সমকালীন ছোটগল্প |
রং
(১)
—স্যার, আর নয়টাকা দেন না!
জসীম কথাটা বলে নিজে চমকায় না। সে ইচ্ছা করেই
বলেছে। প্যাসেঞ্জার যদিও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, কিন্তু জসীম সেটা মনে নিল না। আসলে
সে চায় প্যাসেঞ্জার তাকে নয়টাকা বেশি দিক। প্যাসেঞ্জারটা মানিব্যাগ থেকে দশটাকা
বের করে এগিয়ে দিল। তৎক্ষণাৎ জসীমের মন খারাপ হয়ে গেল। ও যা চাচ্ছিল সেটা পেল না।
ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্যাসেঞ্জার বিরক্ত হয়ে গেল। অতিষ্ঠ গলায় বলল— কী হল, নিন!
জসীমের ইচ্ছা করল টাকাটা প্যাসেঞ্জারের সামনেই
ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলতে। চড়-থাপ্পড় খাবার ভয় নেই, রিকশাচালক চড়-থাপ্পড় খাবে এটাই
স্বাভাবিক। প্যাসেঞ্জার হঠাৎ জসীমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল— দেখুন, ভাঙতি নেই।
পাঁচটাকা আছে শুধু।
জসীমের সাথে সাথে মন ভালো হয়ে গেল। বলল— স্যার,
দশটাকা লাগবো না। পাঁচটাকাই দেন।
প্যাসেঞ্জার এবার চমকে গেল। জসীমের মনের ব্যাপারটা
সে বুঝতে পারছে না। পাঁচটাকা বের করতেই জসীমের মনে হাসি ফুটে উঠলো। ওর চোখের পাঁচ
টাকার নোটের সেই পাঁচ শব্দটা দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে। একটা সবুজ আর কমলা রঙ ওর চোখের
সামনে ঝিলিক দিয়ে উঠলো। জসীমের ইচ্ছা করল প্যাসেঞ্জারকে বলে— স্যার, দেখসেন? পাঁচ
সংখ্যাটা থেইকা কী সুন্দর কমলা আর সবুজ রঙ আসতাসে?
প্যাসেঞ্জার ততক্ষণে রাস্তা পার হয়ে গেছে।
জসীম চারপাশে তাকালো। সাথে সাথে তার মন আরো ভালো
হয়ে গেল। একটা রেস্টুরেন্ট রাস্তার পাশে। বিল্ডিংয়ের শরীরে বড় করে লেখা— "9
restaurant"।
restaurant শব্দটা জসীম পড়তে পারে না। কিন্তু বড়
করে "9" লেখা দেখে ভালো লাগছে। রংটা যদিও ভুল করেছে। গাঢ় লাল রং করা
উচিত হয়নি। আসলে উচিত ছিল ঘন নীল রঙ দিয়ে "9"এর পুরো শরীরটা ঢেকে দেওয়া।
জসীম জোরে জোরে বলল— নয়, নয়।
সাথে সাথে ওর চোখের সামনে ঘন নীল রঙের আভা ফুটে
উঠলো। জসীম রঙটার স্বাদ পাচ্ছে। ধনেপাতা দিয়ে বুটের ডাল রান্না করলে যেমন স্বাদ হয়
সেরকম। আরো কিছুক্ষণ থাকার ইচ্ছা থাকলেও জসীম পারলো না। এক ভদ্রমহিলা রিকশায় উঠে
বললেন— কাকরাইল, অডিট ভবনের দিকে।
জসীমের একটুও আফসোস হল না। কারণ ভদ্রমহিলা এত কথা
বলার সাথে সাথে তার চোখে একটা রংধনু জেগে উঠলো। জসীম ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে
হাসিমুখে বলল— আফা, শব্দগুলা সুন্দর না?
ভদ্রমহিলা বিচলিত হয়ে বলল— আবোলতাবোল কী বলছেন?
তাড়াতাড়ি যান।
জসীমের এসব হত সেই গোডিম কাল থেকে। এটা ওর ধারণা।
বস্তির উপরের ছাউনির ফুটো দিয়ে যখন আলো চুঁইয়ে পড়ে, সে তখন পুরোদিনের হাড়ভাঙা
পরিশ্রমের কথা ভুলে যায়।
বাবার পড়ালেখা করানোর সামর্থ্য ছিল না। নাম শরীফ
মিয়া। শরীফ মিয়ার কাজ ছিল গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মজুরির কাজ নেওয়া ।এ ধরনের
পেশায় জড়িতদের পরিবাররাই দুনিয়ার সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন হয়। জসীমও অনেক
দেখেছে। পেট বলতে গেলে দশঘণ্টা পর পর ভরতো। মাঝে মাঝে গ্রামে ঘুরে ঘুরে জসীম
পেয়ারা, আমরাঙা, বরই কুড়িয়ে খেত। বাবা-মার প্রতি তার কোন ক্ষোভ ছিল না। ক্ষোভ না
থাকারও একমাত্র কারণ একটা ধর্মীয় পরিবেশের আভা থাকা। শরীফ মিয়া রাত পর্যন্ত কাজ
করে গ্রামের এক মসজিদে চলে যেতেন। ফিরতেন গভীর রাতে। এসেই জসীমকে ডাক দিতেন। শুরু করতেন
বিভিন্ন নবী-রাসূলের গল্প। তখনই জসীম প্রথম তার সুপ্ত বৈশিষ্ট্যটা বুঝে ফেলে। সে
চোখের সামনে দেখতে থাকে বাবা যেসব নবীদের নাম নেন এদের সবার নাম উচ্চারণ করলেই
মেঘের মতো সাদা স্তম্ভ চোখে গড়ে উঠে। বাবাকে এই কারণেই জসীম খুব ভালোবাসতো।
বৈশিষ্ট্যটা আরো প্রকাশিত হতে শুরু করে যখন গ্রামে
একটা এনজিও গ্রুপ এল। তাদের কাজ ছিল গ্রামের শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়া। জসীম মায়ের
আপত্তি সত্ত্বেও ওখানে যেয়ে বসে থাকতো। এনজিওর কর্মী সবাইকে বলত— বলো, ‘অ’।
সবাই বলতো ‘অ’। জসীমের আরামে চোখ বুজে যেত। ও
স্পষ্ট দেখতে পেত ‘অ’ অক্ষরটার শরীর থেকে লাল রংটা ফেটে পড়ছে। আর কেউ লক্ষ্য করেছে
কিনা জসীমের খুব জানতে ইচ্ছা করতো। কিন্তু ও কাউকে জিজ্ঞাসা করতো না।
নিম্নবিত্ত পরিবারে কম বয়সী বাচ্চাদের বাবা-মা
ছোটবেলায় মারা যাবে না, তা হয় না। কাউকে না কাউকে মরতেই হয়। কিশোর বয়সে জসীমের
বাবা মারা গেল। মাকে নিয়ে একজনের দয়ায় মাল বোঝাইয়ের ট্রাকে করে জসীম ঢাকায় চলে এল।
ঢাকায় এসে প্রথম ঝামেলা হল বস্তিতে থাকা নিয়ে। বস্তিতে নতুনদের থাকতে দেওয়া হবে না
এমন একটা নিয়ম জারি হয়েছিল। জসীম মাকে নিয়ে ফুটপাতে বসে থাকতো। মাঝে মাঝে খবরের
কাগজের লোকেরা এসে তাদের ছবি তুলতো। এভাবে একদিন মাও চলে গেল। সেখানেও একটা জাগতিক
টুইস্ট ছিল। ফুটপাতের কাছেই এক ভ্যানচালক ডেলিভারির কাজ করতো। একদিন মা জসীমকে বলল—
আব্বা, তুই থাক, আমি আইতাসি।
জসীম স্পষ্ট দেখেছিল রাস্তার ওপারে ভ্যানচালক
দাঁড়ানো। মা তার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল। মার সাথে সেই শেষ দেখা। কিন্তু
মার সেই ছোটবেলার আদর জসীম কখনো ভুলতে পারেনি। মার কী দোষ, এমন অনিশ্চিত ভাগ্যের
যুদ্ধে কে টিকতে পারে?
মা চলে গিয়েই হয়ত জসীমের ভাগ্য খুলেছিল। কারণ
কয়েকদিন পরেই ফুটপাতের সামনে একটা গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে এক ভদ্রলোক নেমে এসে বলল—
তোর কথা পেপারে পড়েছি ।মা কই?
জসীম পারেনি। হাউমাউ করে কেঁদে দিল। ভদ্রলোক ওকে
নিয়ে একটা হোটেলে ভালোমতো খাওয়ালেন। তারপর একটা রিকশার গ্যারেজে নিয়ে গেলেন। এত
উপকার করে ভদ্রলোক কোথায় চলে গেলেন জসীম জানে না। তবে মনে একটা আফসোস যে ভদ্রলোকের
নাম সে জানে না। নামটা থেকে হয়ত সাদা রঙয়ের স্তম্ভ চোখের সামনে ফুটে উঠবে। জসীম
মাঝে মাঝে কল্পনা করে। ভদ্রলোকের চেহারা ভুলে গেছে। কিন্তু নামটা রাত জেগে জেগে
ভাবে।
বস্তিতে ফিরে এসে জসীম নরম গলায় ডাকলো— জুলেখা, জুলেখা
কই রে?
জুলেখা ফিরলো কিছুক্ষণ পর। পুলিশ স্টেশনের
ট্যাঙ্কি থেকে পানি আনতে গিয়েছিল। জুলেখা বললেই হলুদ রঙের বউ কথা পাখির মতো একটা
ক্ষুদ্র শরীর জসীমের চোখের সামনে উড়ে
বেড়ায়। খুব ভালো লাগে। ওরও ভাবতে ভালো লাগে এই জুলেখা ওর বউ। অথচ জুলেখাকে পেতে কম
কষ্ট করতে হয়নি। বস্তিতে জুলেখাকে কতজন খেয়েছে কে জানে। একটা ছেলেও আছে, মাজাহার
নাম। বস্তিতে একদিন একটা দল এসে হাজির হয়ে জানালো জুলেখার জন্য ওরা ঠিকমতো
কাস্টমার পায় না। হয় জুলেখাকে বিয়ে করতে হবে নইলে বস্তি থেকে বিতাড়িত হবে। জসীম
অবাক হয়ে দেখেছিল কেউ জুলেখার পক্ষে গেল না। দুধের শিশুকে নিয়ে কোথায় যাবে সে
চিন্তায় সে অস্থির। জসীম তখন আর পারলো না। নিজেই গিয়ে বলল— তোমারে বিয়ে করব। এই
বাচ্চা কার আমি জানি না, জানার দরকারও নাই। তয় বিয়ার পর ও আমারই বাচ্চা হইব। এখন
কও তুমি রাজি?
সেই থেকে জুলেখা জসীমের বউ। বিয়ের দুই বছর পর
জসীমের আরেকটা ছেলে হয়েছে, নাম একরাম। বয়স প্রায় ছয়। একরাম, মাজাহার দুইজনই জসীমের
খুব প্রিয়। কিন্তু মাজাহার কেমন বখে গেছে। বস্তিতে ওর নামে সবার রাজ্যের যত
অভিযোগ।
জুলেখা বোতলগুলি নামিয় বলল— হাত ধোন।
জসীম প্লাস্টিকের শেডে বানানো শোয়ার জায়গায় বসলো।
বলল— মাজাহার কই?
জুলেখা রাগে ফেটে পড়ল। বলল— জানি না কই শুয়োয়ের
বাচ্চাটা।
একরাম পাশে ঘুমিয়ে আছে। জসীমের ওর গায়ে হাত রাখল। শরীরে
অনেক উত্তাপ। জুলেখাকে বলল— হের মাথায় পানি ঢালসিলা?
— হ।
একরামের শরীরটা আস্তে আস্তে খারাপ হচ্ছে জ্বরে
ভুগে।
জুলেখা বলল— খাবেন না?
জসীম উঠে বলল— মাজাহারকে নিয়া আসি। হেও তো খায়
নাই।
জুলেখা বাধা দিল। বলল— জায়েন না, একলাই আইবো।
রাতে জসীম জুলেখাকে আদর করে। আরেকটু জায়গা থাকলে
আরামে কাজ সারা যেত। কিছুক্ষণ পর পরই জুলেখা বলে— একরাম জাইগা যাবে। কী করেন এসব?
জসীম শোনে না। শরীরের আহার মেটায়। কলা আর রুটি
খেয়ে পেট না ভরলেও জুলেখাকে আদর করে শরীর ঠিকই ভরে।
প্রত্যেকের জীবনে রিফ্রেশমেন্ট থাকে। এটা
বাধ্যতামূলক। সেভাবে জসীমেরও একটা রিফ্রেশমেন্ট আছে। মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় সে রিকশা
নিয়ে বের হয় না। সোজা কাওরানবাজার বস্তিতে চলে যায়। ওখানে থাকেন সমর ভাই। তার সে
যে আত্মীয়তা এত কম সময়ে জসীমের তৈরি হয়েছে প্রায় অবাস্তব না। সমর ভাইয়ের কোন
বিশেষত্ব নেই। এ ধরনের লোকদের কোন বিশেষত্ব থাকেও না। কিন্তু উনি মাঝে মাঝে কিছু
জাগতিক কথা বলেন।
যেমন একদিন বললেন— কও তো জসীম, রিযিকের খেলা কী?
জসীম বলতে পারলো না। তার ওসব নিয়ে ভাবনা নেই। রোজগার
যা হয় তা দিয়ে পেট অন্তত ভরে। সমর ভাই ওকে চুপ থাকতে দেখে বললেন— ভাইবা দেখ তো, একদিন
ধরো নিয়ত করলা তুমি ভাত খাইবা। ভাত খাইবার জন্য হাত ধুইয়া বইসাও। কিন্তু তহনই
দেখলা রিযিকটা বদলায় গেল। তোমার বউ আইসা তোমারে পাউরুটি খাওয়াইলো। এমন হয় নাই
কুনোদিন?
জসীম ভাবতে লাগল। হ্যাঁ, তাই তো। এমন কত হয়েছে।
দুপুরে ফুটপাতে সস্তা রুটি খেতে যেয়ে
কতবার কোন ভদ্রলোক এসে বলেছে— হোটেলে খাবেন?
পরে হোটেলে নিয়ে যেয়ে মুরগি ভাত খাইয়েছে।
এরপর থেকেই জসীম খেতে বসলে রিযিকের কথা ভাবে। এই
ক্ষুদ্রতাই কত বৈচিত্র্যময়। কত শৈল্পিক এবং অনুমেয়।
পরের দিন জসীম এক স্কুলের সামনে রিকশা নিয়ে
দাঁড়িয়ে। হঠাৎ একটা কিশোর ছেলে বলল- আংকেল যাবেন?
আংকেল শব্দটা জসীম উচ্চারণ করতে পারে না। তবে
শব্দটার রং ওর চোখ ঠিকই শুষে নেয়। কালোর সাথে সামান্য লাল।
সাধারণত সবাই বলে ‘এই যাবা’। কিন্তু ছেলেটার মুখে
আংকেল শুনে জসীমের ভালো লাগল। জসীম কম ভাড়ায় রাজি হয়ে গেল।
রিকশা চালাতে চালাতে সে পিছনে ফিরে বলল— বাজান,
জানেন আমার দুই ছেলে।
ছেলেটি অবজ্ঞা করলো না। সেও কথা বলতে চায়। বলল- তাই
নাকি? পড়ালেখা করে?
জসীম মাজাহারের কথা বলতে পারলো না। তবে একরাম পড়ে।বস্তির
রাস্তা পার হয়ে গেলে সামনে যে দেওয়াল পড়ে সেখানে লেখা সব শব্দ, বাক্য একরামের
মুখস্থ। জসীমের খুব শখ আরো টাকা পয়সা হলে একরামকে স্কুলে দেবে। রিকশায় প্যাসেঞ্জার ভূমিকায় বসা ছেলেটিও খুব
খুশি হল শুনে। বলল— হ্যাঁ দিবেন নিশ্চয়ই। এত মেধাবী ছেলে।
জসীম গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর স্বভাবতই বলল- বাজান,
নয়টাকা বেশি দিবেন?
ছেলেটি মোটেও বিরক্ত হল না। পাঁচটাকা আর দুই টাকার
নোট বের করে জসীমকে দিল। জসীম এবার ভুললো
না। বলল— বাজান, আপনার নাম কী?
— অনীক।
রাতে ফিরে দেখল একরাম বস্তির বাইরে বসে আছে। কোথা
থেকে সামান্য কয়লা আর কাগজ জোগাড় করে আঁকাআঁকি করছে। জসীম খুব খুশি হল। সে ছেলের
পাশে বসে পড়লো। একরামকে বলল— বাজান জানোস, নয় সংখ্যাটার রং হইল নীল। পাঁচ
সংখ্যাটার রং টিয়া। এবার তুই ক সাত সংখ্যাটার রঙ কী?
একরাম উত্তর দেয় না। শুধু হাসে। বাবার এই পাগলামি
ওর কাছে খেলার মতো।
জসীম পরের দিন আবার সেই একই সময়ে স্কুলটার সামনে
চলে গেল। গিয়ে সেইদিনের ছেলেটাকে পেল। এবারও তাকে রিকশায় নিল। গতরাতে একরামের সাথে
কী করেছে সব সে ছেলেটিকে বলল। ছেলেটি না হয় ধৈর্যচ্যুত, না হয় বিরক্ত। পরম মমতায়
শুনে যায়। আবেগে জসীমের চোখে পানি আসে।
রিকশা থেকে নেমে ছেলেটি নিজেই নয় টাকার ভাঙতি
জসীমের দিকে দিয়ে বলল— আংকেল, নেন!
এই তুচ্ছ বিষয় মনে রেখেছে দেখে জসীম আরো আবেগপ্রবণ
হয়ে যায়।
রাতে জসীম ফিরে এসে দেখে একরাম বিছনায় শুয়ে কাতরাচ্ছে।
জুলেখা কাঁদছে। জ্বর আগের চেয়ে বেড়েছে। বিড়বিড় করছে। ব্যথায় ওর সারা শরীর কুঁচকে
যাচ্ছে। জসীম সাথে সাথে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। ডাক্তার দেখেই বুঝলেন ডেঙ্গু।
কিন্তু হাসপাতালের ভিতরে ওর জায়গা হল না। থাকতে হল বারান্দায়।
জসীম জুলেখাকে বলল— তোমার কাছে যে টাকা জমা রাখতাম,
সেটা দাও। একরামের চিকিৎসা করামু।
জুলেখা আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না। কেঁদে
ফেললো। জসীম রিকশা নিয়ে বস্তি থেকে বের হওয়ার পরই মাজাহার আর ওর পঙ্গপাল এসে
জসীমের জমানো সব টাকা নিয়ে গেছে।
জসীম মাজাহারকে ঘৃণা করতে পারলো না। কিন্তু ওর
কষ্ট হচ্ছে। কারণ এখন মাজাহারের নাম নিলেও নামটার রং আর সাদা আসে না। আসে কাক
কালো।
একরামকে হাসপাতালে রেখে জসীম বস্তির পথ ধরলো। রিকশার
গ্যারেজের মালিকের কাছে সাহায্য চাইবে। ভদ্রলোক খুব ভালোমানুষ। খালি হাতে ফেরাবে
না। কিন্তু বস্তিতে ফিরে এসে দেখল, পুরো বস্তি দাউ দাউ আগুনে পুড়ছে। বস্তিতে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
(২)
—আরে আংকেল! আপনি?
জসীম ইস্কাটন মোড়ে রিকশা নিয়ে বসেছিল। জসীম চিনতে
পেরেছে। স্কুলের সামনে যে ছেলেটির জন্য সে অপেক্ষা করত, সেই ছেলেটি।
ছেলেটি হাসিমুখে বলল— আংকেল, একরাম কেমন আছে? স্কুলে
ভর্তি করিয়েছেন?
জসীম অনেকদিন কাঁদেনি। এবার ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে
হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। অনেকদিন জসীম কোন ভালো মানুষের নাম শুনলেও তাদের নামের
সাদা রংয়ের স্তম্ভ আর দেখতে পায় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন