শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

দেবযানী বসু

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৮


কোমর্বিডিটি


রোশনি রাস্তায় বেরোয় বটে তবে কোথাকার বাস কোথায় যায়, সে সব কিছু   জানে না। জানলেও মনে রাখতে পারে না। বেরোতেই হয়। মনে যে রাখতে পারে না সেটা স্বীকারও করে না। সেদিন মামার বাড়ির নোনা চন্দনপুকুর বাজারে নিজের ছোট ছেলেটিকে একটা  জলসার জমায়েতে বসিয়ে দিয়ে চলে এল বাড়ি। ভাবল থাক ওখানে বসে, কাজ শেষ হলে ঘরে নিয়ে আসবে। এ পাশে কাজ সাগরের ঢেউয়ের মতো ফুলে ফুলে উঠল। প্রচুর বিরিয়ানি রাঁধতে হল অতিথিদের জন্য। অতিথিরা অচেনা ও অভিজাত। রোশনির খুব লজ্জা লজ্জা করতে লাগলো। সবাই অবশ্য খেতে বসে গাজর খেতে চাইল। সেদিন অল্পই গাজর ছিল ফ্রিজে। অতএব মূলো দিয়ে কাজ সারতে হল।

মামার বাড়ির জমি ভাগাভাগি করে পাঁচিল উঠে গেছে। এই জমির একাংশ বিক্রি করা হল ছোটমাসির বিয়ের পণ দেবার জন্য। একদিকে আছে ডোবা। রোশনি ছিপ হাতে ডোবার ধারে চলে গেল। কী জলভরা বোবা! তালশাঁসের জলের সঙ্গে  মিলে যায়। দাদুও ছিপ নিয়ে বসে পড়ল ওর পাশে। পুঁটি ফেলে ল্যাটা টপাটপ কেঁচোমিশ্রিত ভাত খেতে লাগল। আচমকা ডোবা থেকে উঠে এলেন চিকিৎসকের ধড়াচূড়ো পরা উকিল, হাতে এক গুচ্ছ কাগজ। রোশনি এভাবেই  খালি সুতোর রিলেতে গুটিয়ে রাখে। মাঝে মাঝে ছেলেকে দেয় খেলতে। ছেলে? তাকে তো বাজারের জলসায় বসিয়ে রেখে এসেছে! তারা ইঁট পেতে  দেখছিল তারা ভোঁ-ভা। সে ছোটাছুটি করে নাম ধরে তীব্র চিৎকার করতে লাগল। ছেলেকে  পেল না।

দেয়াল থেকে কাচের ছবিটা ভেঙে পড়ল ঝনঝন শব্দে। প্রচুর কোমর্বিডিটি ছিল নাকি ছবিটার! একটি ত্রিশ বছরের যুবক ডোবাটির দিকে হেঁটে চলেছে ধীরে। পরনে শর্টস। মাথার চুল সব ঝরে পড়ছে ধীরে ধীরে। সারা গায়ে কালির ছোপ ফুটে উঠছে। রোশনি অনুভব করছে মুখগহ্বর থেকে ওর দাঁত আসে পড়া। ক্রমশ শীর্ণ পিঠের পাঁজর ফুটে উঠছে। অযত্নলালিত দাড়ির জঙ্গলের আভাস গালের পিছন থেকেও বোঝা যাচ্ছে। ওঃ! হাত ও পায়ের নখ কী বড় বড় হয়ে গেল! হঠাৎ  চামড়া ফেটে জলরস বেরিয়ে আসছে। এরপর...  ঝাপসা হয়ে যায় চোখ। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন