কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৪ |
অ-লৌকিক
অতএব মহীতোষের হাসি পায়। মিসপ্লেসড প্রেফারেন্সেস। জীবনের নিশ্চয়তা নেই।
তবু গরীবের র্যাশনের মাল হাওয়া করছে। দলাদলি করছে কে কাকে হটিয়ে ত্রাণ দেবে, তা
নিয়ে। ব্যাবসায়ী বলছে লকডাউন তুলে ব্যবসা চলুক।
অতএব মহীতোষের কান্না পায়। শ্রমিক হেঁটে পেরোচ্ছে
শত মাইল। ঢলে পড়ছে। শিশুও ছিল সে মৃতের দলে। মৃত্যুসংখ্যার হিসেবে কী কী সরকারি গোঁজামিল?
মানুষ কি সংসদীয় রাজনীতির কাঁচামাল? আদি-অনন্ত কাল ধরে সার্কাস চলছে। কমেডি অফ
মিসপ্লেসড প্রেফারেন্সেস। এবং তা ব্ল্যাক কমেডি। ক্রূর। এমতাবস্থায় সহমানুষকে নিছক
ব্যালটপেপার বা কাঁচামাল মনে হওয়া অসম্ভব নয়।
মহীতোষের অতলে একটা তপতপে মন আজও বেঁচে। মহীতোষ
টের পায়, আশ্বস্ত হয়। রোদ-ঝড়-জল থেকে আড়াল করে সেই গভীর স্তর তপতপে রাখা গেছে।
ব্যথা সেখানে নিবিড় আঁচড় কাটে। বাকি সকলে, বড় পাথুরে। তাদের নেই ওই মোম-নরম
সান্দ্র রিসেপটর।
এইসব এলোমেলো ভাবতে ভাবতে মহীতোষ লিখতে বসে। লকডাউনে
কাঙ্ক্ষিত অবসর পাওয়া গেছে ভাবনার, লেখার। লেখা হল সাধনা। প্রাণায়ামে মনকে একটি বিন্দুতে স্থির করতে হয়। তেমনই লেখাতে।
স্রষ্টা মাত্রেই সৃষ্টির মুহূর্তে একা। আত্মমুখী। জ্ঞান, বোধ, সংবেদনা-এসব
স্রষ্টার শস্ত্র। মহীতোষ এখন একমোবদ্বিতীয়ম, কর্তৃকারক, বিভক্তি শূন্য।
সৃষ্টির এই অ-লৌকিক মুহূর্ত নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ
হয়েছে। ওয়েল-মেইন্টেন্ড তপতপে মনের অধিকারী মহীতোষ সংবেদন উজাড় করে লিখছে।
মানুষ, জীবন, জগৎপ্রপঞ্চ, মারী, দারিদ্র... আবারও,
আরও একবার, পাতি কাঁচামাল হয়ে যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন