শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০

পারমিতা চক্রবর্ত্তী

 

বিজ্ঞাপনের ইতিহাস

 



বিজ্ঞাপন বলতে সবার আগে যেটা মনে পড়ে টিভির পর্দায় সুন্দর ঝাঁ চকচকে ছবি। বিজ্ঞাপনকে সুন্দর, সুচারুভাবে এগিয়ে নিয়ে চলছে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি।  এটি এমন একটা মাধ্যম যার দ্বারা বিক্রেতাগণ নিজের পণ্যের পরিচিতি দিয়ে থাকেন। যে মাধ্যমের দ্বারা কোন পণ্য কিংবা কোন বিষয় নিজেকে প্রকাশ করা হয়, তাকে বিজ্ঞাপন বলে। 

বিজ্ঞাপনের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রাচীন মিশরীয়রা পণ্য বিক্রয়ের জন্য  পণ্যের বিস্তারিত তথ্য ও গুণাগুণ জানাতে প্যাপিরাস ব্যবহার করত। প্রাচীন আরব ও ধ্বংসপ্রাপ্ত রোমান নগর পম্পেইতেও বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের নমুনা পাওয়া যায়। ইনান (Tsinan) বর্তমান পূর্ব চীনের এক পরিচিত শহর ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। এই ইনান শহর সভ্যতা ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যও বিখ্যাত। এই শহর ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে তাদের সভ্যতা, পণ্যের ব্যবহার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। বর্তমানে এই শহরকে পৃথিবী চিনেছে অন্য রূপে। এই ইনান শহর থেকেই খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ বছর আগে গঠনমূলক বিজ্ঞাপনের যাত্রা শুরু। সেখানকার ‘নিও ফ্যামিলি নিডল শপ’ তাদের তৈরিকৃত সুই বিক্রয়ের জন্য ব্রোঞ্জের প্লেটে খোদাই করে সর্বপ্রথম বিজ্ঞাপন দেয়। এমনকি সেই বিজ্ঞাপনের ভাষার সাথে বর্তমান বিজ্ঞাপনের ভাষার অনেক মিলও রয়েছে। বিজ্ঞাপনে লেখা ছিলো-

“We buy high quality steel rods and make fine quality needles, to be ready for use at home in no time.”

১৪ শতকের পর, ছাপাখানার আবিষ্কারের পর বিজ্ঞাপনে আসে প্রচারগত বিপুল  বিস্তার। সাহিত্য, বইপত্র, গবেষণার কাজে কাগজ ও ছাপাখানার ব্যবহার বৃদ্ধি ঘটে সবিস্তারে। কাগজের ব্যবহারে বিজ্ঞাপনেও গতি আসে। তাতে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোও অনেকটা সহজ হয়। পোস্টার দিয়ে বিজ্ঞাপনের সূত্রপাত তখন থেকেই। ১৪৭৬-৭৭ সালের দিকে সর্বপ্রথম ইংরেজি ভাষায় Caxton Press বই বিপণনের জন্যে লন্ডনের চার্চগুলোর দেয়ালে, ফটকে বিজ্ঞাপন দেয়।

১৭ শতকের দিকে পত্রিকার জনপ্রিয়তা ইংল্যান্ডে বাড়তে থাকার সময়টাতে  পত্রিকাকে বিজ্ঞাপনের প্রচার মাধ্যম হিসেবে প্রধান হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে। Bofton News-Letter পত্রিকায় জমি বিক্রির জন্য ক্রেতা আহ্বান পূর্বক বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়। এটিই পত্রিকা ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিজ্ঞাপন প্রচার। প্রচার মাধ্যম হিসেবে পত্রিকার জয়জয়কারে প্রায় ১০০ বছর কাটে৷ এতে উল্লেখযোগ্য হিসেবে হ্যান্ডবিল, লিফলেট সংস্করণে বিজ্ঞাপন প্রচার হয়।


টেলিভিশনে প্রথম বিজ্ঞাপন বলতে ১৯৬৪তে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র টিভি চ্যানেল পিটিভি বা বর্তমানে বিটিভি তে প্রচারিত বিজ্ঞাপন। ১৯৬৭ সালে সর্বপ্রথম প্রচারিত বিজ্ঞাপন হল ৭০৭ ডিটারজেন্ট সোপের বিজ্ঞাপন। ১৯৪১ সালে NBC এর WNBC টিভি চ্যানেলে, The Brooklyn Dodgersএর প্রতিপক্ষ হয়  Philadelphia Phillies, উক্ত ফুটবল ম্যাচের সময় সূচি প্রচার হয় একটি দেয়াল ঘড়িতে আর বর্ণনাতে একজন জানাতে থাকেন খেলা সম্পর্কে যা ২০ সেকেন্ড ব্যাপী প্রচারিত হয়। সূত্রপাত ঘটে প্রথম টিভি কমার্শিয়াল বিজ্ঞাপনের। Bulova Watch Co. উক্ত বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ সংস্থাপন করে। বিজ্ঞাপনটি তৈরি ও প্রচারে খরচ হয় সর্বমোট ৯ ডলার, বর্তমানে বিজ্ঞাপন তৈরিতে সেই অঙ্ক আমাদের দেশেই লাখে এসে পৌঁছেছে।

এখনকার মতো সে-সময়কার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনও ছিলো অনেক ক্ষেত্রে সত্য  বর্জিত। এখন যেমন বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে অনেক সময় অপ্রাসঙ্গিক মিথ্যা নানা গুণের কথা বলা হয়, সেসময়ও এমনই ছিলো। যেমন, উপরের শ্রী মতিলাল বসু এণ্ড কোম্পানির এই বিজ্ঞাপনে ‘লক্ষ্মীবিলাস তেল’এ যাবতীয় শিরঃপীড়া ও হাত-পা জ্বালা বন্ধ হওয়া, সুগন্ধী ‘গোলাপ সার’-এর সুগন্ধে মাথা ঠাণ্ডা হওয়া, গাছ-গাছড়ায় প্রস্তুত কুইনাইন বর্জিত ‘সুধাসিন্ধু রসে’ প্লীহা ও যকৃত  সংক্রান্ত জ্বর, ম্যালেরিয়া ও পুরাতন জ্বর থেকে আরোগ্য লাভ করা ইত্যাদি দাবি করা হয়েছে! অবশ্য গ্যারান্টি দেওয়া হয়নি। এ বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়েছিলো বাংলা ১৩১৫ সনে। অর্থাৎ আজ থেকে ১১০ বছর আগে!

ক্যালকাটা কেমিক্যালের মার্গো সোপ-এর বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়েছিল আনুমানিক বাংলা ১৩৪৪ সনে। অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৮১ বছর আগে। শুরু থেকেই নিম গাছের উপকারিতা উপলব্ধি করে এই কোম্পানি অনেক সামগ্রীতেই (মার্গো সাবান, নিম টুথপেস্ট, রেণুকা টয়লেট পাউডার) নিমকে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিলেতি সাবান ও টুথপেস্টের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগুলোর বিক্রিও মন্দ হত না। মার্গো সাবান ও নিম টুথপেস্ট পরে একসময়ে হেঙ্কেল ইণ্ডিয়া লিমিটেড কিনে নেয়। সেই হেঙ্কেল ইণ্ডিয়া এখন জ্যোতি ল্যাবোরেটরিজ লিমিটেড কোম্পানি নামে পরিচিত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতে আমাদের কবিতা, গল্প, গান ইত্যাদির কথা মনে পড়ে৷ কিন্তু অনেকেই আমরা জানি না তিনি বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে ছিলেন। ১৮৮৯ তাঁর গানের সম্ভার দিয়ে প্রচার শুরু। তারপর ১৯৪১ অবধি অনেক বিজ্ঞাপন করেছেন৷ রবিঠাকুরের এ-রূপ আমাদের বিস্মিত করেছে। যিনি আমাদের প্রাণের ঠাকুর, তিনি কিনা বাথরুমের সাবানের বিজ্ঞাপন করেছেন!  এক প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ে মননে মানুষের৷ কিন্তু তিনি মূলত স্বদেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন করতেন।

স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এই বিজ্ঞাপন বিষয়টি নিয়ে বিশেষ যত্নশীল ছিলেন। তিনি নিজেও বিজ্ঞাপনের ভাষা শব্দ লিখে দিয়েছিলেন অনেক প্রতিষ্ঠানকে। যেমন ‘কুন্তলীন’ নামের কেশ-তেলের বিজ্ঞাপনটি লিখেছিলেন। বিজ্ঞাপনে লেখা আছে, “কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন :- কুন্তলীন ব্যবহার করিয়া এক মাসের মধ্যে নুতন কেশ হইয়াছে।” এমনকি সেই সাথে কুন্তলীন কেশ-তেল নিয়ে কবির  লেখা একটি গানের অংশ বিশেষও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞাপনে। কুন্তলীনের এই বিজ্ঞাপনটি আজ থেকে প্রায় ৭৬ বছর আগে প্রকাশিত হয়। ‘কুন্তলীন’ তেলের জনক হেমেন্দ্র মোহন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন। তাই বলে বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুন্তলীনের গুণগান নিছক বন্ধুপ্রীতির জন্য মনে করা হলে ভুল করা হবে। বিজ্ঞাপনজগতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নাম অকাতরে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রেডিয়াম ল্যাবরেটরীর বিজ্ঞাপনও করেছেন। রেডিয়াম ক্রিম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “রুপচর্চার  জন্য স্নো ও ক্রিমজাতীয় প্রসাধন যারা ব্যবহার করেন, তারা রেডিয়াম ফ্যাক্টরির তৈরি ক্রিম ব্যবহার করে দেখুন, বিদেশি পণ্যের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য খুঁজে পাবেন না।”

ঘি থেকে শুরু করে স্নো-পাউডার, এমনকি হারমোনিয়াম পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথের লিখিত বাণী দেখা যায়। সেই সময় লেখার জন্য বাজারে পাওয়া যেত সুলেখা কালি। ডটপেন, জেলপেন ইত্যাদি তখনও বাজারে আসেনি। ঝর্ণা কলম বা ফাউন্টেন পেনে এই কালি ভরে লোকে লিখত। সুলেখা কালির বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “সুলেখা কালি। এই কালি কলঙ্কের চেয়েও কালো।”

অল্প কথায়, এরকম আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন এখন আর চোখে পড়ে না। বিদেশি কোম্পানি পার্কারের Quink এবং শেফার্সের Skripএর সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়েছিল সুলেখাকে। ফাউন্টেন পেনের ভালো কালি বানানো সহজসাধ্য ছিল না। কালি যেন শুকিয়ে গিয়ে নিব দিয়ে কালি ঝরা বন্ধ না করে - কালির উপাদান নির্বাচনে সেটি ছিল মস্ত বড় বিষয়। তাছাড়া লেখা যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে না হয়, সহজে উৎপাদন করা যায় – সবই ছিল বিবেচ্য বিষয়। রবীন্দ্রনাথের এই ঢালাও সুখ্যাতি সুলেখা কালিকে বাজারে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছিলো, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

১৯৬০ সালে ‘দেশ সাহিত্য সংখ্যা’ থেকে আরেকটি বিজ্ঞাপনের সন্ধান পাওয়া যায়। এটি হলো ‘কাজলকালী’র বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের ভাষাটি ছিলো, “কাজলকালী ব্যবহার করে সন্তোষ লাভ করেছি, এর কালিমা বিদেশী কালীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয় - ইতি ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩০, শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বোর্ন-ভিটার বিজ্ঞাপনেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনে কবির স্বহস্তে লেখা চিঠিতে দেখা যাচ্ছে তিনি লিখেছেন, “বোর্ন-ভিটা সেবনে উপকার পাইয়াছি।”

রবীন্দ্রনাথের আরেকটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন ছিল ‘জলযোগ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’এর জন্য। ঐ বিজ্ঞাপনে তিনি লিখেছিলেন, “জলযোগের বানানো মিষ্টান্ন আমি চেখে দেখেছি। এটা আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে। এর আলাদা স্বাদ আছে।”  জলযোগ সে যুগে কেকের জন্য বিখ্যাত হলেও রবীন্দ্রনাথের সার্টিফিকেটের সুবাদে মিষ্টান্ন জগতেও প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ পেয়েছিল।

সে-সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরও অনেক বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন। তাঁকে লিখতে  হয়েছিলো, তাঁর নিজের জন্য ও তাঁর শান্তিনিকেতনের জন্য! এমনকি এস সি রায় এন্ড কোং এর ড. উমেশচন্দ্র রায়ের কথিত পাগলের মহৌষধের বিজ্ঞাপনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন।


ভারতবর্ষের পূর্ব রেলওয়ের বিজ্ঞাপনেও রবীন্দ্রনাথের কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। পূর্ব রেলওয়ের বিজ্ঞাপনে কবির ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতার দু’লাইন তুলে দেয়া হয়েছে। এয়ারলাইন্সের বিজ্ঞাপনেও রবীন্দ্রনাথের লেখা পাওয়া যায়। কবি ‘কে এল এম রয়াল ডাচ’ এয়ারলাইন্সের জন্য বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন। রয়াল ডাচ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সেই বিজ্ঞাপন ‘গুরুদেবের বিমানযাত্রা’ শিরোনামে বিশ্বভারতী পত্রিকায় প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞাপনী সংস্থার আগমনঃ

বর্তমানে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো মূলত ক্রিয়েটিভ এজেন্সি হিসেবেই বেশি পরিচিত। এধরনের সংস্থাগুলো মূলত একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদানকৃত সেবা বা  পণ্যগুলোর সৃজনশীল ব্র্যান্ডিং থেকে শুরু করে নানান প্ল্যাটফর্মে প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করে যায়। সংস্থাগুলো কোনো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিভাগ হতে  পারে, কিংবা স্বাধীন ফার্ম হিসেবেও কাজ করে থাকে। বর্তমানে এগুলো বেশ চোখে পড়লেও আজ থেকে প্রায় দু’শত বছর পূর্বে হাতেগোনা কয়েকটি বিজ্ঞাপনী  সংস্থার অস্তিত্ব ছিল। ইতিহাসে প্রথম বিজ্ঞাপনী সংস্থাটি শুরু হয় ১৭৮৬ সালে লন্ডনে, উইলিয়াম টেইলরের হাত ধরে। তাছাড়া প্রথম দিককার বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ফ্ল্যাট স্ট্রিট, লন্ডনের জেমস ‘জেম’ হ্যোয়াইট, লন্ডন গ্যাজেটের অফিসার জর্ন রেয়নেল’য়ের নামও উঠে আসে। তবে ইউরোপের বাইরে আমেরিকা, কানাডা এবং পুরো পৃথিবীব্যাপী বিজ্ঞাপনী সংস্থার  অগ্রদূত হিসেবে ‘ভলনে বি. পালমার’কে স্মরণ করা হয়৷ বর্তমান যুগে বিজ্ঞাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চলে এসেছে। দৈনন্দিন জীবনে সবকিছুই বিজ্ঞাপনের বিষয় হয়ে উঠেছে। টিভি খুললেই চোখে পড়ে রঙিন আলোর বিজ্ঞাপন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই উপভোগ করে সেইসব বিজ্ঞাপন।

 


1 টি মন্তব্য: