কবিতার কালিমাটি ১০৩ |
ব্যাঙাবতার
(ঋগ্বেদের ৭ম মণ্ডলের ১০৩ নং সূক্ত অনুসরণে)
বর্ষার জয়বন্তী কদম্বিত হবার পর ব্যাঙাবতার অভিষিক্ত হয়। তার হরিদ্রাভ দীপ্তি পদ্মপাতাকে স্বর্ণথালায় রূপান্তরিত করে। অনুগামীদের কোরাসে সরোবর নৃত্যপর হলে ভেকবালিকা শৃঙ্গারলজ্জা ভুলে যায় আর বৎসলা গাভি শিখে নেয় হাম্বাধ্বনি। প্লবগপতি সঙ্গীতের আদি রূপকার; একমাত্র প্লবগসঙ্গীত মেঘের সমস্ত অণুসত্তায় সঞ্চারিত হয়। পৃথিবীর শস্যরূপময়তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাঙাবতার স্মরণাতীত কাল থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার কাছে প্রার্থনা, প্রত্যেক গৃহে বলদ আর গাভির সংখ্যা বৃদ্ধি পাক, মোহর আর মাণিক্যে পূর্ণ হোক মানুষের মুদ্রাধার, ক্ল্যারিনেট সুরে উড়ে যাক মারির লেআউটভস্ম।
কালো বিড়াল
উয়ারি-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত কৃষ্ণ-রক্তিম মৃদ্ভাণ্ডে দই রাখা হতো; কালো বিড়াল দই খেতে খেতে মৃদ্ভাণ্ড ভেঙে ফেলতো বলে ভাণ্ডগুলোর খণ্ডাংশই এখন দৃশ্যমান। আড়াই হাজার বছর ধরে দুগ্ধজাত আহার্য গ্রহণ করায় কালো বিড়াল নধরকান্তি প্রজাতি হিসেবে খ্যাত হয়েছে। দই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে বলে অমাবস্যা বাতাসে মিশে যাচ্ছে গোরক্ষনাথের গান; ভাঁটরং বিকেলে আর বেজে ওঠে না গুড্ডির ব্যানা। প্রত্যেকটি বিড়াল সিস্ট্রাম বাজিয়ে নাচতে ও উৎসবে উচ্ছল হয়ে উঠতে পারে। তবে বিড়ালের শিল্পনৈপুণ্য স্ফুরণে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় নি।
অনার্য রাজকুমারী
(বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ঋণী)
খণ্ডিত আকাশে জাকার্যান্ডা মণিপুরি রপ্ত করেছিলো। তার ছায়ার নীলে ঘুমিয়ে আছে শহর। আলোর ক্লোমনালিকার ভেতর অবলীলায় ঢুকে যাচ্ছে কৃষ্ণ গন্দোলা। দূর পাহাড়ের নির্জনতায় তেউড়ি ফুলের দীপোৎসব। মাদলা বাতাসে মহুয়া ছড়িয়ে অনার্য রাজকুমারী অরণ্যের দিকে চেয়ে থাকেন। সামন্ত-আগুনে দগ্ধ বনাঞ্চল তাঁর বক্ষে কাঁপন জাগায়; রাজবাড়ির মৃণ্ময় দেওয়ালে অঙ্কিত ফুল-পাতা-হরিণ টেরাকোটার বর্ণে উজ্জ্বল হতে পারে, পারিবারিক চারণভূমি মোষের খুরাঘাত থেকে পেতে পারে পরিত্রাণ। চোখ থেকে বর্শাদীপ্তি মুছে ফেলে ঝরনাজলে তিনি ভাসিয়ে দেন বনশেফালির ঝিকিমিকি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন