সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

মৌলীনাথ গোস্বামী




কবিতার কালিমাটি ১০১


মরমিয়া

শিরিষ গাছের নিচে শুয়ে থাকে ভাঙা-সিঁড়ি ঘাট
ছায়াছায়া হাওয়া দেয়
ভেজাভেজা ঘাটের দুপুর
গঙ্গায় ডুব দেয়-
বয়সের সিঁড়ি ভেঙে বার্ধক্যের পাড়ে উঠে আসে...
শুকনো পাতার দল
গোড়ালির সুকুমার আর্দ্রতা ভালোবাসে
পায়ে পায়ে একাকী হৃদয়
যুবতী ঘাসের বুকে ঘরকন্নার কথা কয়
শুয়ে থাকে
চেয়ে দেখে
ছায়াময় পাড়া ছেড়ে, এঁকেবেঁকে নদীর মতন
খড়ি ওঠা আলপথ ধরে
 
পরজনমের দিকে ভেজা গায়ে হেঁটে যায় প্রেম...


সাবার্বান

রোদ্দুর মুড়ি দিয়ে
বেঞ্চিতে শুয়েছিল, হরিতকি গাছের ছাওয়ায়
শুয়ে থাকে, বসে থাকে
একটানা সময়ের যতিহীন ফাঁকে ফাঁকে
ঝালমুড়ি, দিলখুশ, জয়নগরের মোয়া
ঠাণ্ডা চায়ের কিছু মিয়ানো ধোঁয়া
তার সাথে বসে থাকে দেহ ব্যবসায়
কোথাও যাবার নেই
তার বাড়ি এখানেই
এখানেই শেকড়বাকড়
যত মুখ কাছে আসে যাপনের বারোমাসে
তত মুখ ফিরে চলে যায়

বেকার বাউল বুড়ো নরম ঘরণী
হাতকাটা বাঁশি আর ভিক্ষুক খঞ্জনী
কে বা এসে রয়ে যায় স্থবির ডাঙায়?
শুধু, অনুগত হরিয়াল এক, দু-একটা ডাহুক
একমনে মেপে যায় স্টেশনের বিপন্ন সুখ
পৃথিবীর সামুহিক প্রত্যাখ্যান
সিটি দিতে দিতে
ফেলে রেখে চলে যায় জীবনের সব মেলট্রেন...
রেল লাইনের পাশে
একা শুয়ে থাকে প্ল্যাটফর্ম
খোঁজে, দু-দণ্ড গল্পের তরে - নাগরিক নয়
ব্যস্ততাহীন এক বনলতা সেন


আলোকের অভিসম্পাতে

আবার জাগিব বুঝি, না হলেই নয়?
যন্ত্রণা দেয়
পৃথিবীর ব্যর্থ বিছানা
 
ঘুম ভেঙে ভেঙে যায় রাত্রির শেষ চিলেকোঠায়
যে জানালা বন্ধের প্রয়োজন হয় নাকো আর
সেই পথ ধরে চাঁদ---
আলগোছে চাঁদ এসে টেবিলের 'পর
পাতা উল্টিয়ে দেখে যায় দাগহীন নিরক্ষর দলিল
স্বপ্নের আহত উপক্রমণিকা
পরিত্যক্ত ঈশ্বর!
সেইসব গাঢ় রাত
ধিকিধিকি ধিকিধিকি
সারা রাত ধরে জ্বলে অন্তঃসত্ত্বা আগুন
পুড়ে যায় এত এত মুহূর্তের ঘন সন্নিবেশ
জাগিতেই হবে তবে? না জাগিলে নয়--
হে আমার আলোময়
হে আমার বিনিদ্র যাপনের দেশ
নক্ষত্রেরা একে একে নিভে গেলে একা
ফুরায়ে ফুরায়ে গেলে রাতেদের নশ্বর বাগান
স্তোত্রমুখী সকালের শ্মশানে
চিতায় চড়াব আমি ছিরিছাঁদহীন এই ভ্রষ্ট সময়...
ভাসাব রাতের অস্থি সকালের অলকানন্দায়
তবেই তো একদিন
 
ভালো ঘুম হবে
তারপর আর জেগে থাকা নয়...
না হলেই নয়?



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন