কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৮ |
ছবি
বহ্নিমানের শখ ছিল ছবি তোলার। নানা সময়ে নানা পোশাকে, ভঙ্গিতে, আয়োজনে সে ছবি তুলতো। যে সময়ের কথা, তখন মোবাইল ক্যামেরা, সেলফি এসব শব্দের চল ছিল না। একখানা আগফা ক্যামেরা আনিয়েছিল পাড়াতুতো বিদেশবাসী দাদাকে দিয়ে। তারপর তাতে ফিল্ম ভরো আর ছবি তোলো। নিজের ছবি, বিয়ের পর বৌএর ছবি, চুনি পান্না হওয়ার পর তাদের ছবি, আরো কত।
তার
কতদিন পর মোবাইল ফোন এল, এল ডিজিটাল ক্যামেরা, ফিল্মের ধরাকাট আর রইল না। এন্তার ছবি।
জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, ছোট বড় বেড়ানো ছাড়াও
এমনি এমনি হঠাৎ ইচ্ছে হল বলে কত কত ছবি।
ঘরের
দেওয়ালে শুধু বাঁধানো মুহূর্তেরা স্থির হয়ে থাকে আর চেয়ে চেয়ে দেখে। বহ্নিমানও
দেখে, সুখের গায়ে হাত বুলিয়ে।
--
এটা সেই সেবার, না গো?
--
ইস্, কতবার বললাম, মাথায় একটু স্লাইট ঘোমটাটা
দাও। আরো ভালো ছবিটা উঠতো তাহলে।
-------
এমনি
সব কথায় কথায় সময় বয়ে গেছে কখন।
বহ্নিমান
বিদায় নিলে রাশিকৃত ছবি নিয়ে রাজেশ্বরীর
দিন কাটে।
পান্না
বিয়ে করে প্রবাসী। চুনিও প্রায়ই বলতে থাকে, এ বাড়ি সারানো মানে হাতি পোষা, মা। এর
চেয়ে চলো ফ্ল্যাটে উঠে যাই।
রাজেশ্বরী উঠে যান চুনির ফ্ল্যাটে, চুনি তিন্নির নতুন সংসারে। পুরনো বাড়ি প্রোমোটারের দখলে। পুরনো আসবাব কিলো দরে। নতুন ফ্ল্যাটে অত জায়গা কোথায়?
রাজেশ্বরী
নিজের জিনিসপত্রের সঙ্গে ছবির পুঁটুলি এনে তোলেন ফ্ল্যাটে।
-- ওমা! এতসব কোথায় রাখবে? ফ্ল্যাটের নিচু নিচু দেওয়াল, এ কি আর বাপঠাকুরদার অট্টালিকা? সাকুল্যে ক'টা দেওয়াল। এ দেওয়ালে থাকবে পটচিত্র, ও দেওয়ালে থাকবে ছৌএর মুখোশ, সে দেওয়ালে ইন্টিরিয়র ডেকোরেশন। ব্যাস। মিটে গেল। আর জায়গা নেই।
------
বহ্নিমানের
ছবিরা আর পুঁটুলি থেকে বেরোয় না।
------
চুনির
ছেলের মুখেভাত। আহা, প্রাণের পুত্তলি নাতি রাজেশ্বরীর। আত্মীয় পরিজন বন্ধু বান্ধবে
বাড়ি সরগরম। মস্ত বিখ্যাত ফোটোগ্রাফার এসেছেন মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে। মহাব্যস্ত তাঁর
সহকারীরা। ফটাফট ফ্ল্যাশবাল্ব জ্বলছে, আর সবার হাসিমুখের পোজ। চুনির আদেশ, একজনও যেন বাদ না পড়ে।
রাজেশ্বরীর
ডাক পড়ে।
--
ওমা, কোথায় গেলে? এসো এসো, নাতির সাথে ছবি তুলবে এসো।
রাজেশ্বরী
হাসি মুখে দাঁড়ান নাতি কোলে।
আজ থেকে ঠিক তিনমাস পর চুনিরা দেশ ছাড়ছে। না, রাজেশ্বরী এখানেই থাকবেন। আর থাকবে আজকের এই ছবিগুলো।
আরও
একটা পুঁটুলির ভিতরে।
রাজেশ্বরী
হাত বোলাবেন। একবার বহ্নিমানের গায়ে, একবার নাতির গায়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন