শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শাহনাজ নাসরীন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৮


হন্তারক

 

তীব্র আদরের আশ্লেষটুকু উপভোগ করতে করতে সে জিজ্ঞেস করে স্বপ্নে দেখো আমাকে?

প্রশ্নটা সোনার পাথরবাটির মতো অদ্ভূত শোনায়। সে হচ্ছে বীভৎস রসের সমঝদার, যে কোন বিষয়কে কুৎসিত করতে যার জুড়ি নেই। অথচ এখন কেমন আবেগায়িত  দেখো! এক মুহূর্ত ওর মন রাখা কথা বলতে ইচ্ছে করে। তবু মুখ ফসকে সত্যটাই বলা হয়ে যায়। বলি, না স্বপ্নে আমি শুধু মরা মানুষ দেখি, জানো! মুখ ফসকে  বললেও মনে মনে হয়তো এ বিষয়ে ওর একটা বিশ্লেষণ শোনার আকাঙ্ক্ষাও কাজ করে থাকবে। যত যাই হোক, পড়ে তো অনেক। 

সে একটু ধাতস্থ হয়ে বলে, আমার মনে হয় দেখাই স্বাভাবিক। প্রতিদিন যেরকম মৃত্যুর মিছিলে আমাদের যাপন। প্রত্যেকটা দিন আগুনে পুড়ে নয় গাড়ির তলে নয়  ভবন ধ্বংস অথবা পাহাড় ধ্বস নতুবা লঞ্চডুবি, তারপর কিনা বন্দুকযুদ্ধ আর  গুম... কিছু না কিছু তো আছেই প্রতিদিন। আজকাল আত্মহত্যার মিছিলও বড় হচ্ছে।

আমি বলি, কথাটা আসলে ঠিকমতো বলা হলো না। তোমার বোধহয় মনে হচ্ছে  স্বপ্নে আমি প্রতিদিনকার লাশের স্তূপ দেখি। হ্যাঁ প্রতিদিনকার যাপনের এসব ট্রমা নিয়ে ঘুমোতে গেলে লাশের স্তূপই স্বপ্নে আসার কথা, কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তা নয়। আমি আসলে আমার মৃত আপনজনদের দেখি। তাও একদম স্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে। যেন তারা বেঁচেই আছে। স্বপ্নে তাদের নিয়ে বসবাস করি।

ও কেমন চুপ মেরে যায়। তারপর বলে, তাই! কখনও ভেবে দেখছ কেন এমনটা দেখ? কোন সাইকোলজি?

ভেবেছি, কিন্তু কেন তা বুঝি না।  

সে আরও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অন্যরকম গলায় বলে, আমি বোধহয় বুঝেছি।

কী বুঝলে, আমি বলি মুচকি হেসে।

বুঝলাম তোমার ভিতরে আসলে একজন খুনী আছে যে ক্রমাগত আবেগগুলিকে খুন করে। হয়তো আপনজনদের নিয়ে সেই অনুশোচনা আছে অবচেতনে। ধরো আমি যদি আজ যাওয়ার পথে মরে যাই, আমাকে স্বপ্ন দেখবে, কারণ আজকের এই উত্তরটার জন্য সারাজীবন কাঁদবে তুমি।

আমি চমকে পাশ ফিরে তাকাই। কী আশ্চর্য! কথায় কথায় নিজেকে হারামি বলা মানুষটির মুখ লাল, চোখ ভেজা!

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন