সমকালীন ছোটগল্প |
অ-সুখ
বৃন্দা ফুল তোলে। ফুলগুলো পোকায় খেয়েছে বোধহয়। খাওয়ার দাগ। বৃন্দা
নৃপেনবাবুদের বাড়ি কাজ করে। নৃপেনবাবুর চাউনিটা ভালো লাগে না বৃন্দার। অশোক ফিরলে
সব বলতে হবে। অশোক মুম্বাই গেছে কাজ করতে। কীসব অসুখ হচ্ছে আজকাল। অশোকটার যেন কিছু
না হয়! এবারেও ফিরলেই ডাক্তারের কাছে যেতে
হবে। ওপাড়ার দাশগুপ্ত ডাক্তার। বিয়ের পাঁচবছর হতে চলল। এখনো কিছু হলো না। অশোক চার-পাঁচ
মাসে একবার করে আসে। নৃপেনবাবুর ছোটবৌমা যায় ওই ডাক্তারের কাছে। ভিজিটটা একটু বেশি
নেয়। ছোটবৌদি পোয়াতি, বিয়ের চারবছর পর। ছোটবৌদিকে বলবে বৃন্দা, যদি একটু ভিজিট কম-টম
নেয়। এখন সব বন্ধ। লকডাউন। রোজগারপাতিও বন্ধ। শুধু খিদেটা যে কেন...! বৃন্দারও দু’মাস কাজ বন্ধ ছিল।
ছোটবৌদি পোয়াতি হল ভাগ্যিস! তার নাকি এটা
সেটা খেতে ইচ্ছে করে, বমি পায়। সব সামলে উঠতে পারছিল না জেঠিমা। তাই বৃন্দার ডাক পড়ল।
এই সময়ে ওরকমই হয় বুঝি! আচ্ছা বৃন্দার সময় কে করবে এসব? নিজের মা-বাপ কবেই গেছে।
শাশুড়ি তো ঠিক করে হাঁটতেই পারে না। সারাক্ষণ উল্টোপাল্টা বকবক করে চলেছে। অশোককে
বলবে তখন এখানে কিছু কাজ করতে। আর যেতে দেবে না মুম্বাই। কাজ থেকে ফিরে রোজ সোহাগ করবে। বউ পোয়াতি হলে বরের
সোহাগ বেড়ে যায়। বৃন্দা দেখেছে ছোটবৌদিদের ঘরে। বৃন্দারও ইচ্ছে করে। বৃন্দা স্বপ্ন
দেখে। সুখের স্বপ্ন।
কাল অশোক ফোন করেছিল। ওদের ওখানে খুব হচ্ছে অসুখটা। এদিকেও তো বেড়ে
গেছে। অশোকের রোজগার বন্ধ। একবেলা খেয়ে আছে কোনমতে। ওর এক বন্ধুর নাকি হয়েছে। অশোকের
সঙ্গেই থাকত একঘরে। ঘেঁষাঘেঁষি করে। তাই অশোককে 'ধরে' নিয়ে গেছে। কিছু না হলে চোদ্দদিন
পরে ছেড়ে দেবে। নৃপেনবাবুকে অশোকের একটা কাজের কথা বলতে হবে। কিন্তু ওনার সেই চাউনিটা…!
গায়ে হাত-টাত দেয় না তবে! আসলে বৃন্দার তিনকুলে কেউ নেই যাকে বলবে কাজের কথা। অশোক ফিরলে কিছু একটা করে খেতে
হবে তো! শাশুড়ি দিনরাত শাপ-শাপান্ত করে। বৃন্দা
নাকি অপয়া! ওবাড়ির জেঠিমাকে বলেছিল প্রথমে অশোকের কাজের কথা। "তোর জেঠুকে বল,
আমায় বলে ্কী হবে!"
অশোক আসছে। এতটা রাস্তা নাকি হেঁটে আসবে বলছে। ওর কোন অসুখ হয়নি।
"শুধু চিন্তায় চিন্তায় খিদেটা বেশি পাচ্ছে"। মজা করে বলছিল অশোক। নৃপেনবাবুকে
বলেছে বৃন্দা। "অশোক আসুক, কিছু একটা কাজের ব্যবস্থা হয়ে যাবে"। ব্যবস্থা
তো করতেই হতো। আজ ওরা দুজন, কাল সংসার বাড়বে। বুড়ি শাশুড়িটাও আছে। মাঝে মাঝে কেমন
ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে বুড়িটা। বৃন্দা বোঝে। যেমন বোঝে নৃপেনবাবুর ইচ্ছেটা।
অশোকের ফোনটা পাচ্ছে না কিছুতেই বৃন্দা। চার্জ নেই হয়ত। কবেকার ফোন!
কাল রাতে শেষবার কথা হয়েছিল। "বড্ড ঘুম
পাচ্ছে, ক্লান্ত লাগছে, আর পারছি না”। রেললাইন বরাবর হেঁটে আসছিল। এতে নাকি রাস্তা
হারিয়ে ফেলার ভয় থাকে না। খাওয়া নেই, দাওয়া নেই, জোর পাবে কি করে! এলে একটু ভালো–মন্দ
রান্না করে খাওয়াবে বৃন্দা। দুটো রুটি কিনেছিল রাস্তায়, খেয়েছে কিনা কে জানে! অশোকের
কাজের ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছে বৃন্দা। সেটাই বলত ফোনে। কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছে না
ফোনটা। বৃন্দার কাঁধের কাছটা খুব ব্যথা। একটা দাগ। নৃপেনবাবুর দাঁতটা...! উফ! বড্ড
লেগেছিল বৃন্দার...
ভালো লাগল। '...নৃপেনবাবুর 'দাঁতটা' আর '...দুটো রুটি কিনেছিল...'-এই শব্দসব অন্য মাত্রায় নিয়ে গেল গল্পটিকে।
উত্তরমুছুনঅভিনন্দ।
Aneek Dhonyobaad
মুছুন