কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫ |
গল্পগুলো
গল্পগুলোগল্পের মতো পড়তে মনে হলেও মনের ক্যানভাসে যেন জীবনের খণ্ডখণ্ড
কিছু চিত্ররুপ। মনে হতে পারে প্রমত্তা এক নদী ছুটে চলেছে আলোর গ্রাম, আলোর শহর ছুঁয়ে
এক সুনীল সমুদ্রে। পাশেই পাহাড় আর সমতলের জনপদ দিয়ে তৈরি এক নিজস্ব সময় ধাবমান। নদীপাড়ে
বসে থাকতে দেখা যায় একলা মানুষকে, চাতকের মতো অতি সাধারণ জীবনে। কুল খুঁজে পেতে গিয়ে
অকূলে হারানো এমন কেউ অথচ নিজেকে শক্ত করে বাঁধে জীবন খুঁটির সাথে।
কখনো বা পৌঁছে যাবে কেউ সেই হাটবাজারে, দেখা হবে কুমোরপাড়ার কারো সাথে।
বুকে রুদ্ধশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে দেখবে শুদ্র কাহারকে। কেউ ফিরেও তাকাবে না, শুধু রক্তাক্ত
সমাজের দিকে আঙ্গুল তুলে সে অজানায় হারাবে। দেখা হবে মেঘের দেশে। যে ডেকে নিয়ে যাবে
সে তুলতুলে ফ্রকপরা এক শিশু, সমস্ত পাপ ধুয়ে শুদ্ধ করে তুলছে তারা বাবাকে। ভালোবেসে
বাবা চোখের পানি মোছে।
স্মৃতি ভেসে উঠবে গল্পের বাঁকে যেন সেদিন দূরের নয়, কৈশোর পাড়ি দিয়ে
কেউ হারাল অনুক্ষী-অরুষার্ককে। ভুলে যাওয়া স্মৃতিকে পাশে বসিয়ে দু’দণ্ড। কিন্তু মেয়েটাকে
আর ওর ছোট্ট পুষিকে ভুলতেই পারবে না গল্পগুলো।
গল্পগুলো ঘোর তৈরি করে, দ্বৈতসত্তায় নিজেকে আঁকে, যেন একের অধিক আমি
পানশালায় বসে থাকে। প্রতীক্ষারত আপনজন কোথাও কাঁদছে। বলছে বাড়ি এসো না, চলে যাও। চলে
যেতে বললেও গল্পগুলো টেনে ধরবে, দেখাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়। কারাগার অথচ ভীষণ মুক্ত
মানুষেরা ষড়রিপুর হাত ধরে কতখানি নিচে নামতে পারে। মনুষ্যত্ব কোথাও কাঁদছে নীরবে।
গল্পগুলোর নিজের কিছু কথা আছে। আছে প্রান্তিক নারীর মতো অজস্র জীবন,
ধারণ করে আছে ব্যর্থ জীবন। গল্পগুলোতে আছে মানবজমিনের দাহ্যরূপ। দর্শন আর ভালোবাসা
সাথে দহনও গড়ছে হৃদয়। যেন এক দার্শনিকের আকাশ দেখার মতো, স্বপ্ন তারপর ধুলোঝড়, আবার
শান্তপ্রকৃতি। গ্রামের সেই ছবিটাও নদীতটে শ্বশুরবাড়ির জামাই আদর অথচ তাঁর স্ত্রী যেন
সমস্ত নারীর বেদনার কথাটি বলে গেলো। রৌদ্রছায়ায় নদী আর নারীকে একাকার করে দিয়েছে কাচ
চশমার গল্প। জীবন কখনো বা নিজের সাথে কথা বলে, এই গল্প তার ব্যতিক্রম নয়।
ন বৈধ ন জীবনের মতো আত্মকথন বলে গেলো এর মাঝেও তুমি কোথাও আছো, নিজেকে
খুঁজে পেলে?
গল্পগুলো এক ভাসান জীবন। ভাসতে ভাসতে গানের সুর শোনা হয়। শোনা হয় গীত,
মাঝির মারফতি গান। চোখে ভাসবে মলিন মুখ, যে কোন নারীর না বলা কষ্ট, ধর্মের নামে কদর্য
হাতে খুন হওয়া মানুষ। ডোমসমাজের যে পরিস্থিতি, সেখানে বাকরুদ্ধ হতে হয়। হিন্দুডোম টুপি
পরে হয়ে ওঠে মুসলমান। অভ্যস্ত ডোমও মৃতদেহ দেখে হাহাকার করে ওঠে।
জীবন এতো নির্মমতাও গল্পেরা জীবন ভালোবাসে। তারা বলে, কেউ তো জানে
না, কাল চোখ মেলে তাকাবে কিনা!
তাই বুঝি রেখে যায় কোন এক সুন্দর সময়ের আগমন ধ্বনি, পাঠক কান পেতে
শোনে মনমাঝির অচিন ডাকের গল্পগুলো!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন