শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

অভিজিৎ মিত্র

 

সিনেমার পৃথিবী – ৫




আমি এযাবৎ নয় নয় করেও অন্তত ৩০টা দেশের ছায়াছবি দেখেছি। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ান সিনেমার মত সাধার জীবনের মাঝেও এত রহস্যময়তা আর কোন  দেশের সিনেমায় দেখিনি। সেই ২০০৫ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ান সিনেমার প্রতি আমার আসক্তি, যবে থেকে ‘মাই স্যাসি গার্ল’, ‘ওল্ড বয়’, ‘থ্রি-আয়রন’ আর ‘স্প্রিং সামার ফল উইন্টার... অ্যান্ড স্প্রিং’ দেখেছি। প্রথম দুটোয় নাটকীয়তা আর পরের দুটোয় এক সুররিয়েল কবিতা লুকিয়ে ছিলতারপর থেকে আজ অব্ধি ৩০টা কোরিয়ান সিনেমা দেখেছি। ২০১৯-এর সেরা ছবি ও সেরা বিদেশি ছবির জন্য অস্কার পুরস্কার প্রাপ্ত ‘প্যারাসাইট’ সমেত। সেজন্য আজ কোরিয়ান মুভি নিয়েই কথা বলব। তবে হ্যাঁ, আমার এইসব লেখায় কোন দেশের সিনেমার ইতিহাস নিয়ে বিশেষ ঘাঁটব না। তাহলে লেখার রস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দরকার পড়লে তবেই রেফারেন্স দেব। এখানে যেমন, ১৯০৩ সালে প্রথম কোরিয়ান সিনেমা হল খোলা থেকে শুরু করে ৫০-এর দশকে কোরিয়ান সিনেমার স্বর্ণযুগ, সেসব নিয়ে কিছুই বলব না। এখনকার কোরিয়ান ছবি দিয়ে শুরু করব।

শুরুতেই যেটা বলতে চাই – কোরিয়ান সিনেমার কয়েকটা ধাঁচ আছে। বেশিরভাগ ছবি এখানে কোন এক ফ্যামিলি ঘিরে তৈরি হয়, যার শেষে লুকিয়ে থাকে রহস্য বা সূক্ষ্ম অনুভূতিঅথবা সমাজের দু’একজন দলছুটকে নিয়ে তৈরি হয় যারা বিভিন্নভাবে কাছাকাছি আসে এবং সেখানেও থাকে রহস্য‘প্যারাসাইট’ প্রথম শ্রেণীভুক্ত। ‘প্যারাসাইট’ ভালো ছবি, নাটকীয় ছবি, নিঃসন্দেহে ২০১৯-এর সেরা বিদেশী ছবি, কিন্তু এতগুলো অস্কার পাবার মত ভাল ছবি নয়। বরং যে থিমের ওপর প্যারাসাইট তৈরি, সেই নিয়ে আগেও কোরিয়ান সিনেমা হয়েছে। এক ধনী পরিবার,  দরিদ্র পরিবারের সঙ্গে তাদের বিস্তর ফারাক ও শেষে নাটকীয়তা। ২০১০-এর ‘দ্য হাউজমেইড’ বা ২০১৬-র ‘দ্য হ্যান্ডমেইডেন’ (এটাও বলে রাখি, ২০১৮ সালে যে জাপানি সিনেমা কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘গোল্ডেন পাম’ পেয়েছিল – ‘শপলিফটার্স’, তার সঙ্গে প্যারাসাইটের প্রচুর মিল পাবেন)অনুভূতি দিয়ে মোড়া সিনেমার কথা বললে ২০১০ সালের ছবি ‘পোয়েট্রি’ যা কান ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে শুরু করে এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভাল, সব জায়গায় পুরস্কার পেয়েছে। আরো এককাঠি ওপরে রহস্যে মোড়া কবিতা অথবা সিনেমা যদি বলতে হয়, তার নাম ‘বার্নিং’। সেই ছবিও একাধিক ফিল্ম ক্রিটিক সোসাইটির সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছে এবং অস্কারের জন্য শেষ দৌড় অব্ধি গেছে। আমার ব্যক্তিগত মত, যারা প্যারাসাইট-কে অস্কার দিয়েছেন, তারা কেউ মনে হয় এই সিনেমাগুলো মন দিয়ে দেখেন নি। দেখলে মতামত বদল করতেন। এবং হয়ত ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম...ইন হলিউড’ বা ‘১৯১৭’ –র ভাগ্যে সেরা ছবির শিরোপা জুটত। অবশ্য আমার মত নেংটি ইঁদুর মার্কা সিনেমা বোদ্ধাদের কথা কেউ শোনে না – অস্কার কমিটিতে সমস্ত মহীরুহরা বসে আছেন, অনেক ভাল বোঝেন। হয়ত সেজন্যই ২০১৮-য় ‘রোমা’-র মত সিনেমাকে সরিয়ে রেখে ‘গ্রিন বুক’কে সেরা ছবির শিরোপা তুলে দিয়েছিলেন! 

যাইহোক, আজ আমরা যে যে কোরিয়ান সিনেমা নিয়ে কাটাছেঁড়া করব, সেগুলো হল – ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’ (১৯৯৯), ‘ওল্ড বয়’ (২০০৩), ‘পোয়েট্রি’ (২০১০), ‘দ্য হ্যান্ডমেইডেন’ (২০১৬) এবং ‘বার্নিং’ (২০১৮)। এগুলো দেখলে পাঠক এখনকার কোরিয়ান ছবি নিয়ে একটা মোটামুটি ধারণা করে নিতে পারবেন।

‘ইররিভার্সিবল’ (২০০২) ছবির কথা মনে আছে, যেখানে কিছু ঘটনা সময়ের উল্টো ক্রমে দেখানো হচ্ছে? সেই বিখ্যাত নায়িকা – মনিকা বেলুসি – ‘ম্যালেনা’র মনিকা বেলুসি - যার সৌন্দর্য গ্রীক দেবীর মত – যার দিকে তাকালে হাঁ করে তাকিয়েই থাকতে হয়! মনিকা বেলুসির ‘ইররিভার্সিবল’-এর অনেক আগে কিন্তু এই ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’ তৈরি হয়েছে এবং খুব সম্ভবত এই সিনেমা দেখেই ‘ইররিভার্সিবল’-এর উল্টোক্রমের কথা ভাবা হয়েছিল। নাটকীয়তা আনার জন্য। ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’-র (এবং ‘পোয়েট্রি’ ও ‘বার্নিং’-এর) পরিচালক লি চাং-ডং। এই মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম সেরা পরিচালক। মজার ব্যাপার, ওনাকে জোর  করে জনগ ও সরকারের তরফ থেকে ২০০৩ সালে এক বছরের জন্য দেশের  সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী বানানো হয়েছিল, কার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রত্যেকের মনে  হয়েছিল ওনার থেকে যোগ্য আর কোন ব্যক্তি নেই যে ঐ মন্ত্রীত্বের দাবিদার হতে পারে (ভারতবর্ষ সত্যিই দুর্ভাগা দেশ... এইরকম যোগ্য ব্যক্তিদের মন্ত্রী পদে বসানোর কথা সরকার কোনদিন ভাবে না)। আরো অদ্ভুত ব্যাপার শুনুন, লি চাং-ডং আজ অব্ধি যে যে সিনেমা বানিয়েছেন, তার সবকটাই একাধিক দেশি ও বিদেশি পুরস্কার পেয়েছে। তো, ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’-ও বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছে। এই ছবির শুরুতেই আমরা দেখি এক ব্যবসায়ী, কিউং-গু সল, বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে করতে হঠাৎ রেললাইনে উঠে গিয়ে এক ছুটন্ত ট্রেনের সামনে ‘আয়াম গোয়িং ব্যাক...’ বলে আত্মহত্যা করেতারপর আস্তে আস্তে ছবি রেট্রোস্পেক্ট করে সময় ধরে পেছনের দিকে যেতে থাকে সেই আত্মহত্যার কার জানার জন্য।  সিনেমা যত গড়ায়, আমরা সময়ের পথ ধরে তত পেছিয়ে যেতে থাকি। বাকিটা নিজেরা দেখুন। ছবির নাম ‘পেপারমিন্ট ক্যান্ডি’ কেন, সেটাও খুঁজে বের করুন। ভাল লাগবে।

‘ওল্ড বয়’ ছায়াছবির পরিচালক পার্ক চান-উক। অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা। নায়কের ভূমিকায় চৈ মিন-সিক১৫ বছর ধরে তাকে কে বা কারা কোন এক হোটেল রুমের মত জেলে বন্দি করে রেখেছে। কিন্তু মিন-সিক জানে না সে কেন বন্দি এবং কারা তাকে বন্দি করে রেখেছে। ছাড়া পাবার পর সেই নিয়ে সে খুঁজতে শুরু করে এবং আরো জালে জড়িয়ে যায়। এর মাঝে মিন-সিক এক সুন্দরী সুসি রাঁধুনির (মি-ডো) প্রেমে পড়ে। সব মিলিয়ে জমজমাট রহস্য। এই ছবি দেখে পরবর্তীকালে হলিউড এইরকম আরো অ্যাকশন থ্রিলার বানিয়েছে। ২০০৪ কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ‘ওল্ড বয়’ গ্রাঁ-প্রি পুরস্কার পেয়েছিল। এই সিনেমায় করিডোরের ওপর একটা ফাইট সিন আছে, সেটা ভাল করে দেখবেন। এই দীর্ঘ সিন মাত্র একটা শটে তোলা হয়েছে। সব অ্যাকশন সিনেমাই আজকাল ফাইট সিন দীর্ঘ করার চেষ্টা করে, যাতে দর্শকের কাছে সেটা গ্রহযোগ্য হয়। এই ধারা কোথা থেকে এল, ‘ওল্ড বয়’ দেখুন, বুঝে যাবেন।

২০১৪ সালের এক ডকুমেন্টারি সিনেমা দেখেছিলাম অনেকদিন আগে। ‘অ্যালাইভ ইনসাইড’। পুরোটা এখন মনে নেই। ছবিটা আমার কাছেও নেই কার এক বন্ধুর  কাছে দেখেছিলাম। সেখানে এক অদ্ভুত রসায়ন দেখান হয়েছিল, বয়স্করা যারা ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝেইমারে ভুগছেন, সঙ্গীত তাদের কতটা ভাল রাখতে পারে। তখন একজন কবি হিসেবে মনে হয়েছিল, যদি সঙ্গীত পারে, তাহলে কবিতা কেন নয়? উত্তরটা পেলাম কিছুদিন আগে, ‘পোয়েট্রি’ দেখার পর। ধরা যাক, আপনি অ্যালঝেইমার রোগে ভুগছেন, স্মৃতিশক্তি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে আসছে, বয়স ষাট পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আপনি কবিতা খুব ভালবাসেন। আপনি কি সাহস করবেন আপনার এলাকায় কোন কবিতার ক্লাস হলে সেই দুর্বল স্মৃতিশক্তি নিয়ে সেখানে নিয়মিত গিয়ে বসতে? ‘পোয়েট্রি’ করেছে। আর সেজন্যই অনুভূতিশীল সিনেমার তালিকায় ‘পোয়েট্রি’ একদম ওপর দিকে। ইয়ুন জিওং-হি এই ছবিতে একজন ৬৬ বছর বয়স্কা ঠাকুমার ভূমিকায়। হাসপাতালে নিজের ভুলে যাওয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেখলেন এক মা তার অ্যাগনেস নামক ১৬ বছরের মেয়ের জলে ডুবে মৃত্যু নিয়ে শোকার্ত। পরে জানতে পারলেন তার নিজের ১৬ বছর বয়স্ক নাতি ও আরো পাঁচটি ছেলে সেই মেয়েটিকে স্কুলে বারংবার রেপ করার পর মেয়েটি লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে। নিজের মন শান্ত রাখার জন্য ইয়ুন নিজের এলাকায় এক কবিতার ক্লাস করতে শুরু করলেন। বাকি পাঁচটি ছেলের বাবাদের সঙ্গেও মিটিং করলেন, সমাধানে পৌঁছতে চেষ্টা করলেন যাতে এদের কারো বিরুদ্ধে কোন পুলিশ কেস না হয়। 

একদিকে এক বয়স্কা ঠাকুমা যে নিজের নাতিকে জেল যাওয়া থেকে বাঁচাতে চায়, অন্যদিকে এক সংবেদনশীল মহিলা যার মনের মাঝে সেই মৃত মেয়েটি, আর সব ছাড়িয়ে তার আস্তে আস্তে বিবর্ণ হয়ে আসা স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কবিতা লেখা বা ব্যাডমিন্টন খেলা। এক কথায়, এই ছবি সেলুলয়েডে লেখা কবিতা। ক্যামেরার কাজ মুগ্ধ করার মত। শহরতলী ও গ্রাম্য প্রকৃতির ওয়াইড ভিউ। এই ছবি শুধু দেখবেন না, অনুভব করবেন।  বিশেষ করে ইয়ুন জিওং-হি–র অভিনয়ে। একদম ডাউন টু আর্থ। অথচ গভীর। কোরিয়ান ভাষায় পোয়েট্রি বা কবিতাকে ‘শি’ বলা হয়। এই ছবির কোরিয়ান নাম তাই ‘শি’। কবি হিসেবে আমি নাড়া খেয়েছি ছবির শেষ দৃশ্যে যেখানে ইয়ুন অ্যাগনেস হয়ে যাচ্ছে আর পুরো প্রকৃতি জুড়ে আলো হয়ে কবিতা ছড়িয়ে পড়ছে। এ যেন বারীন ঘোষালের ‘তুমি সেই জাল অরুণা / আলো সেলাই করেছি যার পাড়ে’।

পরের ছবি ‘দ্য হ্যান্ডমেইডেন’-এর পরিচালক আবার পার্ক চান-উক। যদিও এই ছবি ‘ওল্ড বয়’ সিনেমার উল্টোদিকের ঘরানার। এবং প্যারাসাইট সিনেমার সার্থক পূর্বসুরী। এই ছবি ব্রিটিশ আকাদেমীর সেরা বিদেশি ছায়াছবির পুরস্কার পেয়েছিলকান ফিল্ম ফেস্টিভালের দৌড়েও এই ছবি এগিয়ে ছিল। এক জমিদারতান্ত্রিক পরিবারের ধনী উত্তরসুরী কিম মিন-হি–কে ঠকিয়ে বিয়ে করার জন্য হা জাং-য়ু তার কাছে এক পকেটমার কিম তাই-রি–কে পাঠায়, মিন-হি-র সর্বক্ষনের সঙ্গী হবার জন্য। উদ্দেশ্য, সেই পকেটমার মেয়েটি ঐ ধনী মহিলাকে যদি সেই ঠগীকে বিয়ে করতে রাজি করাতে পারে, তাহলে কিছুদিন পরেই সেই ঠগী ঐ মহিলাকে পাগল বলে সাব্যস্ত করে তার সমস্ত সম্পত্তির একা মালিক হবে। অবশ্য ব্যাপারটা তত সহজ নয় যেহেতু মিন-হি-র কাকা জিন-উং এখনো বেঁচে। পুরো সিনেমা তিন ভাগে ভাগ করা আছে। এবং বারবার পট পরিবর্ত্তন হয়েছে। বারবার ওঠানামা। বাকিটা নিজেরা দেখুন। এটাই বলব, এই ছবি খোলা মনে দেখুন, কোন গোঁড়ামি নিয়ে নয়। ভাল লাগবে।

শেষ যে কোরিয়ান ছবি নিয়ে কিছু বলব, তার নাম ‘বার্নিং’। মুরাকামির বিখ্যাত উপন্যাস ‘বার্ন বার্নিং’ অবলম্বনে তৈরি। এই ছবির পরিচালক, পুরস্কার – সব আগেই বলেছি। আমার কাছে এই ছবি এক ধাঁধাঁ। অনেক বছর আগে ‘মালহল্যান্ড ড্রাইভ’ বলে একটা সিনেমা দেখতে গিয়ে যে রকম ধাঁধাঁ মনে হয়েছিল, নিজের ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা আমি সমাধান করতে পারিনি, এই ছবিও তাই। এতগুলো খোলা দিক নিয়ে এই সিনেমা শেষ হচ্ছে যে ধাঁধাঁ সমাধান করা মুশকিল। কিন্তু একইসঙ্গে ছবির অ্যাপিল এত দুর্দান্ত যে ছবি দেখার পর বেশ কয়েকদিন দর্শক ভাবতে বাধ্য হয় যে ছবিটা কোনখানে শেষ হলে ভাল হত। আর সেখানেই ছবির সাফল্য।

এই সিনেমার মুখ্য চরিত্র তিনজন। স্টিভেন ইয়ুন, য়ু আ-ইন আর জিওন জং-সিওছবির নাম বার্নিং কার কোন এক গ্রীনহাউজ পোড়ানোর রহস্য নিয়ে এই ছবি যা  হয়ত পোড়ানো হয়েছে, হয়ত হয়নি। আসলে পুড়ে গেছে কয়েকটা মন। আর ছবির শেষে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে স্টিভেনের শরীর। গল্পটা শুরু হচ্ছে সাদামাটাভাবে। শৈশবে যারা এককালে পাশাপাশি বাড়িতে থাকত, সেই য়ু আর জিওনের দেখা হচ্ছে বহুবছর পরে কোন এক শপিং মলের সামনে, তাদের যৌবনে। য়ু এখনো তার সেই পুরনো বাড়িতেই থাকে, একা। জিওন একা থাকে সিউলে, একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটে। বহুবছর পরে তাদের মনে আবার ভালবাসা জাগে। এই অব্ধি একদম ঠিকঠাক। এরপর রহস্য শুরু যখন জিওন য়ু-কে বলে যে সে কিছুদিনের জন্য বিদেশ ঘুরতে যেতে চায়, সেইসময় য়ু যেন তার বেড়ালকে এসে রোজ খাইয়ে যায়। য়ু জিওনের ফ্ল্যাটে এসে অনেক ডাকাডাকি করেও বেড়ালের দেখা পায় না। জিওন যখন ফিরে আসে, য়ু-র সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয় এক অদ্ভুত মানুষের যার সঙ্গে বিদেশের সফরে জিওনের প্রথম দেখা। সেই অদ্ভুত মানুষ হল স্টিভেন। স্টিভেনের কথাবার্তা, হবি, সবকিছুতেই রহস্যের ছোঁয়া। এরপর মুগ্ধ হয়ে দেখার পালা। সিনেমার মাঝে এক দারু দৃশ্য আছে – জিওন নিজের পুরনো গ্রামে ফিরে এসে সূর্যাস্ত দেখতে  দেখতে দুহাত তুলে মৃদু তালে নাচতে থাকে। দর্শকেরও ঘোর লেগে যায়। বাকিটা  নিজে দেখুন।   

সবশেষে, একজন সমালোচক হিসেবে পরিচালক লি চাং-ডং-কে লেটার মার্কস  দেব এইরকম সুন্দর কয়েকটা ছবি বানানোর জন্য। লেটার মার্কস দেব পোয়েট্রি সিনেমার বৃদ্ধা নায়িকা ইয়ুন জিওং-হি-কেও, সিনেমায় তার চরিত্র শান্ত ও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য।

তাহলে কোরিয়ান মুভি নিয়ে এই অব্ধি। তবে শেষ করার আগে এক ছোট্ট অনুরোধ। পাঠক যদি এইসব মুভি দেখার পর কোরিয়ান ছবির নাটকীয়তার ফ্যান হয়ে যান, তাহলে কোরিয়ান টাইপে তৈরি এক নিখাদ ইংরাজি ছবি দেখুন। রোজামান্ড পাইক অভিনীত ‘গন গার্ল’ (২০১৪)। এই ছবির জন্য, আমার মতে, রোজামান্ডের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার পাওয়া উচিৎ ছিল।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন