বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

নন্দিনী পাল




কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৬


জন-গণ-মন

ঝরঝরে টিনের বাসটায় উঠে প্রবাল খবরের কাগজটা বার করে। সারাদিনে এই সময়টায় কাগজ পড়ে সে। অফিস যাবার পথে। বাসটা আজ অন্যদিনের থেকে  ফাঁকা। জানালার কাছে একটা সিট পেয়ে গেল। একটু আগে একপশলা বৃষ্টি হয়ে  গেছে। ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগামাত্র কপালের উপর জমে থাকা ঘামের বিন্দুগুলো মিলিয়ে যেতে থাকে নিমেষে। বাসটা থেকে থেকে হাওয়া ব্রেক মারছে। পিছন থেকে অফিস যাত্রীরা রে-রে করে ওঠে – দাদা চালান! এই ছ্যাতরা গাড়িটা আর কতদিন টানবেন?

সত্যিই তাই, প্রবাল দেখে আসছে এত বছরে কত কিছু পরিবর্তন হল।  কম্পিউটার, ফেসবু্‌ক, মেট্রো, মালটিপ্লেক্স, কিন্তু কলকাতার রাস্তায় এই টিনের বেসরকারি বাসগুলো আগেও যেমন ছিল, এখনও তাই আছে। রাস্তার ধারে  দেওয়ালে দেওয়ালে ব্রিগেড চলোর আহ্বান। রোজ রোজ মিছিল। পলিটিক্যাল পার্টিগুলো ভোট এলেই তর্জাগানে মেতে ওঠে। সামান্য সব কারণকে ইস্যু করে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে। অথচ সাধারণ মানুষ যে তিমিরে ছিল এখনো সেই তিমিরেই।

হাজরার মোড় আসতে কিছু স্কুলগামী কচিকাঁচা উঠে পড়ে বাসে আর তাতেই আবহাওয়াটা বেশ আনন্দ কলরবে ভরে যায়। প্রবালের ঠিক পিছনের সিট খালি হতে দুই স্কুল পড়ুয়া এসে বসে। সাত-আট বছরের, অনেক জমানো কথা  তাদের, নতুন শেখা কবিতাটা বন্ধুকে শোনাতে হবে, পেন্সিলবক্স খুলে ক্রেয়ন রংগুলোকে কীভাবে পেন্সিল কাটারে সরু করা যায়  তার পদ্ধতি, গতকাল স্কুলে  মিস সহপাঠীকে বকেছে আরও কত কি! শৈশবের নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের গল্পগাঁথা। কাগজ পরার ফাঁকে প্রবালের কানে আসে সেসব।

খবরের কাগজের পাতায় নানা খবর, পাকিস্থানে জঙ্গী সেনা সংঘর্ষ, ডেঙ্গু আসছে সরকার নাকি আগাম সতর্কতা নিয়েছে, ব্যাঙ্গালোরে সিনেমাহলে জাতীয় সংগীত চলাকালীন না দাঁড়ানোয় পুরো পরিবারকে এফ-আই-আর।                           
জন-গণ-মন অধিনায়ক জয় হে…
পিছন ফিরে তাকায় প্রবাল। স্কুল পড়ুয়ারা তাদের প্রার্থনাসংগীত গাইছে গলা ছেড়ে, দুলে দুলে, হাত পা নেড়ে।                                                                                                                     
প্রবাল মজা করে বলে, এবার তো আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে! খুব অবাক চোখে তাকায় তারা। কয়েক সেকেন্ড। তারপর আবার শুরু হয় গান। মৃদু হেসে  প্রবাল কাগজটা মুড়ে ব্যাগে ঢোকায়।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন