর পরিচালক আবার পার্ক চান-উক। যদিও এই ছবি ‘ওল্ড বয়’ সিনেমার উল্টোদিকের ঘরানার। এবং প্যারাসাইট সিনেমার সার্থক পূর্বসুরী। এই ছবি ব্রিটিশ আকাদেমীর সেরা বিদেশি ছায়াছবির পুরস্কার পেয়েছিলকান ফিল্ম ফেস্টিভালের দৌড়েও এই ছবি এগিয়ে ছিল। এক জমিদারতান্ত্রিক পরিবারের ধনী উত্তরসুরী কিম মিন-হি–কে ঠকিয়ে বিয়ে করার জন্য হা জাং-য়ু তার কাছে এক পকেটমার কিম তাই-রি–কে পাঠায়, মিন-হি-র সর্বক্ষনের সঙ্গী হবার জন্য। উদ্দেশ্য, সেই পকেটমার মেয়েটি ঐ ধনী মহিলাকে যদি সেই ঠগীকে বিয়ে করতে রাজি করাতে পারে, তাহলে কিছুদিন পরেই সেই ঠগী ঐ মহিলাকে পাগল বলে সাব্যস্ত করে তার সমস্ত সম্পত্তির একা মালিক হবে। অবশ্য ব্যাপারটা তত সহজ নয় যেহেতু মিন-হি-র কাকা জিন-উং এখনো বেঁচে। পুরো সিনেমা তিন ভাগে ভাগ করা আছে। এবং বারবার পট পরিবর্ত্তন হয়েছে। বারবার ওঠানামা। বাকিটা নিজেরা দেখুন। এটাই বলব, এই ছবি খোলা মনে দেখুন, কোন গোঁড়ামি নিয়ে নয়। ভাল লাগবে।

শেষ যে কোরিয়ান ছবি নিয়ে কিছু বলব, তার নাম ‘বার্নিং’। মুরাকামির বিখ্যাত উপন্যাস ‘বার্ন বার্নিং’ অবলম্বনে তৈরি। এই ছবির পরিচালক, পুরস্কার – সব আগেই বলেছি। আমার কাছে এই ছবি এক ধাঁধাঁ। অনেক বছর আগে ‘মালহল্যান্ড ড্রাইভ’ বলে একটা সিনেমা দেখতে গিয়ে যে রকম ধাঁধাঁ মনে হয়েছিল, নিজের ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা আমি সমাধান করতে পারিনি, এই ছবিও তাই। এতগুলো খোলা দিক নিয়ে এই সিনেমা শেষ হচ্ছে যে ধাঁধাঁ সমাধান করা মুশকিল। কিন্তু একইসঙ্গে ছবির অ্যাপিল এত দুর্দান্ত যে ছবি দেখার পর বেশ কয়েকদিন দর্শক ভাবতে বাধ্য হয় যে ছবিটা কোনখানে শেষ হলে ভাল হত। আর সেখানেই ছবির সাফল্য।

এই সিনেমার মুখ্য চরিত্র তিনজন। স্টিভেন ইয়ুন, য়ু আ-ইন আর জিওন জং-সিওছবির নাম বার্নিং কার কোন এক গ্রীনহাউজ পোড়ানোর রহস্য নিয়ে এই ছবি যা  হয়ত পোড়ানো হয়েছে, হয়ত হয়নি। আসলে পুড়ে গেছে কয়েকটা মন। আর ছবির শেষে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে স্টিভেনের শরীর। গল্পটা শুরু হচ্ছে সাদামাটাভাবে। শৈশবে যারা এককালে পাশাপাশি বাড়িতে থাকত, সেই য়ু আর জিওনের দেখা হচ্ছে বহুবছর পরে কোন এক শপিং মলের সামনে, তাদের যৌবনে। য়ু এখনো তার সেই পুরনো বাড়িতেই থাকে, একা। জিওন একা থাকে সিউলে, একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটে। বহুবছর পরে তাদের মনে আবার ভালবাসা জাগে। এই অব্ধি একদম ঠিকঠাক। এরপর রহস্য শুরু যখন জিওন য়ু-কে বলে যে সে কিছুদিনের জন্য বিদেশ ঘুরতে যেতে চায়, সেইসময় য়ু যেন তার বেড়ালকে এসে রোজ খাইয়ে যায়। য়ু জিওনের ফ্ল্যাটে এসে অনেক ডাকাডাকি করেও বেড়ালের দেখা পায় না। জিওন যখন ফিরে আসে, য়ু-র সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয় এক অদ্ভুত মানুষের যার সঙ্গে বিদেশের সফরে জিওনের প্রথম দেখা। সেই অদ্ভুত মানুষ হল স্টিভেন। স্টিভেনের কথাবার্তা, হবি, সবকিছুতেই রহস্যের ছোঁয়া। এরপর মুগ্ধ হয়ে দেখার পালা। সিনেমার মাঝে এক দারু দৃশ্য আছে – জিওন নিজের পুরনো গ্রামে ফিরে এসে সূর্যাস্ত দেখতে  দেখতে দুহাত তুলে মৃদু তালে নাচতে থাকে। দর্শকেরও ঘোর লেগে যায়। বাকিটা  নিজে দেখুন।   

সবশেষে, একজন সমালোচক হিসেবে পরিচালক লি চাং-ডং-কে লেটার মার্কস  দেব এইরকম সুন্দর কয়েকটা ছবি বানানোর জন্য। লেটার মার্কস দেব পোয়েট্রি সিনেমার বৃদ্ধা নায়িকা ইয়ুন জিওং-হি-কেও, সিনেমায় তার চরিত্র শান্ত ও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য।

তাহলে কোরিয়ান মুভি নিয়ে এই অব্ধি। তবে শেষ করার আগে এক ছোট্ট অনুরোধ। পাঠক যদি এইসব মুভি দেখার পর কোরিয়ান ছবির নাটকীয়তার ফ্যান হয়ে যান, তাহলে কোরিয়ান টাইপে তৈরি এক নিখাদ ইংরাজি ছবি দেখুন। রোজামান্ড পাইক অভিনীত ‘গন গার্ল’ (২০১৪)। এই ছবির জন্য, আমার মতে, রোজামান্ডের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার পাওয়া উচিৎ ছিল।


শিবাংশু দে

 

কবিরা খড়া বজার মেঁ - ২

----------------------------------




জাতি জুলাহা নাম কবিরা, বনি বনি ফিরো উদাসী...

জুলাহা, বাংলায় যার নাম জোলা, অর্থাৎ তন্তুবায় নামের শ্রমজীবী শ্রেণী ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিলো। কিন্তু সেই সময় এইদেশের যেসব প্রান্তে বয়নশিল্পের চূড়ান্ত উন্নতি ঘটেছিলো, সেখানে স্বাভাবিকভাবে তন্তুবায়বর্গের মানুষদের বৃহৎ বসতিও প্রতিষ্ঠিত হয়। বারাণসী ছিলো উত্তর ভারতে সে রকম একটি  কেন্দ্র। সেখানেই জন্ম সন্ত কবিরের এবং তিনি স্বীকার করেছিলেন পালক পিতার বৃত্তিগত পরিচয়। পরবর্তী কালের গবেষকরা অবশ্য কবিরের জাতি নিয়ে খুব একটা নিশ্চিত ছিলেন না। তিনি নিজেকে 'জুলাহা' বা 'কোরী' বলে উল্লেখ করেছেন। এই দুই তন্তুবায় বৃত্তির মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলমান ছিলেন। 'কোরী'রা ছিলেন জুলাহাদের থেকেও নিম্নবর্গের শ্রমজীবী মানুষ। কবির নিজের পিতার সম্বন্ধে 'গুসাই' বা গোঁসাই শব্দ উল্লেখ করেছিলেন। হজারিপ্রসাদ দ্বিবেদীর মতে তাঁরা ছিলেন 'যোগী' বা 'যুগী' সম্প্রদায়ের  মানুষ। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরেও তাঁরা নাথপন্থী পরিব্রাজক সন্ন্যাসীদের শিষ্য থেকে গিয়েছিলেন। কবির নিজেকে কখনও 'মুসলমান' বলেননি। 'হিন্দু'ও বলেননি। বস্তুত তিনি চতুর্বর্ণ ভারতীয় সমাজকেই অগ্রাহ্য করেছিলেন। একটি দোহায় এই বিষয়ে তাঁর অবস্থানটি স্পষ্ট করেছিলেন তিনি,

 

'জোগী গোরখ গোরখ করই, হিন্দু রাম-নাম উচরই।

মুসলমান কহই এক খুদাই,

কবিরা কো স্বামী ঘটি ঘটি রহয়ো সমাই।। '

(যোগীরা (নাথ) শুধু গোরখ, গোরখ (গোরখনাথ) করে। হিন্দুরা রাম-নাম উচ্চারণ করে। মুসলমানরা বলে একই খুদা। কিন্তু কবিরের স্বামি (আরাধ্য) সর্ব ঘটে (অর্থাৎ, সর্বত্র) বিরাজ করেন।)

সেই সূত্রে মুসলিম হলেও অধ্যাত্মদর্শনের প্রথম গুরুমুখী পাঠ তিনি নিয়েছিলেন সন্ত রামানন্দের (আনুমানিক ১২৯৯- ১৪১০) কাছে।  ভারতবর্ষে মধ্যযুগের ভক্তিবাদী অধ্যাত্ম আন্দোলনের তিনি ছিলেন প্রধান পুরুষ। তাঁর দর্শনের সঙ্গে পারস্য থেকে আসা ইসলামি সুফি দর্শন মিলেমিশে তৈরি হয় এ দেশের প্রথম সমন্বয়বাদী অধ্যাত্মসাধনা। পরবর্তীকালের ভারতবর্ষে বৃহত্তর জনমানসে ভারতীয় অধ্যাত্মদর্শন বলতে যে বোধটি বিকশিত হয়েছে তার অংকুর এই সময়েই স্ফুরিত হয়। এই আন্দোলনের সমস্ত নায়করা, যেমন, সন্ত কবির, সন্ত রবিদাস, সন্ত নানক, পরবর্তীকালে সন্ত তুকারাম সবাই সন্ত রামানন্দের ভাবশিষ্য। সন্ত রামানন্দ ও কবিরের সম্পর্কটি ভারতবর্ষে পরবর্তীকালের অধ্যাত্ম ও রাজনৈতিক জগতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কিংবদন্তি বলে, সন্ত কবির নিজের জন্মপরিচয়  লুকিয়ে সন্ত রামানন্দের থেকে শিক্ষা নেন। কারণ তখনও পর্যন্ত প্রয়াগের ব্রাহ্মণ রামানন্দ কোনও 'বিধর্মী'কে তাঁর উপদেশ দিতে স্বীকৃত ছিলেন না। কিন্তু ইতিহাস বলে, সন্ত রামানন্দ ও সন্ত কবিরের মধ্যে দীর্ঘ বোধবিনিময়ের ধারা দুজনকেই  একসঙ্গে সমৃদ্ধ করে তোলে। এমন রটনাও রয়েছে যে কবিরের মাতা ছিলেন এক অকালবিধবা ব্রাহ্মণ রমণী। রামানন্দ তাঁকে পুত্রবতী হবার বর দিয়েছিলেন। ফলতঃ তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তবে সম্ভবতঃ ঘটনা হলো, কবিরের প্রকৃত পিতা  রামানন্দের একজন ব্রাহ্মণ শিষ্য এবং কবিরের গর্ভধারিণী সেই ব্রাহ্মণ বিধবা রমণী। লোকলজ্জায় তাঁরা সদ্যোজাত সন্তানকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন লহরতারার জলে। সেখান থেকেই 'ম্লেচ্ছ' জোলা নিরু আর নিমা তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। অবশ্য আধুনিককালের পণ্ডিতরা এই কিংবদন্তি'তে আস্থা রাখেন না। শার্ল ভডভিল বলেছেন, কবির ছিলেন একেবারে নিম্নবর্গের আতরাফ মুসলমান পরিবারের সন্তান, যাঁরা আদত ইসলামি ধর্ম বা লোকাচার সম্বন্ধে বিশেষ ওয়কিবহাল ছিলেন না। তাঁরা সম্ভবত ছিলেন পুরুষানুক্রমিক নাথপন্থী  ইতরবর্গের মানুষ। হয়তো নেহাৎ অর্বাচীন, কলমা কবুল করা মুসলমান। যার ফলে কবিরের রচনায় যেসব উদাহরণ, চিত্রকল্প, প্রতীকী সন্দর্ভ আমরা বারবার দেখতে পাই, সেখানে তন্ত্র, নাথপন্থা ও অন্যান্য লোকজ বিশ্বাসের প্রভাব বিশেষ প্রকট। ওয়েন্ডি ডনিগার তো সরাসরি বলেছেন, কবির সচেতনভাবে হিন্দু ও ইসলাম দুটি ধর্মবিশ্বাসকেই প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব 'ধর্মমত' প্রচার করেছিলেন এই দুটি ধর্মের ধ্বংসাবশেষের উপর। এ বিষয়ে তাঁর উত্তরসূরি ছিলেন মধ্যযুগের বহু সুফি সাধক।

তবে সন্ত কবিরের নিজস্ব ব্যাখ্যায় সন্ত রামানন্দ অনুসৃত শ্রীরামানুজ কথিত নির্গুণ ব্রহ্ম, একেশ্বরবাদ ও প্রেমভক্তির পথে ঈশ্বর, আল্লাহ, হরি, রাম বা অলখ নিরঞ্জনলাভ দর্শনতত্ত্ব সেই সময় থেকেই আপামর ভারতবাসীর মধ্যে অত্যন্ত কার্যকরীভাবে গৃহীত হয়েছিলো। অনেকদিন পরের মানুষ আমাদের লালন সাঁই বলছেন,

'শুদ্ধভক্তি মাতোয়ালা, ভক্ত কবির জেতে জোলা

সে ধরেছে ব্রজের কালা, দিয়ে সর্বস্বধন তাই।।

'ভক্তের দোরে বাঁধা আছেন সাঁই।।'

--------------------------------

জব ম্যঁয় থা, তব হরি নহি

অব হরি হ্যাঁয়, ম্যঁয় নহি

সব অঁধিয়ারা মিট গয়া

জব দীপক দেখা ম্যঁয়নে।।

সেই অন্ধকারযুগে সহায়হীন নিপীড়িত শ্রমজীবী শ্রেণীর ইতরমানুষদের আত্মার শুশ্রূষায় প্রদীপের আলো হাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন সন্ত কবির। তিনি সন্ন্যাসী ছিলেন না। সংসার করেছিলেন, পত্নীর নাম ছিলো লো'ই। তাঁর কোনও বংশপরিচয় পাওয়া যায় না। তিনি সুরূপা ছিলেন না। কবিরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিলো বেশ তিক্ত। কবিরের রচনায় লো'ই সম্বন্ধে নানা বিরূপ মন্তব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। অন্যদিকে লো'ই দুঃখ করতেন, কবির তাঁর সব 'উপার্জন' সাধুসেবায় ব্যয় করেন। তাঁকে শুধু 'চনা' (ছোলা) খেয়ে বাঁচতে হয়। কবির 'গৃহস্থ' রীতিনীতি অনুসরণ করতেন না। জাতব্যবসা ত্যাগ করে তিনি ঈশ্বর-সন্ধান করতেন। কবিরের নিজের তো পার্থিব ভোগসুখের প্রতি কোনও টান ছিলো না। তাঁর মনোভাব বোঝা যাবে এই দোহাটিতে,

 

"চাহ মিটি, চিন্তা মিটি, মনওয়া বেপরওয়াহ

জিসকো কুছ নহি চাহিয়ে, উওহ হ্যাঁয় শহনশাহ।।"

স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য তা ছিলো অত্যন্ত কষ্টকর। কবিরের এক পুত্র কমাল আর কন্যা কমালি। পুত্র কমাল পিতার সাধনার মর্ম বুঝতেন না। কবিরের মতে তিনি ছিলেন ‘বিষয়বিষে’ বিজড়িত। আক্ষেপ করে কবির বলেছিলেন,

 

'বুরা বংস কবির কা, উপজা পুত কমাল

হরি কে সুমিরন ছোড়কে, ঘর লে আয়া মাল।।'

যদিও কবিরপন্থীরা অস্বীকার করেন, কিন্তু একটি কিংবদন্তি আছে 'ধনিয়া' বা 'রমজনিয়া' নামে এক নারী তাঁর কৃপাধন্যা ছিলেন। সম্ভবত তিনি ছিলেন বৃত্তিতে গণিকা। তাঁদের মধ্যে সম্পর্কটি ঠিক কী ছিলো তা জানা যায় না। সম্ভবত কবিরকে হীন প্রতিপন্ন করার জন্য ব্রাহ্মণ্যবাদীদের রটনা ছিলো এসব। ইতিহাসে গোঁড়া ধর্মান্ধদের এই জাতীয় আচরণ বারবার দেখা যায়। স্বয়ং যিশুকেও মেরি ম্যাগদালেনকে কেন্দ্র করে এই ধরনের কুৎসিত প্রচারের লক্ষ্য হতে হয়েছিলো।  তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত এই সব রটনা বা ‘তথ্য’ প্রমাণ করে একান্তভাবেই তিনি ছিলেন সমাজের একেবারে প্রান্তিক বর্গের অংশ। ভারতবর্ষের বরেণ্য মনস্বী সন্তানদের মধ্যে অনেকেই অত্যন্ত দরিদ্র, নিম্নবর্গীয় সমাজ থেকে এসেছিলেন। কবির ছিলেন তাঁদের মধ্যেও নিপীড়িত-তম অংশের প্রতিনিধি।

ঈশ্বরবোধের সন্ধানে কবির দেশের বহু তীর্থ ও প্রান্ত পরিব্রজন করেছিলেন। কিন্তু গুরু রামানন্দ ও শিষ্য কবিরের মূল কর্মক্ষেত্র ছিলো শহর বনারস। গুরু ছিলেন সে সময়ের ভারতবর্ষে একজন শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত, দার্শনিক ও প্রসিদ্ধ চিন্তানায়ক আর চেলা ছিলেন 'নিরক্ষর' সামাজিক মর্যাদাহীন জোলা। কবিরের আরেকজন দিগদর্শক ছিলেন পণ্ডিত শেখ তকী। নিজের সম্বন্ধে কবির বলেছিলেন,

 

'মসি কাগদ ছুয়ো নহি

কলম গহি নহি হাথ।।'

আর গুরু সম্বন্ধে বলেছিলেন,

'গুরু গোবিন্দ দোনো খড়েঁ

কাকে লাগু পাঁয়

বলিহারি গুরু আপনো

গোবিন্দ দিয়ো মিলায়।।'

------------------------------------

সন্ত কবির ছিলেন ভারতবর্ষের শাশ্বত ইতরযানী বোধিবিশ্বের ভাণ্ডারী ও নায়ক। ব্রাহ্মণ্য বোধ ও উপলব্ধির চেনা কক্ষপথের বাইরে  আবহমানকাল ধরে এদেশে গরিষ্ঠ মানুষের মননজগতের  শ্রেষ্ঠ ফসল উদ্গত হয় সন্ত কবিরের এইসব অমৃতবাণীর মাধ্যমে। তাঁর বাণীর প্রথম প্রামাণ্য সংকলন পাওয়া গুরু অর্জনদেব সংগৃহীত শিখদের 'আদিগ্রন্থ' আর গোবিন্দওয়াল পোথির মধ্যে। তারপর রাজস্থান থেকে সংগৃহীত 'বীজক' আর বুন্দেলখন্ড থেকে নথিবদ্ধ করা 'অনুরাগসাগর'। এসবের প্রণেতা ছিলেন নিরক্ষর, তাই এর প্রামাণ্যতা শুধু বাচনিক ঐতিহ্যের মধ্যে বিচরণ করেছে।  উইলসন-সাহেবের মতে কবিরের রচিত দোহা সংকলনের সংখ্যা আট। বিশপ ওয়েস্টকট সাহেব বলেছেন সংখ্যাটি চুরাশি। অন্যমতে রামদাস গৌড় বলেন কবিরের রচনার একাত্তরটি সংগ্রহ রয়েছে। তবে তাঁর সমস্ত রচনাই 'বীজকে'র মধ্যে মোটামুটি গ্রন্থিত আছে। বীজকের তিনটি ভাগ আছে, রমৈনি, সবদ আর সারওয়ি। শৈলির বিচারে তাঁর রচনায় রয়েছে তিনধরনের  রচনা। দোহে, সলোক (শ্লোক) আর সাখি (সাক্ষী)। তাঁর রচনাগুলি যেহেতু ভক্তদের শ্রুতির মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিলো, তাই অনেক ভাষায় তার নানা রূপ দেখা যায়। যেমন, পঞ্জাবি, ব্রজভাখ, রাজস্থানী, খড়ি বোলি, অওধি, পুরবি ইত্যাদি।

-----------------------------------------

তিনি ছিলেন এক গর্বিত 'জুলাহা'। যেখানেই নিজের সম্পর্কে কিছু বলার, তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাবে নিজের শ্রমজীবী জাতিপরিচয় নিয়ে সরব হয়েছেন। জীবৎকালে কবিরকে ব্রাহ্মণ্য ও অশরাফি মুসলিম সংস্কৃতির ধ্বজাধারীদের থেকে তুমুলভাবে নিগৃহীত হতে হয়েছে। শুধু মানসিক নয়, তাঁকে বারবার শারীরিক ভাবেও নির্যাতন করা হয়েছে। শেখ তকী বলেছিলেন কবিরের স্পষ্ট কথা আর প্রচলিত সামাজিক দমনপীড়নের বিরুদ্ধে নেওয়া অবস্থানের জন্য তিনি হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই ঘৃণিত হয়েছিলেন। কিংবদন্তি অনুযায়ী সুলতান সিকন্দর লোদি থেকে শুরু করে গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য সমাজ, সবাই তাঁকে অত্যন্ত হেনস্থা করতেন। হিন্দুরা তাঁকে বলতো অচ্ছুত ম্লেচ্ছ, আর মুসলিমরা বলতো কাফির। কিন্তু কবিরের কাব্য ও দর্শনচিন্তা তাঁকে পরবর্তী বহু শতকের মানুষের কাছে শ্রদ্ধেয় ও 'প্রাসঙ্গিক' করে রেখেছে। বিশপ ওয়েস্টকটের গ্রন্থের ভূমিকায় তাঁকে 'পঞ্চদশ শতকের ভারতীয় লুথার' (মার্টিন লুথার) বলে উল্লেখ করা হয়েছিলো।

কবির যেন একজন 'মানুষ' ছিলেন না। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানবাত্মার কাছে  এক স্বপ্নময় পরিত্রাতা। একটি আশ্বাসের  বিগ্রহ। তাঁর সম্বন্ধে প্রচলিত লোকবিশ্বাস ও তথ্যসূত্র সব কিছুই যেন এক রহস্যময়তার আবরণে ঢাকা। তাঁর প্রয়াণের সময়কাল নিয়েও বহু মত দেখা  যায়। একটি মত অনুযায়ী তা ১৪৪৭ সালে। অন্যমতে ১৫১১ সাল। অথবা শ্যামসুন্দর দাসের মতে ১৫১৭ সাল।  হান্টার সাহেবের মতে কবিরের সময়কাল ১৩৮০ থেকে ১৪২০ সাল। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে এই এই সময়কাল ১৩৯৮ থেকে ১৫১৮ পর্যন্ত বিস্তৃত  ছিলো। অর্থাৎ তাঁর মতে কবির দীর্ঘ একশো কুড়ি বছর জীবিত ছিলেন।

কবিরের তিরোভাব হয়েছিলো বারাণসী থেকে প্রায় দুশো কিমি দূরে গোরখপুরের কাছে মগহরে। তাঁর জন্মের কাহিনী এতো-ই অস্পষ্ট যে তাঁর প্রকৃত জন্মস্থান বারাণসী কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কিন্তু বনারস তাঁর কর্মভূমি এবং চিরকালীন ভারতবোধে এই স্থান ও কবির অচ্ছেদ্য সম্পর্কে বাঁধা। একসময়ের গণিকা, কসাই ও অন্যান্য 'অসামাজিক' পেশায় নিয়োজিত মানুষ অধ্যুষিত এই স্থানে বসবাস করে মহাত্মা কবির কোন প্রেরণায় নিখিল মানবাত্মার কাছে তাঁর শাশ্বত সন্দেশ পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন, তা হৃদয়ঙ্গম করার একটা বাসনা  আমাকে তাঁর দিকে টেনে নিয়ে যায়। অন্ধকার মধ্যযুগে ভারতদর্শনের সারসংক্ষেপ একজন 'অশিক্ষিত', হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিলো আর্যাবর্তের সংখ্যাগুরু নিপীড়িত, দরিদ্র, হতমান ইতর মানবজাতির কাছে আত্মার শুশ্রূষা হয়ে।

পশ্চিমের সংস্পর্শে আসা ভারতীয়দের মধ্যে  বিদেশে কবিরবাণী প্রচারের প্রয়াসে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অগ্রগণ্য। ১৯১৫ সালে 'সংস অফ কবির' নামে তাঁর অনুদিত কবিরের একশোটি কবিতা লন্ডনে প্রকাশিত হয়। ইভলিন আন্ডারহিল  এই সংকলনটির ভূমিকা লিখে দেন। এই বইটি পড়েই ডব্লিউ বি ইয়েটস পশ্চিমে কবিরকে বিস্তৃত পরিচিতি দান করেন। অবশ্য পরবর্তীকালের গবেষকদের মতে এই একশোটি কবিতার মধ্যে বড়ো জোর ছ'টি কবিতা কবিরের নিজস্ব রচনা। বাকিগুলি সম্ভবতঃ কবিরের শিষ্য-প্রশিষ্য নানা ভক্ত সাধকের সৃষ্টি। যদিও  সেগুলিতে কবিরের দর্শন ও রচনাশৈলি বিশ্বস্তভাবে অনুসরণ করা হয়েছিলো।

ঈশ্বর কবিরের কাছে একজন শ্রেষ্ঠ তন্তুবায়। ঠিক যেভাবে একজন জোলা সুতোর সঙ্গে সুতোর খেলায় মত্ত হয়ে অনুপুঙ্খ কৌশলে শিল্পসৃষ্টি করে, সেভাবেই ঈশ্বর মাতৃগর্ভ নামক তাঁত থেকে সমস্ত প্রাণ, সারা জগতসংসারকে উৎপন্ন করছেন। এই ধারণাটি তন্ত্র ও আগমের একটি মুখ্য সূত্র। আরাধ্য 'হরি' সম্বন্ধে তাঁর মুগ্ধতা যেন সঞ্চারিত হয়ে যায় উত্তরসূরিদের মননে তাঁর প্রতি গড়ে ওঠা মুগ্ধতার প্লাবনে। এই দোহাটিতে তিনি যখন 'হরি'কে ইঙ্গিত করেন, আমরা 'হরি'র স্থানে তাকে পড়ি 'কবির'। খুব একটা ভুল হয় না আমাদের,

 

'সাত সমন্দর কী মসি করৌঁ

লেখনি সব বনরাই ।

ধরতি সব কাগদ করৌঁ

হরিগুণ লিখা ন জাই।।'


পায়েল মণ্ডল

 

ইউলিসিস, ওরিয়েন্টালিজম




 

()

 

‘In short, Orientalism as a Western style for dominating, restructuring, and having authority over the Orient…. Moreover, so authoritative a position did Orientalism have during the post-Enlightenment period] that I believe no one writing, thinking, or acting on the Orient could do so without taking account of the limitations on thought and action imposed by Orientalism.’ - Edward Said, Orientalism, 1979


১৯০৪ সালের জুন ১৬ তারিখের পুরো এক দিনের ঘটনার গল্প বলেছেন লিখিয়ে জেমস জয়েস তাঁর উপন্যাস ইউলিসিসে। ঘটনার স্থান হলো ডাবলিন। যে সময়ে গল্পটি বলা হয় তখন ব্রিটিশ সম্রাজ্যের মানচিত্রে ডাবলিন ছিল ছোট্ট একটি শহর। উপন্যাসে দেখা যায় কোন কোন ডাবলিনার্স ব্রিটিশ কলোনির অধীনে বেশ সুখী জীবন যাপন করছ্‌ যেমন মিস্টার ডিজি। আবার কিছু চরিত্রের দেখা মেলে যারা তাদের নিম্ন রাজনৈতিক মর্যাদার জন্য ক্ষুব্ধ, যেমন সিটিজেন। কলোনিয়াল সরকারের দ্বারা আইরিশরা অত্যাচারিত হলেও ডাবলিনার্সদের প্রাত্যহিক জীবনে ব্রিটিশ সংস্কৃতির প্রভাব ভীষণ ভাবে পরিলক্ষিত হয়। এটা যেন সূর্য না ডোবা ব্রিটিশ কলোনির সংস্কৃতির আগ্রাসনের রুপ। প্রাচ্য সব সময়ই ব্রিটিশ এবং আইরিশ নাগরিকদের আকৃষ্ট করেছে। জয়েস আইরিশদের প্রাচ্যের প্রতি আগ্রহকে নাকচ করে দেননি আর তাই তাঁর মহান উপন্যাস ইউলিসিসে প্রাচ্যের মোটিফ স্পষ্ট।

দ্যা ওরিয়েন্ট বা প্রাচ্য আসলে কী? খুব সহজে বলা যায় পূর্ব এশিয়া, ইন্ডিয়া, ইসলামিক দেশ, ইসরায়েল, নর্থ আফ্রিকা, স্পেনের কিছু অংশ, গ্রীস এবং ইস্ট ইউরোপের ভূখণ্ডের বলয় হলো ওরিয়েন্ট। প্লানেট আর্থের বিশাল জনগোষ্ঠী ওরিয়েন্টে বাস করে। বিশাল এই ভূখন্ডে অসংখ্য জাতি গোষ্ঠীর ভাষা, ধর্ম, জীবনযাত্রা সৃষ্টি করে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি। ওরিয়েন্ট শব্দটির অর্থ ‘ওসিডেন্ট’ বা ওয়েস্ট এর একেবারে বিপরীত। ১৯৭৯ সালে এর্ডোয়ার্ড সাইদ তাঁর বই ‘Orientalism‘- এ বিশদ আলোচনা করেন। সাইদের মতে ওরিয়েন্টালিজম বোঝার চাবিকাঠি হলো ‘পার্থক্য’, ওয়েস্ট বা ওসিডেন্টের মাঝের পার্থক্য।


সাইদ স্পষ্ট বলেন ওরিয়েন্টালিজম হল ইউরোপিয়ান কলোনিয়ালিজমের সৃষ্ট কনসেপ্ট। ১৯০৪ সালে, যে সালে ইউলিসিসের ঘটনার সময়, সেই সময়ে আয়ারল্যান্ড ছিল ব্রিটিশ সম্র্যাজ্যের অধীনে। অন্যান্য ব্রিটিশ কলোনির মতোই আয়ারল্যান্ডও ব্রিটিশ প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত ছিল না। সম্রাজ্যবাদী ব্রাইটনরা তাঁদের উন্নততর বিজ্ঞান, অস্ত্র, রণকৌশল দিয়ে কলোনিগুলোকে শাসন করতো। এটা সত্য ছিল যে তাদের অধিকৃত কলোনিগুলোর সামরিক শক্তি, সামাজিক অবস্থান, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি কখনোই ব্রিটিশদের সমকক্ষ ছিল না। ওয়েস্ট যেখানে বাস্তববাদীতা, বিজ্ঞান, যুক্তিকে গ্রহণ করে, ওরিয়েন্টে অনেকখানি জুড়ে বিরাজ করে আধ্যাত্মবাদের চেতনা। ওরিয়েন্টের এই আধ্যাত্মবাদের চেতনা ওয়েস্টার্নদের আগ্রহ এবং আকর্ষণের বিষয়বস্তু। আইরিশ পপুলার কালচার ওরিয়েণ্টের ইমেজে ভরপুর ছিল, বিশেষ করে আরবের কালচার। জয়েস আইরিশ পপুলার কালচারের গভীরে প্রবেশ করেন এবং অসংখ্য উপাদান সংগ্রহ করেন। জয়েস সমালোচক আর ব্রানডন কার্শনার মন্তব্য করেন ইউলিসিস হলো ওরিয়েন্টালিস্ট ক্লিশের সংগ্রহ (a compendium of Orientialist clichés)তার মতে উপন্যাস ইউলিসিসে জয়েস যতটা না ওডেসিয়ান এ্যলুউশন ব্যবহার করেছেন তার চেয়েও বেশি ব্যবহার করেছেন A Thousand and One Nights’র এ্যালিউশন। অর্থাৎ ওরিয়েন্টাল এ্যালিউশন। তার কাছে মনে হয় স্টেফান এবং ব্লুম ব্লুমসডের জার্নি (উপন্যাস ইউলিসিসের ঘটনার দিন) যতটা না ওডেসিয় যাত্রা তার চেয়েও বেশি আরব্য উপন্যাসের সিন্দাবাদীয় যাত্রা অর্থাৎ ওরিয়েন্টাল যাত্রা। ‘ইউমাইয়ুস’ কাণ্ডে ক্যাবম্যান শেল্টারে দেখা মেলে আইরিশ সিন্দাবাদ নাবিক মার্ফির।


উপন্যাসের (ইউলিসিসের) ‘ইথাকা’ কাণ্ডের শেষে দৃশ্যটা যেন ঘরে ফেরার সিন্দাবাদ-দ্যা-সেইলরের ঘরেফেরা। ‘প্রটিয়াস’ কাণ্ডে স্টেফানের প্রফেটিক স্বপ্নে তার হারুন-আল-রশিদের সাথে দেখা হয়। হারুন-আল-রশিদ আরব্য উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্রের একটি। হ্যালুসুনেটিং স্পেলে দেখা হারুন-আল-রশিদ আর কেউ নয় স্টেফানের অবচেতন মনে খোঁজা নন-বায়োলজিক্যাল ফাদার ফিগার লিওপোল্ড ব্লুম। এই কাণ্ডে জয়েস ডাবলিনকে স্টেফানের চেতনা প্রবাহে আইরিশ বাগদাদে পরিণত করেন। মজার বিষয় হলো এই যে জয়েস গ্রীক ওডেসিকে উপন্যাসের কাঠামো হিসেবে এডোপ্ট করলেও গ্রীসিয়ান ডাবলিনের দৃশ্য কোথাও আঁকেন না। এটা হলো জয়েসের arrtisic riddle! ব্লুমেরক্যালিপ্সো’ এবং ‘লোটাস ইটার’ কাণ্ডের ডে-ড্রিমগুলো আনকনশাস মাইন্ডে নয় বরং কনশাস মাইন্ডের রিফ্লেকশন। এটা ব্লুমের মেন্টাল এসকেপ, স্ত্রী মলির অবিশ্বস্ততার কষ্ট থেকে, স্ত্রীর সাথে শীতল যৌন সম্পর্ক থেকে। জয়েস ব্লুমের এই অবস্থা আঁকতে তাকে পুরে দেন ওরিয়েন্টাল ফ্যান্টাসির চাদরে। শুধু ফ্যান্টাসি নয় ওয়েস্টার্ন ব্লুমের ভাবনাও যেন বদলে যায়, ব্লুম হয়ে ওঠে ওরিয়েন্টাল ব্লুম। ‘ক্যালিপ্সো’ কাণ্ডে জয়েস ব্লুমকে সেট করেন আইরিশ বাগদাদে ক্লাসিক ন্যারেশনে-

‘Wander through awned streets. Turbaned faces going by. Dark caves of carpet shops, big man, Turko the terrible, seated crosslegged, smoking a coiled pipe. Cries of sellers in the streets. Drink water scented with fennel, sherbet. Dander along all day. Might meet a robber or two. Well, meet him. Getting on to sundown. The shadows of the mosques among the pillars: priest with a scroll rolled up. A shiver of the trees, signal, the evening wind. I pass on. Fading gold sky. A mother watches me from her doorway. She calls her children home in their dark language. High wall: beyond strings twanged. Night sky, moon, violet, colour of Molly's new garters. Strings. Listen. A girl playing one of those instruments what do you call them: dulcimers. I pass.’


ব্লুমের ডে-ড্রিমগুলো শুরু হয় তার স্মৃতিতে এবং তার পারিপার্শ্বিকতায়। স্ত্রী মলির চিন্তা হলো তার ডে-ড্রিমের নিউক্লিয়াস। ব্লুম তার চেতনা প্রবাহে মলির মোজাকে তুলনা করে আগ্রাবাহ’র রাতের আকাশের সাথে। ব্লুমের চিন্তা প্রবাহ যেন এক স্মৃতি থেকে অন্য স্মৃতিতে, তার চারপাশের দৃশ্যমান পারিপার্শ্বিকতা ব্লুমের চিন্তা প্রবাহের ক্যাটালিস্ট হিসেবে কাজ করে আর সেই চিন্তা প্রবাহ ঘুরে ঘুরে ওরিয়েন্টাল ইমেজে দৃশ্যমান হয়। বোলন্যান্ডের রুটি সরবরাহ করা দেখে তার তার চিন্তার প্রবাহ সক্রিয় হয়, সে স্ত্রী মলির কথা ভাবে – ‘she prefers yesterday’s loaves turnovers crisp crowns hot.’ এই ভাবনার সাথে সাথে মলির জিব্রাল্টারের সময়ের কথা মনে পড়ে এবং তার ‘old Tweedy’ বাবার কথাও, মনে পড়ে বাবার রুশো টার্কিশ যুদ্ধের সময় বুলগেরিয়ার প্লেভনা শহরের পতনের কাহিনি। জয়েস দারুণ একটা মুভমেন্ট সৃষ্টি করেন, তিনি তার গল্প নির্মাণ করেন একটি টপোগ্রাফিক বৃত্তে, যে বৃত্ত দৃশ্যমান হয় ন্যারেশন, চিন্তা, টাইম এন্ড স্পেস, এবং চেতনা প্রবাহের সমুন্নত মুভমেন্টে। ব্লুমের চিন্তার প্রবাহের মুভমেন্ট শুরু হয় রুটি সরবারহ দৃশ্যে আর শেষ হয় ওরিয়েন্টে, প্লেভনাতে।


ব্লুমের ফ্যান্টাসিতে মলি হলো রহস্যময় যৌনাবেদনময়ী প্রাচ্যরমণী যাকে দেখা যায় টার্কিশ পরিধেয়ে আবৃত। ‘কিয়ার্কি’ কাণ্ডে জয়েস অনবদ্য ভাষায় প্রাচ্য রমণীর রূপে মলিকে আঁকেন –

‘Beside her mirage of datepalms a handsome woman in Turkish costume stands before him. Opulent curves fill out her scarlet trousers and jacket slashed with gold. A wide yellow cummerbund girdles her. A white yashmak violet in the night, covers her face, leaving free only her lace dark eyes and raven hair.’

ব্লুমের ফ্যান্টসি আবারো পরিবর্তিত হয়। এবার সে মলিকে ম্যুরিশ রমণীর রূপে দেখে। এই মলি হলো মুসলিম। মলির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা জিব্রাল্টারে। একদা জিব্রাল্টার ম্যুরিশ স্পেনের অধীনে ছিল। ‘নসিকা’ কাণ্ডে এমন কথাই চিন্তা করে ব্লুম –‘That’s where Molly can knock spots off them. It’s the blood of the South. Moorish.’ জয়েস ব্লুমের মতই মলির ধর্ম নিয়ে সৃষ্টি করেন রহস্য। জয়েস উপন্যাসের কোন নির্দিষ্ট স্থানে টেক্সচুয়াল ক্লু রেখে যান না মলির ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে, তবে ছাড়া ছাড়া ক্লুগুলো এক করলে জানা যায় তার মা ছিল ইহুদি কিন্তু মলির বেড়ে ওঠা ক্যাথলিসিজমের আবহে স্বামী ব্লুমের মতই যার নির্দিষ্ট কোন ধর্মীয় পরিচয় নেই। ব্লুমের ফ্যান্টাসিতে মলি পুরোপুরি একজন প্রাচ্যরমণী।

 


()

 

‘In short, Orientalism as a Western style for dominating, restructuring, and having authority over the Orient…. Moreover, so authoritative a position did Orientalism have during the post-Enlightenment period] that I believe no one writing, thinking, or acting on the Orient could do so without taking account of the limitations on thought and action imposed by Orientalism.’ - Edward Said, Orientalism, 1979

‘Turko the Terrible’ জয়েসের সময়ের জনপ্রিয় ফোক চরিত্র। চরিত্রটি নিঃসন্দেহে একটি ওরিয়েন্টাল চরিত্র। উইলিয়াম রয়েস চরিত্রটির ভূমিকায় অভিনয় করতেন। ইউলিসিসের ‘টেলিমেকাস’ কাণ্ডে স্টেফান ডেডেলাস স্মরণ করে ‘Turko the Terrible’ চরিত্রে অভিনেতা এডোয়ার্ড উইলিয়াম রয়েসের অভিনয় দেখে তার মায়ের প্রতিক্রিয়া ‘ক্যালিপ্সো’ কাণ্ডে তুর্কো হলো বিগম্যান – ‘big man, Turko the terrible, seated crosslegged, smoking a coiled pipe.’ ব্লুমের ফ্যান্টাসি এফ ডি থমসনের ট্রাভেলগ – ‘In the Track of the Sun’ দ্বারা ভীষণ ভাবে প্রভাবিত। বইটিতে লেখকের প্রাচ্যের মিশর, প্যালেস্টাইন, ইন্ডিয়া, চিন, জাপান এবং সিলোনের (শ্রীলঙ্কা) ভ্রমণ বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন। ‘লোটস ইটার’ কাণ্ডে ব্লুম তার ডে-ড্রিমে ফার ইস্টের সিলোনের (শ্রীলঙ্কার) সৌন্দর্যে বুঁদ হয়ে যায়-

‘Then he put on his hat again, relieved: and read again: choice blend, made of the finest Ceylon brands. The far east. Lovely spot it must be: the garden of the world, big lazy leaves to float about on, cactuses, flowery meads, snaky lianas they call them.’

ইথাকা’ কাণ্ডে ডে-ড্রিমে ব্লুম দেখতে পায় ওরিয়েন্টের ফার ইস্টের জাপানী কন্যা, জাপানের ট্রাডিশনাল ড্রেসে, হাতে বাদ্য যন্ত্র স্যামিসেন। ব্লুমের চিন্তা শিফট হয় আর এক নারীর ইমেজে, ডালসিমার হাতে এক নারীর দিকে। কবি কোলরিজের ফ্রাগমেন্ট কাবিতা কুবলাই খানের সেই ডালসিমার বাদক নারী। কোলরিজের স্বপ্নে পাওয়া কবিতা যেটা তিনি লিখেছেন ঘোরের মাঝেই। কবিতার কুবলাই খানের প্রসাদ ‘জেনাদু’ ওরিয়েন্টের সব চেয়ে সুন্দরতম কাল্পনিক স্থাপনা। স্বর্গের আদলে গড়া এই প্রাসাদের চার দেয়ালের মাঝে প্রতিধ্বনিত হয় ডালসিমার বাদক প্রেমকাতর নারীর বিলাপ তার ‘demon-lover’ এর জন্য। ‘লোটাসইটার’ মাইন্ডসেটে ‘কুবলাই খানে’ এর উপস্থিতি ভীষণ ভাবে লক্ষ্যনীয়। কোলরিজ তাঁর এই কবিতা নিয়ে এক বন্ধুকে বলেছিলেন – ‘I should much wish, like the Indian Vishna, to float about along an infinite ocean cradled in the flower of the Lotos, & wake once in a million years for a few minutes – just to know I was going to sleep a million years more …!’ জানা নেই জয়েস কোলরিজের এই মন্তব্য পড়েছিলেন কিনা। কাকতালীয় ভাবে ইউলিসিসের ‘লোটাস ইটার’ কাণ্ডের ওরিয়েন্টের সাউথ এশিয়ার চিত্র ঠিক যেনকুবলাই খানে’র মতই। ব্লুমের ওরিয়েণ্ট রোমান্টিক ওরিয়েন্ট। ব্লুমের এই রোমান্টিক ওরিয়েন্টে দেখা মেলে ডালসিমার বাদক নারী, চোর, ডাকাত, ফ্লাইং কার্পেট, অপদেবতাপ্রেমী নারী এবং তার বিলাপ, শ্রীলঙ্কার ‘গার্ডেন অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড’ (গার্ডেন অফ এডেনের প্যারালাল) টুর্ক দ্য টেরিবল, হারুন-আল-রশিদ, আরো কত কি!

ওদিকে ‘Near East’ এর প্রধানতম আকর্ষণ হলো ‘ম্যুরিশ’ মলি। ব্লুমের স্ত্রী। ব্লুমের ওরিয়েন্টাল ফ্যান্টাসির উৎসারিত হয় তার আবেগের অন্তস্থল থেকে। ‘ক্যালিপ্সো’ কাণ্ডে ব্লুম যখন মলির কথা চিন্তা করে, আরবের বাজারের দৃশ্য তার চোখে ভাসে। ‘লোটাস ইটার’ কাণ্ডে ভারী নাস্তা সেরে প্যাডি ডিগন্যামের অন্তোষ্টিক্রিয়ায় যোগদানের আগে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় ব্লুম। প্রখর সূর্যের আলোয় ব্লুম ডে-ড্রিমের স্পেলে পড়ে ব্লুম। ঘুম পায় তার। তার মনে হয় এই জলন্ত সূর্য যেন ওরিয়েন্টের সিংহলীজ সূর্য – ‘Those Cinghalese lobbing about in the sun, in dolce far niente. Wonder is it like that. Sleep six months out of twelve.’ ব্লুমের সব চেয়ে আবেগময় ডে-ড্রিম ‘ক্যালিপ্সো’ কাণ্ডে ন্যরেট করেন জয়েস। ওরিয়েন্টের কেন্দ্রে ব্লুম নিজেকে আবিষ্কার করে। চেতনা প্রবাহের রথে চড়ে ব্লুম পৌঁছায় প্যালেস্টাইনে। লোকাতীত কাব্যময়তায় জয়েস নির্মাণ করেন ব্লুমের চিন্তার প্রবাহ-

‘No, not like that. A barren land, bare waste. Vulcanic lake, the dead sea: no fish, weedless, sunk deep in the earth. No wind could lift those waves, grey metal, poisonous foggy waters. Brimstone they called it raining down: the cities of the plain: Sodom, Gomorrah, Edom. All dead names. A dead sea in a dead land, grey and old. Old now. It bore the oldest, the first race. A bent hag crossed from Cassidy's, clutching a naggin bottle by the neck. The oldest people. Wandered far away over all the earth, captivity to captivity, multiplying, dying, being born everywhere. It lay there now. Now it could bear no more. Dead: an old woman's: the grey sunken cunt of the world. Desolation.’

হঠাৎ এক ফালি মেঘ আবৃত করে জ্বলন্ত সূর্যকে। ক্ষ্ণণকালের আলোস্বল্প সময়ে ব্লুম তার ফ্যান্টাসির ঘূর্ণাবর্তে একদা সমৃদ্ধ প্রমিসজড ল্যান্ডকে দেখে- পরিত্যক্ত, নিস্ফলা, পৃথিবীর ধূসর সংকুচিত যোনির মত। ইউলিসিসের সেই মুহুর্তের মেঘময় আকাশ আর এক প্রটাগিনিস্ট স্টেফান ডেডেলাস একই সময় প্রত্যক্ষ করে, স্যান্ডিকোভের মার্টেলো টাওয়ারের ছাদ থেকে। ম্লান আলোয় ডেডেলাসের চোখে ডাবলিনের সাগরকে মনে হয় –‘a bowl of bitter waters’ আর ঠিক একই সময়ে তার নন-বায়োলজিক্যাল প্রতীকী পিতা ব্লুমের কাছে ওরিয়েন্টের প্রমিজসড ল্যান্ডকে (প্যালেস্টাইন) মনে হয় – ‘grey metal, poisonous foggy waters!’ অসাধারণ নৈপুণ্যে জয়েস ওসিডেন্টের সাথে ওরিয়েন্টেকে সম্পর্কিত করেন। লিওপোল্ড ব্লুম এবং স্টেফান ডেডেলাস ভিন্ন চিন্তার মানুষ, তাদের চিন্তার ভিন্নতাকে অক্ষুন্ন রেখে জয়েস দুজনকে সম্পর্কিত করেন, স্টেফান ডেডেলাসকে ওসিডেন্টের প্রতীকে আর ব্লুমকে ওরিয়েন্টাল প্রতীকে।

জয়েস রহস্য সৃষ্টি করেন তার উপন্যাস ইউলিসিসের গল্প নিয়ে। আপাত দৃষ্টিতে তিনি তার প্রটাগোনিস্ট ব্লুমকে গ্রীক ইউলিসিস থেকে এডোপ্ট করলেও ব্লুম যেন গ্রীসিয় ইউলিসিস নয়, অনেকটা দান্তের ইউলিসিস আবার পুরোপুরি দান্তের ইউলিসিস নয়, সে যেন ওরিয়েন্টাল হারুন-আল-রশিদ। । পুরো উপন্যাসটিকে জয়েস ওরিয়েন্টালিজমের মোটিফ দিয়ে সাজান। মজার ব্যাপার হলো তিনি এমন কোন ক্লু দেন না যে তার কোন একটি চরিত্রের ওরিয়েন্ট ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে, এমন কি চরিত্র স্রষ্ঠারও (জয়েসেরও) ওরিয়েন্ট সম্পর্কে কোন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। অন্যদিকে একজন আইরিশ ইহুদি হিসেবে ব্লুমের আত্মপরিচয় জটিল হয়ে ওঠে। ‘পেনিলপি’ কাণ্ডে স্ত্রী মলি সলিলকিতে ঘুমন্ত ব্লুমকে দেখায় ওরিয়েন্টাল (ভারতীয়) দেবতাদের মত – ‘He sleeps like that Indian god he took me to show one wet Sunday in the museum in Kildare St….!’ ব্লুম জাতিগত ভাবে একজন হাঙ্গেরিয়ান। একসময় বিশ্বাস করা হতো হাঙ্গেরি পত্তন হয় প্রাচ্য থেকে আসা আক্রমণকারী এ্যটিলা দ্যা হানের মাধ্যমে। হাঙ্গেরি অরিজিন আরো স্পষ্ট ভাবে ব্লুমকে প্রাচ্যিয় পরিচয়ে পরিচিত করে।

ইউলিসিসের ওরিয়েন্টালিজম জয়েসের অনবদ্য ইমাজিনেটিভ ফ্যান্টাসি। একটি শিল্প কতটুকু সমৃদ্ধ হলে এমন মাল্টি ডাইমেনশনাল হতে পারে! ‘ক্রিয়েটিভ ইগোয়িস্ট’ জয়েস ঠিকই বলেছিলেন তাঁর উপন্যাসকে শতবছর ধরে মানুষ আবিস্কার করবে। জয়েসের চৌত্রিশ বছর বয়েসে লেখা এই উপন্যাস আর্টিস্ট জয়েসের ক্রিয়েটিভ ইগোর এক অনন্য ওয়ার্ক-অফ-আর্ট!

 

তথ্যসূত্র

১। Orientalism by Edward Said

২। Ulysses by James Joyce